বিজেপি-নেতৃত্বাধীন মহারাষ্ট্র সরকারের হিন্দিকে তৃতীয় বাধ্যতামূলক ভাষা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে উত্তপ্ত বিতর্কের মধ্যে, দুই ভাই উদ্ধব ঠাকরে এবং রাজ ঠাকরে (raj-uddhab) প্রায় দুই দশকের তিক্ত বিচ্ছেদের পর একত্রিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। মহারাষ্ট্র এবং মারাঠি ভাষার স্বার্থ রক্ষার জন্য উভয় নেতাই ছোটখাটো মতভেদ ভুলে একসঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, যদিও শর্তসাপেক্ষে। এই ঘটনা মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে নতুন মোড় আনতে পারে।
সাত ম্যাচ খেলে ষষ্ঠ KKR, এই পরিবর্তনে ভাগ্য খুলবে শাহরুখ বাহিনীর?
রাজ ঠাকরে বলেন (raj-uddhab)
মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস) প্রধান রাজ ঠাকরে (raj-uddhab) চলচ্চিত্র নির্মাতা মহেশ মাঞ্জরেকরের সঙ্গে একটি পডকাস্টে বলেন, “যখন বড় ইস্যু সামনে আসে, তখন আমাদের মধ্যে ঝগড়া ও মতপার্থক্য খুবই তুচ্ছ। মহারাষ্ট্র এবং মারাঠি জনগণের জন্য আমাদের মধ্যে সংঘাত গুরুত্বহীন। একত্রিত হওয়া কঠিন কাজ নয়, তবে প্রশ্ন হলো এর জন্য ইচ্ছা থাকা।”
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ-র সঙ্গে জোটবদ্ধ রাজ স্পষ্ট করেন যে, তিনি ব্যক্তিগত স্বার্থ বা ইচ্ছার জন্য নয়, বরং বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভেবে উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, “বড় ছবিটির কথা মাথায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।”
একসময় শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বাল ঠাকরের রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচিত রাজ ঠাকরে ২০০৫ সালে উদ্ধবের সঙ্গে দলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধের জেরে শিবসেনা ত্যাগ করেন। পরের বছর তিনি এমএনএস প্রতিষ্ঠা করেন।
উদ্ধব ঠাকরে বলেন
তাঁর এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় শিবসেনা (উদ্ধব বালাসাহেব ঠাকরে) প্রধান উদ্ধব ঠাকরে (raj-uddhab) বলেন, তিনিও মারাঠি সম্প্রদায়ের স্বার্থে “ছোটখাটো ঝগড়া” ভুলে একত্রিত হতে প্রস্তুত। তবে, তিনি একটি শর্ত জুড়ে দেন যে, মহারাষ্ট্রের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করা ব্যক্তিদের তিনি “বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়ে খাওয়াবেন না” — যা সম্ভবত বিজেপি এবং তাদের মহাযুতি জোটের প্রতি ইঙ্গিত।
উদ্ধব (raj-uddhab) বলেন, “মারাঠি সম্প্রদায়ের স্বার্থে আমিও ছোটখাটো ঝগড়া ভুলে একত্রিত হতে প্রস্তুত। কিন্তু একটি শর্ত আছে। প্রথমে সিদ্ধান্ত নিন যে, মহারাষ্ট্রের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করা লোকদের আপনি বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়ে খাওয়াবেন না, তারপর রাজ্যের কল্যাণ নিয়ে কথা বলুন।”
তিনি রাজকে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ-কে সমর্থন দেওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে বলেন, “যখন আমি লোকসভা নির্বাচনের সময় বলছিলাম যে মহারাষ্ট্র থেকে শিল্প গুজরাটে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে, তখন যদি বিরোধিতা করা হতো, তাহলে আজ কেন্দ্রে বিজেপি সরকার থাকত না। রাজ্যেও এমন একটি সরকার থাকত যারা মহারাষ্ট্রের স্বার্থের কথা ভাবে। তখন আপনি তাদের সমর্থন করেছিলেন।”
বিতর্কের মূল কারণ
এই বিতর্কের সূত্রপাত মহারাষ্ট্র সরকারের জাতীয় শিক্ষানীতি (এনইপি)-এর অধীনে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত হিন্দিকে বাধ্যতামূলক তৃতীয় ভাষা করার সিদ্ধান্ত থেকে। এই পদক্ষেপ, যা দুটি ভাষা অধ্যয়নের প্রচলিত প্রথা থেকে সরে এসেছে, আঞ্চলিক নেতা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিবাদের ঝড় তুলেছে। এমএনএস এবং শিবসেনা (ইউবিটি) উভয়ই দেবেন্দ্র ফডনবিশের নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার এবং মারাঠি ভাষার গুরুত্ব হ্রাস করার অভিযোগ তুলেছে।
মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবিশ বলেন
মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবিশ এই সিদ্ধান্তের পক্ষে বলেন, “মারাঠি ইতিমধ্যেই বাধ্যতামূলক। কেন্দ্রীয় সরকারের মতামত হলো, একটি যোগাযোগের ভাষা থাকা প্রয়োজন, এবং এই কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” তবে, এই যুক্তি আঞ্চলিক দলগুলোর ক্রোধকে প্রশমিত করতে পারেনি।
এমএনএস নেতা সন্দীপ দেশপাণ্ডে বলেন, “হিন্দি চাপিয়ে দেওয়া মারাঠি ভাষা ও সংস্কৃতির উপর আক্রমণ। বিজেপি মহারাষ্ট্রের গর্বকে অপমান করছে।” শিবসেনা (ইউবিটি) নেতা সঞ্জয় রাউতও এই সিদ্ধান্তকে “মারাঠি অস্মিতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র” হিসেবে অভিহিত করেছেন।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
এই বিতর্ক মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ঘটেছে, যখন ২০২৪ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের পর রাজনৈতিক জোটগুলো নতুনভাবে সংগঠিত হচ্ছে। উদ্ধব ঠাকরে, যিনি ২০১৯ সালে বিজেপির সঙ্গে জোট ভেঙে এনসিপি এবং কংগ্রেসের সঙ্গে মহা বিকাশ আঘাড়ি গঠন করেছিলেন, বর্তমানে বিজেপি-বিরোধী অবস্থানে রয়েছেন।
অন্যদিকে, রাজ ঠাকরে (raj-uddhab) এনডিএ-র সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে বিজেপির সমর্থন পেয়েছেন। তবে, হিন্দি ভাষা বিতর্ক তাঁদের মধ্যে একটি সাধারণ কারণ তৈরি করেছে, যা মারাঠি পরিচয় এবং আঞ্চলিক গর্বের সঙ্গে জড়িত।
উদ্ধব ও রাজের এই সম্ভাব্য মিলন মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। তবে, উদ্ধবের শর্ত এবং রাজের বিজেপির সঙ্গে বর্তমান জোট এই একত্রীকরণের পথে প্রধান বাধা হিসেবে রয়ে গেছে। এই বিতর্ক মহারাষ্ট্রে ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রশ্নকে কেন্দ্রে এনেছে, যা আগামী নির্বাচনী রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।