বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (Bangladesh Cricket Board) বর্তমানে তীব্র চাপের মুখে রয়েছে। মঙ্গলবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিসিবি সদর দপ্তরে অভিযান চালিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। তিন সদস্যের একটি তদন্ত দল অর্থের অপব্যবহার, টুর্নামেন্টের নিয়মে সন্দেহজনক পরিবর্তন এবং একটি বাতিল হওয়া রাজনৈতিক ক্রিকেট উৎসবের সঙ্গে সম্পর্কিত নথিপত্র সংগ্রহ করেছে। এই অভিযান ক্রিকেট প্রশাসনে দুর্নীতির অভিযোগে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
দুদকের তদন্ত তিনটি প্রধান অভিযোগের ওপর কেন্দ্রীভূত
১. বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) টিকিট বিক্রির সন্দেহজনক হিসাব।
২. বাতিল হওয়া “মুজিব ১০০” ক্রিকেট কর্মসূচির তহবিলের অপব্যবহার।
৩. ঢাকার তৃতীয় বিভাগ কোয়ালিফাইং টুর্নামেন্টে অস্বাভাবিক নিয়ম পরিবর্তন ও প্রবেশ ফি বৃদ্ধি।
তদন্তের মূল লক্ষ্য হলো নাজমুল হাসানের বিসিবি সভাপতি থাকাকালীন সময়ে ঘটে যাওয়া এই ঘটনাগুলো। দুদকের সন্দেহ, এখানে বেশ কিছু বিষয়ে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে।
বিপিএল টিকিট বিক্রি: অস্বাভাবিক আয় বৃদ্ধি
দুদকের তথ্য অনুযায়ী, বিসিবি গত আট বছরে বিপিএল টিকিট বিক্রি থেকে ১৫ কোটি টাকা (১.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) আয় করেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক একটি মৌসুমে এই আয় হঠাৎ করে ১৩ কোটি টাকা (১.০৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) হয়ে যায়। এত অল্প সময়ে এমন বড় ধরনের আয় বৃদ্ধি দুদকের কাছে সন্দেহজনক মনে হয়েছে।
দুদকের সহকারী পরিচালক আল আমিন বলেন, “বিসিবির আয়ের একটি উৎস হলো টিকিট বিক্রি। আট বছরে ১৫ কোটি টাকা আয় হয়েছে, কিন্তু একটি মৌসুমে হঠাৎ ১৩ কোটি টাকা। আমরা এই অসঙ্গতির কারণ খুঁজে বের করতে নথিপত্র সংগ্রহ করছি।“
মুজিব ১০০: তহবিলের গরমিল
শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের জন্য “মুজিব ১০০” নামে একটি ক্রিকেট কর্মসূচি পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু কোভিড মহামারীর কারণে এটি বাতিল হয়। তবে এই কর্মসূচির তহবিল নিয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
আল আমিন জানান, “মুজিব ১০০ কর্মসূচির জন্য ২৫ কোটি টাকা খরচ দেখানো হয়েছে, কিন্তু প্রকৃত খরচ ছিল প্রায় ১৭ কোটি টাকা। প্রায় ১৯ কোটি টাকার খরচের হিসাব দেখানো হয়নি। আমরা বিসিবির অর্থ বিভাগের কাছে এ সংক্রান্ত নথিপত্র চেয়েছি।“
তৃতীয় বিভাগ লিগ: প্রবেশ ফি বৃদ্ধি ও সীমিত অংশগ্রহণ
ঢাকার তৃতীয় বিভাগ লিগে প্রবেশ ফি নিয়েও তদন্ত চলছে। নাজমুল হাসানের সময়ে এই ফি ৫০,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা (৪১২ থেকে ৪০০০ মার্কিন ডলার) করা হয়। ফলে মাত্র ২-৩টি ক্লাব টুর্নামেন্টে অংশ নিতে পারে। এ বছর ফি কমিয়ে ১ লাখ টাকা করায় ৬০টি ক্লাব অংশ নিয়েছে।
আল আমিন বলেন, “এখানে ব্যক্তিগত প্রভাব বা চাপ থাকতে পারে, যার কারণে ক্লাবগুলো অংশ নিতে পারেনি। আমরা এর কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।“
বিসিবির সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি
বিসিবি এই অভিযানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেনি। বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, তারা দুদকের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করবে। তিনি বলেন, “আমাদের সব বিভাগ দুদকের চাহিদা অনুযায়ী নথিপত্র সরবরাহ করবে।“
দুদক এখন সংগ্রহ করা নথিপত্র পর্যালোচনা করে তাদের এনফোর্সমেন্ট ইউনিটে রিপোর্ট জমা দেবে। এর ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই তদন্ত ক্রিকেট প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।