শুক্রবারের শুভলগ্নে চার হাত এক হল বিজেপির দাপুটে নেতা দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) ও রিঙ্কুর। জীবনের ৬০টি বসন্ত পেরিয়ে ৬১-এ পা দিয়ে নতুন জীবন শুরু করলেন এই প্রবীণ রাজনীতিক। নিউটাউনে নিজের বাসভবনে ঘরোয়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন তিনি। দিলীপ ঘোষের এই বিশেষ দিনে শুভেচ্ছার বন্যা বইছে রাজনৈতিক মহলে। তবে, এই আনন্দের মুহূর্তে হালকা মন খারাপের ছোঁয়া দেখা গেল ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লার মুখে। কারণ, এত বছর পর দিলীপ ঘোষের বিয়েতে আমন্ত্রিতদের তালিকায় না থাকায় পেটপুরে খাওয়ার ইচ্ছা অপূর্ণই রয়ে গেল তাঁর।
শওকত মোল্লার মজার শুভেচ্ছা ও আফসোস
শুক্রবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দিলীপ ঘোষের বিয়ে প্রসঙ্গে শওকত মোল্লা বলেন, “বিয়েতে নেমন্তন্ন করলে খুব ভালো হত। বিয়েতে খাওয়া-দাওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল।” তাঁর এই মজার মন্তব্যে হাসির রোল ওঠে সাংবাদিক মহলে। তবে, শুধু মজা নয়, দিলীপ ঘোষের নতুন জীবনের জন্য তিনি আন্তরিক শুভেচ্ছাও জানান। তিনি বলেন, “দিলীপ দার একটু সতর্ক থাকতে হবে। যেভাবে উনি এতদিন রাজনীতির আঙিনায় ব্যাটিং করেছেন, যে ইনিংসটা খেলেছেন, সেই ইনিংস আর এই ইনিংসটার মধ্যে অনেকটা তফাত রয়েছে। এই তফাতটা ওনাকে প্রথমে বুঝতে হবে। এতদিন পরে যে শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে, তার জন্য দিলীপ দাকে অনেক শুভেচ্ছা রইল।”
শওকত মোল্লা আরও যোগ করেন, “ওনার দাম্পত্য জীবন খুব সুখের হোক। যদি আমাদের একটু নেমন্তন্ন করতো, তাহলে খুব ভালো হত। ওনার বিয়েতে খুব খাওয়ার ইচ্ছা ছিল।” তবে, তিনি একটি ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্যও করেন। তিনি বলেন, “ওনার একজন সহকর্মী আছে, তার মাথা খারাপ।” নাম উল্লেখ না করলেও, শওকত মোল্লা যে শুভেন্দু অধিকারীর দিকে ইঙ্গিত করেছেন, তা স্পষ্ট। তিনি জানান, দিলীপ ঘোষ নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন কার কথা বলা হচ্ছে। এই মন্তব্যে রাজনৈতিক মহলে হালকা হাসি ও আলোচনার ঝড় উঠেছে।
রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভুলে শুভেচ্ছা
রাজনীতির ময়দানে দিলীপ ঘোষ ও শওকত মোল্লা দুই মেরুর বাসিন্দা। বিজেপি ও তৃণমূলের এই দুই নেতা একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণে কখনও কুণ্ঠিত হননি। তবে, দিলীপ ঘোষের বিয়ের মতো বিশেষ দিনে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভুলে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা তাঁকে শুভেচ্ছায় ভরিয়ে দিয়েছেন। শওকত মোল্লার মতো অনেকেই দিলীপ ঘোষের নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন।
দিলীপ ঘোষের নতুন ইনিংস
দিলীপ ঘোষ, যিনি রাজনীতির মাঠে তাঁর দাপুটে ব্যক্তিত্ব ও তীক্ষ্ণ মন্তব্যের জন্য পরিচিত, তাঁর জীবনের এই নতুন অধ্যায় সবার নজর কেড়েছে। ৬১ বছর বয়সে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন, জীবনে নতুন শুরুর জন্য বয়স কোনও বাধা নয়। নিউটাউনের বাসভবনে ঘরোয়া আয়োজনে বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলেও, এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই সামাজিক মাধ্যমে শুভেচ্ছার ঢল নেমেছে।
দিলীপ ঘোষের বিয়ের খবরে যেমন তাঁর সমর্থকরা উচ্ছ্বসিত, তেমনই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরাও এই বিশেষ মুহূর্তে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে ভোলেননি। শওকত মোল্লার মতো তৃণমূলের অনেক নেতাই মজার ছলে হলেও দিলীপ ঘোষের নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন।
রাজনৈতিক মাঠে দিলীপ ও শওকত
দিলীপ ঘোষ ও শওকত মোল্লা দুজনেই নিজ নিজ দলের প্রভাবশালী নেতা। দিলীপ ঘোষ বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ ইউনিটের একজন শক্তিশালী মুখ, যিনি তাঁর স্পষ্টবাদিতা ও আক্রমণাত্মক রাজনৈতিক শৈলীর জন্য পরিচিত। অন্যদিকে, শওকত মোল্লা তৃণমূল কংগ্রেসের একজন প্রবীণ নেতা, যিনি ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক হিসেবে জনপ্রিয়। রাজনৈতিক মঞ্চে এই দুই নেতার মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও, ব্যক্তিগত জীবনের এই বিশেষ মুহূর্তে শওকত মোল্লার শুভেচ্ছা ও মজার মন্তব্য দুজনের মধ্যে একটি আলাদা সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়।
দিলীপ ঘোষের বিয়ে শুধু তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের একটি নতুন অধ্যায় নয়, এটি রাজনৈতিক মহলেও আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। শওকত মোল্লার মজার মন্তব্য ও শুভেচ্ছা এই ঘটনায় একটি আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। রাজনীতির ময়দানে প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও, এই বিশেষ দিনে তৃণমূল নেতাদের শুভেচ্ছা প্রমাণ করে, ব্যক্তিগত জীবনের আনন্দের মুহূর্তে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব অনেকটাই ম্লান হয়ে যায়।