ইস্টার উপলক্ষে ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা পুতিনের

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (Vladimir Putin) শনিবার ইউক্রেনে (Ukraine) ইস্টার উপলক্ষে একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছেন। মানবিক কারণের কথা উল্লেখ করে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন…

Vladimir Putin Declares Temporary Easter Ceasefire

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (Vladimir Putin) শনিবার ইউক্রেনে (Ukraine) ইস্টার উপলক্ষে একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছেন। মানবিক কারণের কথা উল্লেখ করে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন। ক্রেমলিনের বিবৃতি অনুযায়ী, এই যুদ্ধবিরতি মস্কো সময় শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু হবে এবং ইস্টার সানডের পরবর্তী মধ্যরাত পর্যন্ত (রবিবার ২১:০০ জিএমটি) চলবে। এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের বাহিনী ইউক্রেনের সৈন্যদের কুর্স্ক অঞ্চলের একটি শেষ ঘাঁটি থেকে বিতাড়িত করেছে, যেখানে গত বছর ইউক্রেন একটি অপ্রত্যাশিত হামলা চালিয়েছিল।

Advertisements

পুতিন শনিবার জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভের সঙ্গে এক বৈঠকে বলেন, “মানবিক বিবেচনার ভিত্তিতে, আজ সন্ধ্যা ১৮:০০ থেকে রবিবার মধ্যরাত পর্যন্ত রাশিয়া একটি ইস্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করছে। আমি এই সময়ের জন্য সমস্ত সামরিক কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দিচ্ছি।” তিনি আরও বলেন, “আমরা ধরে নিচ্ছি যে ইউক্রেন আমাদের এই উদাহরণ অনুসরণ করবে। তবে, আমাদের সৈন্যদের অবশ্যই যুদ্ধবিরতির সম্ভাব্য লঙ্ঘন এবং শত্রুপক্ষের যে কোনো উস্কানিমূলক বা আগ্রাসী পদক্ষেপ প্রতিহত করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।”

   

এই ঘোষণার প্রেক্ষাপটে উল্লেখযোগ্য যে, শুক্রবার রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ মার্কিন বিদেশমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে একটি টেলিফোনিক আলোচনা করেছেন। এরপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের জানান, তিনি আশা করছেন সপ্তাহান্তে ইউক্রেনে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাবে। ট্রাম্প বলেন, “আমরা খুব শিগগিরই তাদের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া শুনতে পাব। আমি মনে করি আমরা কাছাকাছি পৌঁছে গেছি, তবে খুব শিগগিরই আপনাদের জানাব।”

রাশিয়ার বিদেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, লাভরভ এই আলোচনায় ইউক্রেন সংকটের মূল কারণগুলোর ব্যাপক সমাধানের জন্য মার্কিন পক্ষের সঙ্গে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার জন্য মস্কোর প্রস্তুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। প্যারিসে অবস্থানরত মার্কিন বিদেশমন্ত্রী রুবিও রাশিয়ার পক্ষকে জানিয়েছেন, তিনি এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ সম্প্রতি ফরাসি রাজধানীতে যে বৈঠকগুলো করেছেন, তার বিস্তারিত।

এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণাকে “পুতিনের মানুষের জীবন নিয়ে খেলার আরেকটি প্রচেষ্টা” বলে সমালোচনা করেছেন। তিনি সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছেন, রাশিয়ার ঘোষিত যুদ্ধবিরতির সময়ে ইউক্রেনজুড়ে বিমান হামলার সতর্কতা ছড়িয়ে পড়েছে এবং রুশ ড্রোনগুলো আকাশে ঘুরছে, যা পুতিনের ইস্টার ও মানুষের জীবনের প্রতি প্রকৃত মনোভাব প্রকাশ করে। ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, শনিবার রাতে রাশিয়া আটটি মিসাইল এবং ৮৭টি ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে ৩৩টি ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে এবং ৩৬টি ইলেকট্রনিক যুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিহত করা হয়েছে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় টেলিগ্রামে পোস্ট করে জানিয়েছে, “মানবিক উদ্দেশ্যে এই যুদ্ধবিরতি চালু করা হচ্ছে এবং কিয়েভ শাসন এটি পারস্পরিকভাবে মেনে চললে রাশিয়ার যৌথ বাহিনী এটি পালন করবে।” তবে, ইউক্রেনের বিদেশমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা শনিবার বলেন, পুতিনের কথার উপর ভরসা করা যায় না এবং তারা কথার বদলে কাজের দিকে তাকাবেন। তিনি জানান, গত মার্চে ইউক্রেন মার্কিন প্রস্তাবিত ৩০ দিনের পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল, যা রাশিয়া প্রত্যাখ্যান করেছিল। সিবিহা বলেন, “পুতিন এখন ৩০ দিনের বদলে ৩০ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির কথা বলছেন।”

এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণার সময় উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা হলো, রাশিয়া ও ইউক্রেন শনিবার শতাধিক যুদ্ধবন্দির বিনিময় করেছে, যা রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণ শুরুর পর থেকে সবচেয়ে বড় বন্দি বিনিময়। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কিয়েভ নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে ২৪৬ জন রুশ সেনা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া তারা “সদিচ্ছার অঙ্গভঙ্গি হিসেবে” ৩১ জন আহত ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দিকে হস্তান্তর করেছে। জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ২৭৭ জন ইউক্রেনীয় “যোদ্ধা” রুশ বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন।

Advertisements

এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এসেছে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউক্রেন-রাশিয়া শান্তি আলোচনায় দ্রুত অগ্রগতির জন্য চাপ দিচ্ছেন। ট্রাম্প শুক্রবার বলেছিলেন, যদি মস্কো এবং কিয়েভ শান্তির জন্য প্রস্তুতি দেখাতে ব্যর্থ হয়, তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শান্তি আলোচনা থেকে সরে আসতে পারে। তিনি জানান, ইউক্রেন-রাশিয়া আলোচনা “একটি শীর্ষ পর্যায়ে” পৌঁছেছে এবং তিনি এই যুদ্ধের দ্রুত অবসান ঘটাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ইউক্রেনের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, রাশিয়া অতীতে একাধিকবার যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। ২০২২ সালের এপ্রিলে ইস্টার এবং ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে অর্থোডক্স ক্রিসমাসের সময় ঘোষিত যুদ্ধবিরতি উভয় পক্ষের সম্মতির অভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে, পুতিনের এই একতরফা যুদ্ধবিরতির ঘোষণা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

এক্স-এ পোস্টগুলোতে দেখা গেছে, অনেকে এই যুদ্ধবিরতিকে পুতিনের কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। কেউ কেউ মনে করেন, এটি একটি প্রচারণামূলক কৌশল এবং শান্তি আলোচনার গতি কমানোর উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। তবে, এই সাময়িক যুদ্ধবিরতি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে কিছুটা স্বস্তি আনতে পারে, বিশেষ করে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় বসবাসকারী বেসামরিক নাগরিকদের জন্য।

এই যুদ্ধবিরতির ফলাফল কী হবে, তা এখনও অনিশ্চিত। ইউক্রেন যদি এই যুদ্ধবিরতি মেনে চলে এবং উভয় পক্ষই এটি পালন করে, তবে এটি শান্তি আলোচনার জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হতে পারে। তবে, অতীতের অভিজ্ঞতা এবং বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায়, এই ঘোষণার প্রকৃত প্রভাব নির্ভর করবে উভয় পক্ষের ক্রিয়াকলাপ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যস্থতার উপর।