মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে আইপিএল ২০২৫-এর (IPL 2025) ৩৩তম ম্যাচে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স (Mumbai Indians) সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের (Sunrisers Hyderabad) বিরুদ্ধে চার উইকেটের রুদ্ধশ্বাস জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। এই জয়ের পিছনে মূল নায়ক ছিলেন ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডার উইল জ্যাকস, যিনি বোলিং ও ব্যাটিংয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেছেন। জ্যাকস ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে এসআরএইচকে ২০ ওভারে ১৬২/৫-এ আটকে রাখেন এবং পরে ২৬ বলে ৩৬ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে মুম্বইয়ের জয়ের ভিত গড়ে দেন। এই জয় মুম্বইয়ের প্লে-অফের আশা জিইয়ে রেখেছে, যেখানে দুই দলই ছয় ম্যাচে মাত্র দুটি জয় নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের নিচের দিকে রয়েছে।
ম্যাচের প্রেক্ষাপট ও টস
ম্যাচের শুরুতে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের পিচ সাধারণত ব্যাটিং সহায়ক হলেও এই ম্যাচে কিছুটা আঠালো ছিল, যা বোলারদের জন্য সামান্য সুবিধা এনে দেয়। এসআরএইচ তাদের বিস্ফোরক ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে মাঠে নামে, যেখানে ট্র্যাভিস হেড, অভিষেক শর্মা, এবং হেনরিখ ক্লাসেনের মতো তারকারা ছিলেন। অন্যদিকে, মুম্বই তাদের শক্তিশালী বোলিং ইউনিটের উপর ভরসা রেখেছিল, যেখানে জসপ্রীত বুমরাহ, ট্রেন্ট বোল্ট, এবং উইল জ্যাকস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
সানরাইজার্সের ইনিংস: ক্লাসেনের শেষ দিকের ঝড়
সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের ইনিংস শুরু হয় অভিষেক শর্মা এবং ট্র্যাভিস হেডের ওপেনিং জুটির মাধ্যমে। অভিষেক ৪০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে দলকে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করান। তবে, মুম্বইয়ের বোলাররা, বিশেষ করে উইল জ্যাকস, মাঝের ওভারগুলিতে দুর্দান্ত বোলিং করে এসআরএইচের রানের গতি কমিয়ে দেন। জ্যাকস তাঁর অফ-স্পিনে ট্র্যাভিস হেড (২৮ বলে ২৮) এবং আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেন, যা এসআরএইচের মোমেন্টামে ধাক্কা দেয়। ১৭ ওভার শেষে এসআরএইচ ১১৫/৪-এ ছিল, এবং মনে হচ্ছিল তারা ১৫০-এর কাছাকাছি স্কোরে আটকে যাবে।
কিন্তু হেনরিখ ক্লাসেন শেষ দিকে তাঁর বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ের নমুনা পেশ করেন। ১৮তম ওভারে দীপক চাহারের বিরুদ্ধে ২১ রান তুলে ক্লাসেন দলের স্কোরকে বাড়িয়ে দেন। জসপ্রীত বুমরাহ তাঁকে আউট করে এসআরএইচকে কিছুটা থামান, কিন্তু শেষ ওভারে অ্যানিকেট বর্মা এবং অধিনায়ক প্যাট কামিন্স হার্দিক পান্ডিয়ার বিরুদ্ধে ২২ রান তুলে দলকে ১৬২/৫-এ পৌঁছে দেন। অভিষেক শর্মার ৪০ রান ছিল দলের সর্বোচ্চ স্কোর, কিন্তু ক্লাসেন এবং বর্মার শেষ দিকের আগ্রাসী ব্যাটিং এসআরএইচকে লড়াই করার মতো স্কোর এনে দেয়।
মুম্বইয়ের চেজ: রোহিতের ক্যামিও এবং জ্যাকসের নায়কোচিত ইনিংস
১৬৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স শুরুতেই রোহিত শর্মার ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের সুবিধা পায়। রোহিত ১৬ বলে ২৬ রান করে তিনটি বিশাল ছক্কা মেরে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ১০০ ছক্কার মাইলফলক স্পর্শ করেন। তবে, প্যাট কামিন্স তাঁকে আউট করে এসআরএইচকে প্রথম সাফল্য এনে দেন। রোহিতের বিদায়ের পর রায়ান রিকেলটন এবং উইল জ্যাকস দলের হাল ধরেন। জ্যাকস ২৬ বলে ৩৬ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন, যা মুম্বইয়ের জয়ের পথ প্রশস্ত করে।
মাঝের ওভারগুলিতে মুম্বইয়ের মিডল অর্ডার কিছুটা চাপে পড়ে, কিন্তু সূর্যকুমার যাদব (১৭*) এবং তিলক বর্মার শান্ত মাথার ব্যাটিং দলকে জয়ের দিকে নিয়ে যায়। শেষ পাঁচ ওভারে ২৬ রান প্রয়োজন ছিল, এবং হার্দিক পান্ডিয়া ও তিলক বর্মা দলকে ফিনিশিং লাইনের ওপারে নিয়ে যান। জ্যাকসের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স এই ম্যাচে মুম্বইয়ের জয়ের মূল চাবিকাঠি ছিল।
জ্যাকসের অলরাউন্ড দক্ষতা
উইল জ্যাকস এই ম্যাচে তাঁর বহুমুখী প্রতিভার প্রমাণ দিয়েছেন। বোলিংয়ে তিনি এসআরএইচের বিস্ফোরক ব্যাটসম্যানদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন, বিশেষ করে ট্র্যাভিস হেডের উইকেটটি ছিল ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। তাঁর ইকোনমিকাল স্পিন বোলিং এসআরএইচকে বড় স্কোর থেকে আটকে দেয়। ব্যাট হাতে তিনি দ্রুত রান তুলে দলের চেজকে সহজ করে দেন। জ্যাকসের এই পারফরম্যান্স তাঁকে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারের দাবিদার করে তোলে।
ম্যাচের তাৎপর্য
এই জয় মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা পয়েন্ট টেবিলের নিচের দিক থেকে উঠে আসার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে, এসআরএইচ তাদের ব্যাটিং লাইনআপের অসঙ্গতির জন্য ভুগছে। অভিষেক শর্মা এবং ক্লাসেন ফর্মে থাকলেও, দলের মিডল অর্ডার ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করতে ব্যর্থ হচ্ছে। মুম্বইয়ের জন্য জ্যাকসের উত্থান একটি ইতিবাচক দিক, এবং তারা আশা করবে যে রোহিত শর্মা এবং সূর্যকুমার যাদব আগামী ম্যাচগুলিতে আরও বড় ইনিংস খেলবেন।
মুম্বই ইন্ডিয়ান্স বনাম সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ ম্যাচটি ছিল উত্তেজনায় ভরপুর। উইল জ্যাকসের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স এবং মুম্বইয়ের শান্ত মাথার চেজ এই ম্যাচে তাদের জয় এনে দেয়। রোহিত শর্মার ছক্কার মাইলফলক এবং ক্লাসেনের শেষ দিকের আগ্রাসী ব্যাটিং ম্যাচটিকে আরও রোমাঞ্চকর করে তুলেছিল। এই জয়ের ফলে মুম্বই তাদের প্লে-অফের আশা বাঁচিয়ে রেখেছে, এবং ভক্তরা আশা করছেন যে এই জয় দলের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট হবে।