ভারতের বৃহত্তম বেসরকারি বন্দর সংস্থা আদানি পোর্টস (Adani Ports ) অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন লিমিটেড (এপিএসইজেড) একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক চুক্তির ঘোষণা করেছে। অস্ট্রেলিয়ার উত্তর কুইন্সল্যান্ড এক্সপোর্ট টার্মিনাল (NQXT)-এর ১০০ শতাংশ মালিকানা অধিগ্রহণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি, যার বার্ষিক রপ্তানি ক্ষমতা ৫০ মিলিয়ন টন। মোট ২.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের এই চুক্তিটি সম্পূর্ণ হচ্ছে ‘নন-ক্যাশ’ ভিত্তিতে।
এই অধিগ্রহণের মাধ্যমে আদানি পোর্টস আবার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও রপ্তানি বাজারে তার অবস্থান মজবুত করছে। NQXT একটি বিশেষ কয়লা রপ্তানি টার্মিনাল, যা অস্ট্রেলিয়ার ইস্ট কোস্টের বাউয়েন শহরের ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত অ্যাবট পয়েন্ট বন্দরে অবস্থিত।
অধিগ্রহণের খুঁটিনাটি
এপিএসইজেড-এর এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এই অধিগ্রহণটি হবে একটি সম্পূর্ণ ‘নন-ক্যাশ’ ভিত্তিতে। কারমাইকেল রেল অ্যান্ড পোর্ট সিঙ্গাপুর হোল্ডিংস প্রাইভেট লিমিটেড (CRPSHPL) থেকে এপিএসইজেড অধিগ্রহণ করছে অ্যাবট পয়েন্ট পোর্ট হোল্ডিংস (APPH) নামের কোম্পানিটি, যা NQXT পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলির মালিক।
চুক্তির অংশ হিসেবে, এপিএসইজেড ১৪.৩৮ কোটি নতুন ইক্যুইটি শেয়ার ইস্যু করবে CRPSHPL-কে। চুক্তির মূল্যায়ন নির্ধারিত হয়েছে অস্ট্রেলিয়ান ডলার ৩.৯৭৫ বিলিয়ন, যা প্রায় ২.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তাছাড়া, APPH-র ব্যালান্স শিটে থাকা কিছু ‘নন-কোর’ অ্যাসেট এবং দায়ভারও গ্রহণ করবে এপিএসইজেড। যদিও সংস্থাটি জানিয়েছে, এই দায়ভার কিছু মাসের মধ্যেই নিষ্পত্তি করে ফেলা হবে এবং এতে চুক্তির মোট মূল্যায়নের উপর কোনো প্রভাব পড়বে না।
প্রথমে কেনা, পরে ফেরত, আবার অধিগ্রহণ
উল্লেখযোগ্য যে, আদানি পোর্টস ২০১১ সালে NQXT প্রথম অধিগ্রহণ করেছিল ২ বিলিয়ন ডলারে। কিন্তু মাত্র দুই বছর পর, ২০১৩ সালে, এই সম্পদটি আদানি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়, যাতে সংস্থাটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে তার ব্যবসা সম্প্রসারণে মনোনিবেশ করতে পারে।
বর্তমানে দেশের বাজারে আদানি পোর্টসের শক্তিশালী অবস্থান এবং উন্নত ব্যালান্স শিট-এর ফলে, সংস্থাটি আবারও আন্তর্জাতিক বাজারে ফিরছে এবং সেই লক্ষ্যেই NQXT পুনরায় অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক কৌশল ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
এপিএসইজেড-এর CEO ও Whole-time Director, অশ্বিনী গুপ্তা, এই চুক্তিকে সংস্থার আন্তর্জাতিক কৌশলের একটি ‘টার্নিং পয়েন্ট’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “NQXT অধিগ্রহণ আমাদের আন্তর্জাতিক সম্প্রসারণ কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই বন্দরের মাধ্যমে আমরা নতুন রপ্তানি বাজারে প্রবেশ করতে পারব এবং দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী নির্ভরযোগ্য গ্রাহক তৈরি করতে পারব।”
তিনি আরও জানান, এই টার্মিনালটি পূর্ব-পশ্চিম বাণিজ্যপথে অবস্থিত হওয়ায় এর বৃদ্ধি সম্ভাবনা অনেক। এটির মধ্য-মেয়াদি চুক্তি নবায়ন, সক্ষমতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা, এবং ভবিষ্যতে ‘গ্রিন হাইড্রোজেন’ রপ্তানির সুযোগ এটিকে অত্যন্ত মূল্যবান একটি সম্পদে পরিণত করেছে।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, আগামী চার বছরের মধ্যে NQXT-এর বার্ষিক EBITDA (উপার্জন) ৪০০ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারে পৌঁছাবে।
পরিবেশ ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি
আদানির ‘Growth with Goodness’ মন্ত্র অনুসরণ করেই এই অধিগ্রহণ সম্পন্ন হচ্ছে বলে জানান অশ্বিনী গুপ্তা। তিনি বলেন, “NQXT একটি উচ্চ মানের সম্পদ যা পরিবেশ, সামাজিক এবং প্রশাসনিক (ESG) মানদণ্ড মেনে চলে। এটি আমাদের ‘Growth with Goodness’ ভিশনের একটি আদর্শ অংশীদার হবে।”
এই অধিগ্রহণ কেবল আদানি পোর্টসের আন্তর্জাতিক অবস্থানকেই মজবুত করবে না, বরং অস্ট্রেলিয়া এবং এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারতের শিল্প উপস্থিতিকেও জোরদার করবে। পাশাপাশি এটি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, আদানি গ্রুপ এখন তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে আন্তর্জাতিক পরিসরে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে — বিশেষ করে যেখানে পরিবেশ-সহযোগিতা, দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক শক্তিমত্তা প্রাধান্য পাচ্ছে।