কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি (Kerala Blasters ) গত কয়েক মরসুম ধরে ধারাবাহিকভাবে সাফল্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (আইএসএল) একাধিকবার ফাইনালে পৌঁছলেও শিরোপা জয়ের সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি দলটি। এই হতাশার জেরে ক্লাবটি প্রথমে কোচ ইভান ভুকোমানোভিচের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং পরবর্তীতে সুইডিশ কোচ মিকেল স্ট্যাহরেকে দায়িত্ব দেয়। কিন্তু স্ট্যাহরের অধীনেও দলটি প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হয়। ডুরান্ড কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে বিদায় এবং আইএসএল ২০২৪-২৫ মরসুমে অষ্টম স্থানে থেকে প্লে-অফে অংশগ্রহণের সুযোগ হারানো কেরালার সমর্থকদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করে। এর ফলে ক্লাবটি স্ট্যাহরে এবং তার সাপোর্টিং স্টাফদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে।
এই পটভূমিতে, কেরালা ব্লাস্টার্স নতুন কোচ ডেভিড কাতালার নেতৃত্বে কালিঙ্গা সুপার কাপ ২০২৫-এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। গত ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় ক্লাবটি তাদের ২৭ সদস্যের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে, যেখানে তারকা ফুটবলারদের পাশাপাশি তরুণ প্রতিভাদের উপরও ভরসা রাখা হয়েছে। এই স্কোয়াড নিয়ে কাতালা ক্লাবের প্রথম শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে মরিয়া। সুপার কাপে কেরালার প্রথম ম্যাচ ২০ এপ্রিল ভুবনেশ্বরের কালিঙ্গা স্টেডিয়ামে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইস্টবেঙ্গল এফসির বিরুদ্ধে। এই ম্যাচটি কাতালা এবং তার দলের জন্য একটি বড় পরীক্ষা হতে চলেছে।
স্কোয়াডের গঠন: তারকা ও তরুণের সমন্বয়
কেরালা ব্লাস্টার্সের ঘোষিত স্কোয়াডে অভিজ্ঞ তারকা এবং তরুণ ফুটবলারদের একটি ভারসাম্যপূর্ণ মিশ্রণ রয়েছে। গোলরক্ষক হিসেবে শচীন সুরেশ, কমলজিৎ সিং, মুহাম্মদ জাসিন এবং আলসাবিথ এসটি দায়িত্ব পালন করবেন, যেখানে শচীন সুরেশ প্রথম পছন্দ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। ডিফেন্ডারদের তালিকায় রয়েছেন হরমিপাম রুইভা, বিকাশ ইউমনাম, মিলোস ড্রিনচিক, দুসান ল্যাগাটর, নওছা সিং, আইবান ডহলিং, মুহাম্মদ সাহিফ এবং সন্দীপ সিং। মাঝমাঠে নেতৃত্ব দেবেন অধিনায়ক আদ্রিয়ান লুনা, যিনি দলের অন্যতম প্রধান শক্তি। তাঁর সঙ্গে থাকবেন দানিশ ফারুক, ভিবিন মোহনন, ফ্রেডি লাল্লাওমাওমা, মুহাম্মদ আজহার, ইয়োহেনবা মেইতেই, ইবিন্দাস ইয়েসুদাসন, কোরো সিং, মুহাম্মদ আইমেন এবং লালথানমাওয়া রেন্থলেই (আমাইয়া)। ফরোয়ার্ড লাইনে জেসুস জিমেনেজ, নোয়াহ সাদাউই, কোয়ামে পেপ্রাহ, ইশান পন্ডিতা এবং শ্রীকুত্তন এমএস দায়িত্ব পালন করবেন।
তরুণ প্রতিভার উপর ভরসা
কেরালার স্কোয়াডে তরুণ ফুটবলারদের উপস্থিতি দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ইঙ্গিত দেয়। বিশেষ করে, কোরো সিং এবং ইবিন্দাস ইয়েসুদাসনের মতো তরুণ প্রতিভারা এই মরসুমে নজর কাড়ছেন। কোরো সিং, যিনি ২০২৪ সালে ক্লাবের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন, ইতিমধ্যে আইএসএল-এ পাঁচটি ম্যাচে দুটি অ্যাসিস্ট প্রদান করেছেন। তাঁর গতি এবং আক্রমণাত্মক খেলার ধরন কাতালার কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। একইভাবে, রিজার্ভ দল থেকে প্রমোশন পাওয়া ইবিন্দাস ইয়েসুদাসনও এই সুপার কাপে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পাবেন। লালথানমাওয়া রেন্থলেই (আমাইয়া), যিনি মিজোরামের ২২ বছর বয়সী উইঙ্গার, সাতটি ম্যাচে অংশ নিয়ে দলের গতিশীলতা বাড়িয়েছেন। এই তরুণরা কেরালার ভবিষ্যৎ তারকা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন।
কাতালার কৌশল ও প্রত্যাশা
নতুন কোচ ডেভিড কাতালা, যিনি ২৫ মার্চ, ২০২৫-এ কেরালার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, তাঁর আক্রমণাত্মক এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ ফুটবল দর্শনের জন্য পরিচিত। তিনি বলেছেন, “আমি এমন ফুটবল দর্শনে বিশ্বাসী যা নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে আগ্রাসন, শৃঙ্খলার সঙ্গে সৃজনশীলতাকে মেলায়। কেরালা ব্লাস্টার্সের একটি সমৃদ্ধ ফুটবল সংস্কৃতি এবং উত্সাহী সমর্থক রয়েছে, যারা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করা দলের প্রাপ্য।” কাতালা কঠোর প্রশিক্ষণ এবং কৌশলগত সংস্কারের মাধ্যমে দলের প্রতিরক্ষা এবং আক্রমণের মধ্যে ভারসাম্য আনতে চান। তিনি জোর দিয়েছেন যে সুপার কাপ তাঁর দলের পরিচয় প্রতিষ্ঠার একটি সুযোগ।
কেরালার গত মরসুমে প্রতিরক্ষায় দুর্বলতা ছিল একটি বড় সমস্যা, যেখানে তারা ৩৩ গোল করলেও ৩৭ গোল হজম করেছিল। কাতালা এই সমস্যা সমাধানের জন্য একটি কমপ্যাক্ট এবং শক্তিশালী দল গড়ার পরিকল্পনা করছেন। তিনি বলেন, “আমরা প্রতিরক্ষায় শক্তিশালী হয়ে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলার ভারসাম্য খুঁজব।”
সুপার কাপে সম্ভাবনা
কালিঙ্গা সুপার কাপে কেরালা তাদের প্রথম শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামবে। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে জয় পেলে কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ হবে আইএসএল চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। এই টুর্নামেন্টে ১৬টি দল অংশ নিচ্ছে, যার মধ্যে ১৩টি আইএসএল এবং ৩টি আই-লিগের। বিজয়ী দল ২০২৫-২৬ এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এর প্লে-অফে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে।
কেরালা ব্লাস্টার্সের জন্য সুপার কাপ ২০২৫ একটি নতুন শুরুর সুযোগ। কোচ ডেভিড কাতালার নেতৃত্বে, আদ্রিয়ান লুনা, নোয়াহ সাদাউই এবং জেসুস জিমেনেজের মতো তারকা ফুটবলারদের সঙ্গে কোরো সিং এবং ইবিন্দাসের মতো তরুণ প্রতিভারা দলের শক্তি বাড়াবে। কাতালার আক্রমণাত্মক দর্শন এবং কৌশলগত পরিবর্তন কেরালার সমর্থকদের মধ্যে নতুন আশা জাগিয়েছে। যদি দলটি তাদের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারে, তবে এই সুপার কাপ তাদের প্রথম শিরোপা জয়ের পথ প্রশস্ত করতে পারে।