ইন্ডিয়ান উইমেনস লিগ (Indian Women’s League 2024-25) ২০২৪-২৫ মরসুমে ইস্টবেঙ্গল এফসি মহিলা দল (East Bengal Women Team) ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জন করেছে। শুক্রবার নিজেদের মাঠে লিগের শেষ ম্যাচে গোকুলাম কেরালা এফসি-কে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা নিশ্চিত করেছে লাল-হলুদ ব্রিগেড। ১৪ ম্যাচে ৩৭ পয়েন্ট সংগ্রহ করে ইস্টবেঙ্গল শীর্ষে স্থান ধরে রেখেছে, যেখানে ২৯ পয়েন্ট নিয়ে গোকুলাম কেরালা রানার্স-আপ হয়েছে। এর আগে ওড়িশা এফসি-র বিরুদ্ধে ১-০ গোলের জয়ের মাধ্যমে ইস্টবেঙ্গল ইতিমধ্যেই শিরোপা নিশ্চিত করেছিল। শেষ ম্যাচটি ছিল নিয়মরক্ষার, তবুও দলটি তাদের আধিপত্য ধরে রেখে দুর্দান্ত জয় ছিনিয়ে নিয়েছে।
ম্যাচের হাইলাইটস
ইস্টবেঙ্গলের ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে প্রথমার্ধেই তিনটি গোল হয়ে যায়, যা ম্যাচের গতিপথ নির্ধারণ করে। ২৮তম মিনিটে ঘানার স্ট্রাইকার এলশাদাই আচিয়ামপং প্রথম গোলটি করেন, দলকে এগিয়ে নিয়ে যান। এরপর ৩৭তম মিনিটে তিনি দ্বিতীয় গোল করে ব্যবধান বাড়ান। ম্যাচের ৪২তম মিনিটে ভারতীয় ফরোয়ার্ড সৌম্যা গুগুলথ তৃতীয় গোলটি করে ইস্টবেঙ্গলের জয় নিশ্চিত করেন। দ্বিতীয়ার্ধে গোকুলাম কেরালা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলেও, ইস্টবেঙ্গলের শক্তিশালী রক্ষণ এবং কৌশলগত খেলা তাদের কোনো সুযোগ দেয়নি। এই জয়ের মাধ্যমে ইস্টবেঙ্গল তাদের অপরাজিত ধারা অক্ষুণ্ণ রেখেছে।
ইস্টবেঙ্গলের দলগত শ্রেষ্ঠত্ব
এই মরসুমে ইস্টবেঙ্গল মহিলা দল তাদের দলগত পারফরম্যান্সের মাধ্যমে সকলকে মুগ্ধ করেছে। বিদেশি এবং দেশীয় খেলোয়াড়দের নিখুঁত সমন্বয় এই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। ঘানার এলশাদাই আচিয়ামপং ১০টি গোল করে লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন। তাঁর ঠিক পিছনে রয়েছেন ভারতীয় ফরোয়ার্ড সৌম্যা গুগুলথ, যিনি ৯টি গোল করেছেন। সৌম্যা ওড়িশা এফসি-র বিরুদ্ধে শিরোপা নিশ্চিতকারী গোলটি করে ইস্টবেঙ্গলের ইতিহাসে নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিয়েছেন। এছাড়া, উগান্ডার রেস্টি নানজিরিও ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের মাধ্যমে দলের আক্রমণকে শক্তিশালী করেছেন।
দলের রক্ষণ, মাঝমাঠ এবং গোলরক্ষকদের অবদানও এই সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ। কোচের কৌশলগত নির্দেশনা এবং খেলোয়াড়দের একাগ্রতা ইস্টবেঙ্গলকে একটি অপ্রতিরোধ্য শক্তিতে পরিণত করেছে। লিগের ১৪টি ম্যাচে তারা ১২টি জয় এবং ১টি ড্র নিয়ে অপরাজিত থেকেছে। এই ধারাবাহিকতা তাদের শুধু চ্যাম্পিয়নই করেনি, ভারতীয় মহিলা ফুটবলের মানকে আরও উন্নত করেছে।
ইস্টবেঙ্গলের ঐতিহাসিক অর্জন
ইস্টবেঙ্গলের এই জয় ভারতীয় মহিলা ফুটবলের জন্য একটি মাইলফলক। ক্লাবটির মহিলা দল প্রথমবারের মতো ইন্ডিয়ান উইমেনস লিগের শিরোপা জিতেছে, যা লাল-হলুদ সমর্থকদের মধ্যে উৎসবের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। ইস্টবেঙ্গল ফুটবল ক্লাব, যা তার পুরুষ দলের জন্য দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় ফুটবলের শীর্ষে রয়েছে, এখন মহিলা ফুটবলেও তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে। এই অর্জন ক্লাবের প্রতি সমর্থকদের ভালোবাসাকে আরও গভীর করেছে।
সৌম্যা গুগুলথ এবং এলশাদাই আচিয়ামপংয়ের মতো খেলোয়াড়রা এই মরসুমে তাদের ব্যক্তিগত দক্ষতা দিয়ে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সৌম্যার গোলগুলি শুধু ম্যাচ জয়ের জন্যই নয়, ভারতীয় মহিলা ফুটবলারদের সম্ভাবনাকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছে। এলশাদাইয়ের গোলস্কোরিং ধারাবাহিকতা এবং মাঠের নেতৃত্ব তাকে দলের প্রাণশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
ভারতীয় মহিলা ফুটবলের ভবিষ্যৎ
ইস্টবেঙ্গলের এই জয় ভারতীয় মহিলা ফুটবলের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা এবং সম্ভাবনার প্রতিফলন। গত কয়েক বছরে আইডব্লিউএল দেশের মহিলা ফুটবলারদের জন্য একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ইস্টবেঙ্গলের মতো ক্লাবগুলি বিদেশি এবং দেশীয় খেলোয়াড়দের সমন্বয়ে দল গঠন করে মহিলা ফুটবলের মান উন্নত করছে। এই সাফল্য তরুণ মহিলা ফুটবলারদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে এবং ভবিষ্যতে আরও বেশি মেয়েকে এই খেলায় অংশ নিতে উৎসাহিত করবে।
ইস্টবেঙ্গলের এই অর্জন ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন (এআইএফএফ) এবং ক্লাবগুলির মধ্যে মহিলা ফুটবলের প্রতি ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগের ফল। মহিলা ফুটবলের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণ, স্পনসরশিপ এবং মিডিয়া কভারেজ এই খেলাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ইস্টবেঙ্গলের জয় ভারতীয় মহিলা ফুটবলের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেয়।
ইন্ডিয়ান উইমেনস লিগে ইস্টবেঙ্গলের চ্যাম্পিয়নশিপ জয় কেবল একটি ক্রীড়া সাফল্য নয়, বরং ভারতীয় মহিলা ফুটবলের ক্রমবিকাশের একটি প্রতীক। এলশাদাই আচিয়ামপং, সৌম্যা গুগুলথ এবং রেস্টি নানজিরির মতো খেলোয়াড়দের নেতৃত্বে ইস্টবেঙ্গল একটি অপ্রতিরোধ্য শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এই জয় ক্লাবের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে এবং ভারতীয় ফুটবলের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। লাল-হলুদ সমর্থকদের জন্য এটি উৎসবের মুহূর্ত, এবং ভারতীয় মহিলা ফুটবলের জন্য একটি গর্বের ক্ষণ।