এমসিএক্সে সোনা লেনদেন বন্ধ! সোনার দাম রেকর্ড ছুঁয়েছে

শুক্রবার, গুড ফ্রাইডে উপলক্ষে ভারতের প্রধান শেয়ার বাজারগুলি বন্ধ থাকবে। এই গুরুত্বপূর্ণ দিনের আগে, মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ (এমসিএক্স)-এ সোনার দাম (Gold price) ভারতে নতুন উচ্চতায়…

Gold or Silver Trading at MCX on April 18

শুক্রবার, গুড ফ্রাইডে উপলক্ষে ভারতের প্রধান শেয়ার বাজারগুলি বন্ধ থাকবে। এই গুরুত্বপূর্ণ দিনের আগে, মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ (এমসিএক্স)-এ সোনার দাম (Gold price) ভারতে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। এমসিএক্স-এ সোনার দাম ১০ গ্রামে ৯৫,৮৯৫ টাকায় পৌঁছেছে, যা এখন ১,০০,০০০ টাকার মাইলফলক থেকে মাত্র ৪,১০৫ টাকা দূরে। এই পরিস্থিতিতে অনেক বিনিয়োগকারীর মনে প্রশ্ন, গুড ফ্রাইডে-তে এমসিএক্স-এ সোনা ও রুপোর বাণিজ্য কি খোলা থাকবে? আসুন বিস্তারিত জেনে নিই।

Advertisements

এমসিএক্স-এ ছুটির তালিকা: ১৮ এপ্রিল বাণিজ্য বন্ধ

এমসিএক্স-এর ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসের ছুটির তালিকা অনুযায়ী, ১৮ এপ্রিল, শুক্রবার, এর ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। ফলে, বিনিয়োগকারীরা এই দিনে সোনা, রুপো, প্রাকৃতিক গ্যাস, জিঙ্ক, তামা, অপরিশোধিত তেল এবং অন্যান্য ধাতুর মতো পণ্য ও ফিউচারে বাণিজ্য করতে পারবেন না। এছাড়াও, বাজার-সংক্রান্ত লেনদেনের নিষ্পত্তি (সেটেলমেন্ট) এই দিনে বন্ধ থাকবে। এই ছুটির কারণে বিনিয়োগকারীদের আগে থেকে পরিকল্পনা করে নেওয়া উচিত, যাতে তাদের বাণিজ্য কৌশল ব্যাহত না হয়।

   

গুড ফ্রাইডে ২০২৫: তাৎপর্য

গুড ফ্রাইডে হল ইস্টারের আগের শুক্রবার, যেদিন খ্রিস্টান সম্প্রদায় যিশু খ্রিস্টের ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার স্মরণে দিনটি পালন করে। খ্রিস্টধর্মের প্রথম দিন থেকেই এই দিনটি দুঃখ, তপস্যা এবং উপবাসের দিন হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। জার্মান ভাষায় এই দিনকে “কারফ্রাইটাগ” (দুঃখময় শুক্রবার) বলা হয়, যা এর তাৎপর্যকে আরও স্পষ্ট করে। ভারতেও এই দিনটি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়, এবং ব্যাঙ্ক, শেয়ার বাজার এবং কমোডিটি এক্সচেঞ্জগুলি বন্ধ থাকে।

ভারতে সোনার দাম: নতুন উচ্চতায়

১৭ এপ্রিল, ২০২৫-এ, জুন ২০২৫ মেয়াদপূর্তির এমসিএক্স সোনা ১০ গ্রামে ৯৫,৮৯৫ টাকায় পৌঁছে নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে। এই দাম থেকে সোনা এখন ১,০০,০০০ টাকার মাইলফলক থেকে খুবই কাছাকাছি। এছাড়াও, ১৮ ক্যারেট সোনার দাম ৮৬০ টাকা বেড়ে ৭২,৯৯০ টাকায়, ২৪ ক্যারেট সোনা ১,১৪০ টাকা বেড়ে ৯৭,৩১০ টাকায় এবং ২২ ক্যারেট সোনা ১,০৫০ টাকা বেড়ে ৮৯,২০০ টাকায় পৌঁছেছে। এই অভূতপূর্ব দাম বৃদ্ধির পিছনে বিশ্বব্যাপী ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, মার্কিন ডলারের দুর্বলতা এবং নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সোনার চাহিদা বৃদ্ধি প্রধান ভূমিকা পালন করছে।

কোটাক সিকিউরিটিজের এভিপি-কমোডিটি রিসার্চ, কায়নাত চৈনওয়ালা বলেন, “কমেক্স জুন সোনা গতকাল ৩.২৭% বেড়েছে, যা এপ্রিল ২০২০-এর পর সবচেয়ে বড় একদিনের লাভ। মার্কিন ডলারের দুর্বলতা এবং মার্কিন-চীন বাণিজ্য উত্তেজনার কারণে নিরাপদ বিনিয়োগের চাহিদা বৃদ্ধি সোনার দামকে উচ্চতায় নিয়ে গেছে।” তিনি আরও জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নভিডিয়ার এইচ২০ চিপ চীনে বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা এবং প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের রেয়ার আর্থ ট্যারিফ পর্যালোচনার আহ্বান ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি বাড়িয়েছে। ফলে, সোনার দাম ৩,৩৫৮.৪ ডলার/আউন্সে পৌঁছেছে, এবং বৃহস্পতিবার এটি ৩,৩৭১.৯ ডলার/আউন্সে নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে।

Advertisements

রুপোর দাম: সামান্য পতন

অন্যদিকে, মে ২০২৫ মেয়াদপূর্তির এমসিএক্স রুপোর দাম প্রায় ১% বা ৯৫০ টাকা কমে ৯৫,৩০০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। দিনের সর্বনিম্ন দাম ছিল ৯৫,৬৫০ টাকা প্রতি কেজি। রুপোর দামের এই পতন সোনার তুলনায় বাজারে কিছুটা ভিন্ন প্রবণতা দেখাচ্ছে। তবে, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে রুপোর চাহিদাও ভবিষ্যতে বাড়তে পারে।

ভারতের সোনার বাজার: কী প্রভাব ফেলছে?

মিনার্ভা ক্যাপিটাল রিসার্চের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের গহনা শিল্প সংগঠিত খাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং রপ্তানির উপর জোর দিচ্ছে, যা দেশের বৈদেশিক ঘাটতি কমাতে সহায়ক হবে। এই প্রতিবেদনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল:
শুল্ক হ্রাস: ২০২৪ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটে সোনা ও রুপোর উপর শুল্ক ১৫% থেকে ৬% এবং প্ল্যাটিনামের উপর শুল্ক ১৫.৪% থেকে ৬.৪% করা হয়েছে। এটি গহনা শিল্পে মূল্য সংযোজন বাড়াবে।

  • প্যান কার্ড বাধ্যতামূলক: ২ লক্ষ টাকার বেশি লেনদেনে প্যান কার্ড বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
  • গোল্ড হলমার্কিং: ১ এপ্রিল, ২০২৩ থেকে গোল্ড হলমার্কিং বাধ্যতামূলক হয়েছে, যার লক্ষ্য বর্তমানে ৩০% হলমার্কিং শেয়ার বাড়ানো।
  • গ্রামীণ বাজারে চাহিদা: ভারতের গহনার চাহিদার ৫৮% গ্রামীণ বাজার থেকে আসে। সংগঠিত খুচরা বিক্রেতারা এই বাজারে প্রবেশ করছে।
  • মৌসুমি চাহিদা: বিবাহ, উৎসব এবং কৃষি কার্যক্রম সোনার চাহিদা বাড়ায়। মে-জুন এবং সেপ্টেম্বর-জানুয়ারি মাসে বিবাহের মরশুমে এবং দীপাবলি, ধনতেরাস, অক্ষয় তৃতীয়ার মতো শুভ দিনে চাহিদা শীর্ষে থাকে।

গুড ফ্রাইডে ২০২৫ উপলক্ষে ১৮ এপ্রিল এমসিএক্স-এ সোনা ও রুপোর বাণিজ্য সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। বিনিয়োগকারীদের এই ছুটির কথা মাথায় রেখে তাদের বাণিজ্য পরিকল্পনা সাজানো উচিত। সোনার দাম নতুন উচ্চতায় পৌঁছলেও, রুপোর দামে সামান্য পতন দেখা গেছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি সোনা ও রুপোর বাজারকে প্রভাবিত করছে। ভারতের গহনা শিল্পও সংগঠিত খাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে এই বাজারের সম্ভাবনাকে আরও উজ্জ্বল করবে।