Over 100 Rescued in Devastating Jammu & Kashmir Floods, Infrastructure Under Scrutiny
জম্মু ও কাশ্মীরের (jammu- kashmir) রামবান জেলায় রবিবার ভোরে প্রবল বর্ষণের ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যা এবং ভূমিধসের ঘটনায় ধরম কুণ্ড গ্রামে ১০০-র বেশি মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। সূত্রের খবর অনুযায়ী জানা গেছে, এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায় ৪০টি আবাসিক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও, নাশরি এবং বানিহালের মধ্যে জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়কে প্রায় এক ডজন স্থানে ভূমিধস এবং কাদা ধসের কারণে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।
ধরম কুণ্ড গ্রামে বন্যার তাণ্ডব (jammu- kashmir)
রবিবার ভোরে ধরম কুণ্ড (jammu- kashmir) গ্রামের কাছে চেনাব নদীর তীরবর্তী একটি নালা ভারী বৃষ্টির জেরে উপচে পড়ে। ফলে গ্রামের অভ্যন্তরে আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। স্থানীয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, বন্যার জল গ্রামের বাড়িঘরে প্রবেশ করে, যার ফলে ১০টি বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস এবং ২৫-৩০টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ৯০-১০০ জন মানুষ এই বন্যায় আটকা পড়েছিলেন, যাদের জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ, রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এসডিআরএফ) এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে।
উদ্ধারকৃত ব্যক্তিদের নিরাপদ আশ্রয়ে স্থানান্তরিত করা হয়েছে, এবং তাদের জন্য খাদ্য, পানীয় জল এবং কম্বলের মতো প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে। রামবানের জেলা উপায়ুক্ত মুসারত ইসলাম জানিয়েছেন, “ধরম কুণ্ড গ্রামে বন্যার তীব্রতা ছিল অত্যন্ত ভয়াবহ। তবে, সময়মতো উদ্ধার অভিযানের কারণে কোনও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির জন্য ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
সরকারি কর্মীদের জন্য আসছে ৮ম বেতন কমিশনের বিশাল সুবিধা
জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়কে ভূমিধস
প্রবল বর্ষণের জেরে জম্মু-শ্রীনগর (jammu- kashmir) জাতীয় সড়ক (এনএইচ-৪৪), যা কাশ্মীর উপত্যকাকে দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে সংযুক্ত করে, রামবান জেলার মেহাদ, কিষ্টওয়াড়ি পাথর, গঙ্গরু, পান্থিয়াল এবং হিংনি সহ প্রায় এক ডজন স্থানে ভূমিধস এবং কাদা ধসের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (এনএইচএআই) এবং সীমান্ত সড়ক সংস্থা (বিআরও) ধ্বংসস্তূপ অপসারণের জন্য যন্ত্রপাতি এবং কর্মী নিয়োগ করেছে, তবে অবিরাম বৃষ্টি এবং পাহাড় থেকে পড়ে আসা পাথরের কারণে পুনরুদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
রামবানের (jammu- kashmir) পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট (ট্রাফিক) রোহিত বাস্কোট্রা বলেন, “জাতীয় সড়কটি বর্তমানে সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। আমরা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সড়কটি পুনরায় চালু করার চেষ্টা করছি। যাত্রীদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, পুনরুদ্ধার কাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এই রুটে ভ্রমণ এড়িয়ে চলুন।” বর্তমানে শতাধিক যানবাহন সড়কে আটকে রয়েছে, এবং স্থানীয় প্রশাসন আটকে পড়া যাত্রীদের জন্য খাদ্য ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও সতর্কতা
ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় জম্মু ও কাশ্মীরের বিভিন্ন অংশে বিক্ষিপ্তভাবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। রামবান, দোদা, কিষ্টওয়ার এবং রিয়াসি জেলায় ভূমিধস এবং আকস্মিক বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (জেকেএসডিএমএ) ২,৫০০ মিটারের উপরে অবস্থিত এলাকায় মাঝারি স্তরের তুষারধসের সতর্কতা জারি করেছে। আইএমডি-র একজন মুখপাত্র বলেন, “আমরা স্থানীয় বাসিন্দা এবং পর্যটকদের পরামর্শ দিচ্ছি, তারা যেন নদী, নালা এবং পাহাড়ি এলাকার কাছাকাছি না যান। ভূমিধস এবং পাথর পড়ার ঝুঁকি এখনও রয়েছে।”
সরকারি পদক্ষেপ ও ত্রাণ কার্যক্রম
রামবান জেলা প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির জন্য ত্রাণ শিবির স্থাপন করেছে। জরুরি ত্রাণ হিসেবে খাদ্য, ওষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ এবং এসডিআরএফ দলগুলি উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে এবং যেকোনও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এক্স-এ একটি পোস্টে বলেন, “রামবানে বন্যা এবং ভূমিধসের ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে।” তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং এর জন্য ব্যাপক বন্যা ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির প্রয়োজন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান
ধরম কুণ্ড গ্রামের বাসিন্দা নাদিম ইকবাল বলেন, “আমরা সকালে চা খাচ্ছিলাম, হঠাৎ বাড়ির দেওয়ালে ফাটল দেখা গেল। প্রথমে ভূমিকম্প ভেবেছিলাম, কিন্তু বাইরে বেরিয়ে দেখি পুরো গ্রাম জলের তোড়ে ভেসে যাচ্ছে। আমাদের বাড়িসহ অনেকের বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে।” আরেক বাসিন্দা রেশমা বেগম বলেন, “প্রশাসনের সময়মতো হস্তক্ষেপের জন্য আমরা বেঁচে গেছি। তবে আমাদের জীবিকা এখন বিপন্ন।”
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রামবান জেলায় চলমান পরিকাঠামো, যেমন জাতীয় সড়কের চার লেনে প্রসারণ এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, পাহাড়ের স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করছে। স্থানীয় পরিবেশবিদ অনমোল ওহরি বলেন, “এই ঘটনাগুলি অবকাঠামো উন্নয়নের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
সরকারের উচিত জনগণকে সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করা এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখা।” জম্মু ও কাশ্মীর সরকার ভূতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞদের একটি দল পাঠিয়েছে, যারা ভূমিধস এবং বন্যার কারণ অনুসন্ধান করছে। এছাড়াও, দীর্ঘমেয়াদী সমাধান হিসেবে কার্যকর নিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং বনায়ন কর্মসূচির উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
রামবান জেলায় সাম্প্রতিক বন্যা এবং ভূমিধস জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিকাঠামো উন্নয়নের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ ক্ষয়ক্ষতি কমিয়েছে, তবে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন এবং ভবিষ্যৎ দুর্যোগ প্রতিরোধে আরও সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।