বামেদের (Left Front) ডাকে রবিবার ব্রিগেড ময়দানে আয়োজিত সমাবেশ ঘিরে (Brigade Rally) রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য থাকলেও, পুলিশের নিরাপত্তা প্রস্তুতি ঘিরে উঠছে নানা প্রশ্ন। কয়েক লক্ষ মানুষের জমায়েতের কথা বলা হলেও লালবাজারের তরফে যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে, তা অন্যান্য বারের তুলনায় অনেকটাই কম। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে—লালবাজার কি আদৌ এই সমাবেশকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে?
সূত্রের খবর অনুযায়ী, ব্রিগেড ময়দানের নিরাপত্তার জন্য শুধুমাত্র দু’জন ডেপুটি কমিশনারকে (ডিসি) দায়িত্বে রাখা হয়েছে। যেহেতু ব্রিগেড ময়দান কলকাতার সাউথ ডিভিশনের অন্তর্গত, তাই ডিসি সাউথ এবং তাঁর সঙ্গে ডিসি ফার্স্ট ব্যাটেলিয়নকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন মাত্র ৩ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার। গোটা নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলানোর জন্য ইন্সপেক্টর এবং অন্যান্য পুলিশ কর্মী মিলিয়ে মোট ১২৭ জনকে মোতায়েন করা হয়েছে।
এই সংখ্যাটি যে কোনও বড় জমায়েতের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সীমিত বলেই মনে করছেন প্রাক্তন পুলিশ আধিকারিকরা। ধর্মতলায় যেখানে একটি সাধারণ জমায়েতেও জয়েন্ট সিপি পদমর্যাদার অফিসার থাকেন, সেখানে ব্রিগেডের মতো একটি বৃহৎ রাজনৈতিক সমাবেশে মাত্র দু’জন ডিসি যথেষ্ট নয় বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। ২০২৩ সালে এসইউসিআই-এর ব্রিগেড কর্মসূচির সময় পর্যন্তও জয়েন্ট সিপিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সেই তুলনায় এবারের বামেদের সমাবেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা যে অনেকটাই ঢিলেঢালা, তা নিয়ে সন্দেহ নেই।
সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, লালবাজারের হিসাবে ব্রিগেডে প্রায় দুই থেকে তিন হাজার গাড়ি আসতে পারে। সেই অনুযায়ী ছয়টি নির্দিষ্ট স্থানে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলিশের পিকেট বসানো হয়েছে মাত্র সাতটি জায়গায়, যা পূর্ববর্তী ব্রিগেড কর্মসূচির তুলনায় অনেকটাই কম। এদিন ডিসি সাউথ ছাড়া আর কোনও ডিভিশনাল ডিসিকে রাস্তায় দেখা যায়নি। যদিও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, প্রয়োজনে অন্যান্য পুলিশ কর্মীদের দ্রুত কাজে নামানো যাবে, সে অনুযায়ী প্রস্তুত থাকতে।
In trying to challenge BJP, today CPIM delivered a MASSIVE FLOP Brigade rally. People of Bengal have finally move beyond CHI-PM and their politics. pic.twitter.com/r3W25Sv7bb
— Sudhanidhi Bandyopadhyay (@SudhanidhiB) April 20, 2025
এদিকে শহরের যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ৩৮টি জায়গায় ট্রাফিক পুলিশের বিশেষ বন্দোবস্ত করা হয়েছে। তবে তা আগের ব্রিগেড সভাগুলির তুলনায় অর্ধেকেরও কম। সকাল আটটা থেকে পুলিশ কর্মীদের ডিউটিতে থাকার নির্দেশ থাকলেও দুপুর দুটো নাগাদও শহরের রাস্তাঘাট মোটের উপর স্বাভাবিকই ছিল। যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ বেগ পেতে হচ্ছে না পুলিশকে। পুলিশের উপস্থিতিও খুব বেশি চোখে পড়ছে না।
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, এত বড় রাজনৈতিক সমাবেশ সত্ত্বেও কেন লালবাজার পক্ষ থেকে নিরাপত্তায় এতটা ঢিলেমি? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের ধারণা, প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গিতেই এই সমাবেশের গুরুত্ব ততটা নেই। আবার কেউ কেউ বলছেন, পুলিশ চাইছে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ধাপে ধাপে ব্যবস্থা নিতে, যাতে অপ্রয়োজনীয় উত্তেজনা এড়ানো যায়।
সব মিলিয়ে, রবিবারের এই ব্রিগেড কর্মসূচিকে ঘিরে পুলিশের প্রস্তুতি যেমন প্রশ্নের মুখে, তেমনই প্রশাসনের আচরণ নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আগামী দিনে পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।