ভারতীয় ফুটবল মহলে বৃহস্পতিবার রাত থেকে একটি খবর ঝড়ের গতিতে ছড়িয়ে পড়েছে—কেরলের উঠতি তারকা পিভি বিষ্ণু (PV Vishnu) নাকি লাল-হলুদ ঝাণ্ডা ছেড়ে সবুজ-মেরুন শিবিরে যোগ দিতে চলেছেন! এই খবরে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের মনে উৎকণ্ঠার কালো মেঘ জমেছে। অনেকে এটিকে গুজব বলে উড়িয়ে দিলেও, মোহনবাগানের সঙ্গে বিষ্ণুর নাম জড়ানোর গুঞ্জন থামছে না। তবে, প্রশ্ন হল, এই খবরে কতটা সত্যতা রয়েছে? পিভি বিষ্ণু কি সত্যিই ইস্টবেঙ্গল ছাড়ছেন, নাকি এটি কেবলই জল্পনার ফানুস?
বিষ্ণুর ইস্টবেঙ্গল যাত্রা
২০২৩ সালে ইস্টবেঙ্গলে যোগ দেন কেরলের এই তরুণ স্ট্রাইকার। তিন বছরের চুক্তিতে সই করে তিনি লাল-হলুদ শিবিরে পা রাখেন। ২০২৬ সাল পর্যন্ত তাঁর চুক্তি রয়েছে ক্লাবের সঙ্গে। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলার সময়ে বিষ্ণু তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। কলকাতা ফুটবল লিগে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে গোল করে তিনি সমর্থকদের মন জয় করেন। ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (আইএসএল) ২০২৩-২৪ মরশুমে তিনি একটি অ্যাসিস্ট করলেও, তাঁর দ্বি-পদ দক্ষতা, কাউন্টার-অ্যাটাকের ক্ষমতা এবং ড্রিবলিংয়ের সাহসিকতা তাঁকে আলাদা করে তুলেছে। ডিসেম্বর ২০২৪-এ তিনি আইএসএল-এর ‘ইমার্জিং প্লেয়ার অফ দ্য মান্থ’ পুরস্কার জিতে সকলের নজর কাড়েন।
ইস্টবেঙ্গল কর্তৃপক্ষ বিষ্ণুর প্রতিভার মূল্য বুঝতে পেরে ইতিমধ্যেই তাঁর সঙ্গে চুক্তি নবীকরণের বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে। কিন্তু বিষ্ণু এখনও নতুন চুক্তিতে সই করেননি। এই বিষয়টিই জল্পনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে মনে করছেন, মোহনবাগানের প্রস্তাবের কারণেই তিনি নতুন চুক্তিতে সই করতে টালবাহানা করছেন।
মোহনবাগানের সঙ্গে গুঞ্জন
বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক মাধ্যমে খবর ছড়ায় যে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট পিভি বিষ্ণুর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। কেউ কেউ দাবি করেছেন, সবুজ-মেরুন শিবির বিষ্ণুর সঙ্গে কথাবার্তা চূড়ান্ত করে ফেলেছে এবং আগামী মরশুমে তিনি মোহনবাগানের জার্সিতে মাঠে নামবেন। তবে, ইস্টবেঙ্গলের পক্ষ থেকে এই গুঞ্জনকে ‘যুক্তিসঙ্গত’ জবাব দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
নিয়ম অনুযায়ী, কোনও খেলোয়াড়ের চুক্তির মেয়াদ যদি এক বছরের বেশি বাকি থাকে, তবে অন্য ক্লাব তাঁকে সই করাতে চাইলে ট্রান্সফার ফি দিতে হবে। বিষ্ণুর ক্ষেত্রে, ২০২৬ পর্যন্ত চুক্তি থাকায় মোহনবাগান যদি তাঁকে দলে নিতে চায়, তবে ইস্টবেঙ্গলকে ট্রান্সফার ফি দিতে হবে। এছাড়া, চুক্তির শেষ ছয় মাসের মধ্যে খেলোয়াড় অন্য ক্লাবের সঙ্গে প্রাক-চুক্তি সই করতে পারেন। কিন্তু বিষ্ণুর চুক্তির মেয়াদ এখনও দেড় বছরের বেশি বাকি থাকায়, তিনি এই মুহূর্তে মোহনবাগানের সঙ্গে সরাসরি চুক্তি করতে পারবেন না।
ট্রান্সফার ফি ও সম্ভাবনা
পিভি বিষ্ণুর বর্তমান ফর্ম এবং সম্ভাবনা বিবেচনা করলে, তাঁর ট্রান্সফার ফি বেশ উচ্চ হতে পারে। তবে, কোনও নির্দিষ্ট ট্রান্সফার ফি-এর পরিমাণ এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। মোহনবাগান, যারা সম্প্রতি জেমি ম্যাকলারেনের মতো বড় নাম সই করিয়েছে, তারা বড় অঙ্কের ট্রান্সফার ফি দিতে সক্ষম। তবে, ইস্টবেঙ্গলও বিষ্ণুকে হাতছাড়া করতে নারাজ। ক্লাবের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় বিষ্ণু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন, এবং কর্তৃপক্ষ তাঁর চুক্তি নবীকরণে জোর দিচ্ছে।
সমর্থকদের উৎকণ্ঠা
ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের মধ্যে এই খবরে হতাশা ও উৎকণ্ঠা ছড়িয়েছে। বিষ্ণুকে তারা ‘লাল-হলুদের ভবিষ্যৎ’ হিসেবে দেখেন। তাঁর মতো তরুণ প্রতিভাকে হারানো ক্লাবের জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে। সামাজিক মাধ্যমে অনেক সমর্থক এই গুজবকে ‘মোহনবাগানের চাল’ বলে কটাক্ষ করেছেন। অন্যদিকে, মোহনবাগান সমর্থকরা বিষ্ণুর সম্ভাব্য আগমনে উচ্ছ্বসিত। তবে, উভয় পক্ষের মধ্যে এই জল্পনা কলকাতার ফুটবল মহলে উত্তেজনা বাড়িয়েছে।
কতটা সত্যি এই গুজব?
বর্তমানে পিভি বিষ্ণুর ইস্টবেঙ্গল ছাড়ার খবরকে পুরোপুরি গুজব বলা যায় না, আবার নিশ্চিতভাবেও সত্য বলা যায় না। মোহনবাগানের সঙ্গে তাঁর নাম জড়ানোর পেছনে তাঁর চুক্তি নবীকরণে বিলম্বই মূল কারণ। তবে, ইস্টবেঙ্গলের পক্ষ থেকে এই গুঞ্জনকে গুরুত্ব না দেওয়া এবং বিষ্ণুর সঙ্গে চুক্তি নবীকরণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া ইঙ্গিত দেয় যে ক্লাব তাঁকে ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর।
অন্যদিকে, মোহনবাগানের ট্রান্সফার কৌশল সবসময়ই আক্রমণাত্মক। তারা সম্প্রতি দেশীয় প্রতিভা যেমন প্রমভীর সিং এবং মেহতাব সিংয়ের দিকে নজর দিয়েছে। বিষ্ণুর মতো তরুণ প্রতিভাকে দলে টানার চেষ্টা তাদের কৌশলেরই অংশ হতে পারে। তবে, ট্রান্সফার ফি এবং বিষ্ণুর নিজের ইচ্ছার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।
পিভি বিষ্ণুর ইস্টবেঙ্গল ছাড়ার খবর এখনও জল্পনার পর্যায়েই রয়েছে। তাঁর চুক্তির মেয়াদ এবং ইস্টবেঙ্গলের প্রচেষ্টা বিবেচনা করলে, তাঁর মোহনবাগানে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা এখনই খুব বেশি নয়। তবে, ফুটবলের ট্রান্সফার মার্কেটে যে কোনও কিছুই সম্ভব। সমর্থকদের এখন অপেক্ষা করতে হবে আগামী কয়েক সপ্তাহের ঘটনাপ্রবাহের জন্য। বিষ্ণু লাল-হলুদে থাকবেন, নাকি সবুজ-মেরুন জার্সিতে নতুন ইনিংস শুরু করবেন, তা সময়ই বলবে।