নতুন আর্থিক বছর (২০২৪-২৫) শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেশের কোটি কোটি করদাতার কাছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে—ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন (Income Tax Return -ITR) দাখিল। মূল্যায়ন বছর ২০২৫-২৬-এর জন্য রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া খুব শীঘ্রই শুরু হতে চলেছে। সঠিক ও নির্ভুলভাবে রিটার্ন দাখিলের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত নথিপত্র আগে থেকেই প্রস্তুত রাখা অত্যন্ত জরুরি।
এই প্রতিবেদনে রইল একটি সম্পূর্ণ চেকলিস্ট, যা অনুসরণ করে আপনি নির্ভুলভাবে ও নির্বিঘ্নে আপনার আয়কর রিটার্ন ফাইল করতে পারবেন:
১. প্যান ও আধার কার্ড:
আইটিআর দাখিলের জন্য প্যান (PAN) বাধ্যতামূলক পরিচয়পত্র। বর্তমানে, আধারের সঙ্গে প্যান লিঙ্ক করাও আবশ্যক। আধার পরিচয় যাচাই ও রিটার্ন ই-ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
২. ফর্ম ১৬:
বেতনভোগী কর্মচারীদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি। নিয়োগকর্তা এটি ইস্যু করেন, যেখানে মোট বেতন এবং কর্তন করা টিডিএস-এর বিস্তারিত থাকে। ফর্ম ১৬-এর অংশ ‘এ’ তে টিডিএস-এর সারাংশ এবং অংশ ‘বি’ তে বেতনের ব্রেকআপ ও বিভিন্ন ছাড়ের বিবরণ থাকে। এটি ১৫ই জুনের মধ্যে কর্মীদের সরবরাহ করা আবশ্যক।
৩. ফর্ম ২৬AS এবং AIS (Annual Information Statement):
ফর্ম ২৬AS হল এক ধরনের ট্যাক্স পাসবুক, যেখানে টিডিএস, অগ্রিম কর, এবং বড় অঙ্কের লেনদেনের বিবরণ থাকে। AIS-এ বেতন, সুদ, লভ্যাংশ, শেয়ার লেনদেন ইত্যাদি বিভিন্ন উৎস থেকে আয় সম্পর্কে বিশদ তথ্য থাকে। এই দুই নথির সঙ্গে আপনার টিডিএস ও আয়ের তথ্য মেলানো জরুরি।
৪. ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিবরণ:
যে সমস্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলি আর্থিক বছরে সক্রিয় ছিল, সেগুলির তালিকা প্রস্তুত রাখুন। কর ফেরতের জন্য সঠিক অ্যাকাউন্ট নম্বর ও IFSC কোড উল্লেখ করা জরুরি।
৫. সুদের সার্টিফিকেট:
ব্যাংক ও ডাকঘর থেকে সঞ্চয় অ্যাকাউন্ট, ফিক্সড ডিপোজিট ও রেকারিং ডিপোজিটে অর্জিত সুদের সার্টিফিকেট সংগ্রহ করুন। এগুলি ‘অন্যান্য উৎস থেকে আয়’-এর আওতায় করযোগ্য।
৬. কর ছাড়ের জন্য বিনিয়োগ প্রমাণপত্র (ধারা ৮০সি, ৮০ডি ইত্যাদি)
যেমন:
– জীবন বিমার প্রিমিয়ামের রসিদ
– ELSS মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের প্রমাণ
– PPF ও সুকন্যা সমৃদ্ধি অ্যাকাউন্টে জমার রসিদ
– সন্তানদের টিউশন ফি রসিদ
– গৃহঋণ পরিশোধের প্রমাণ
– স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়ামের রসিদ (ধারা ৮০ডি-র অধীনে ছাড়ের জন্য)
৭. গৃহঋণ ও সম্পত্তি সংক্রান্ত নথি:
– ঋণদাতার কাছ থেকে সুদের সার্টিফিকেট সংগ্রহ করুন (ধারা ২৪(বি)-এর অধীনে ছাড় পেতে)।
– যদি আপনি HRA দাবি করেন, তবে বাড়িভাড়ার রসিদ বা ভাড়ার চুক্তিপত্র প্রস্তুত রাখুন।
৮. মূলধনী লাভ সংক্রান্ত নথি:
শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড অথবা সম্পত্তি বিক্রয় করলে, সংশ্লিষ্ট লাভের বিবরণ ও স্টেটমেন্ট সংগ্রহ করুন। প্রয়োজনে ব্রোকারেজ স্টেটমেন্ট ও সম্পত্তি বিক্রয়/ক্রয় দলিল সংগ্রহ করা জরুরি।
৯. বিদেশে আয় ও সম্পত্তি (যদি প্রযোজ্য হয়):
NRI বা যাঁদের বিদেশে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, সম্পত্তি অথবা আয় আছে, তাঁদের সেই সংক্রান্ত তথ্য দিতে হবে। পাশাপাশি বিদেশে দেওয়া করের বিবরণ থাকলে, তা প্রদান করলে ডবল ট্যাক্সেশন এড়ানো যায়।
১০. ব্যবসা বা ফ্রিল্যান্স আয় সংক্রান্ত নথি
স্বনির্ভর পেশাজীবী বা ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে:
– লাভ ও ক্ষতির বিবরণী
– ব্যালান্স শিট
– জিএসটি রিটার্ন (যদি প্রযোজ্য হয়)
– পেশাগত রসিদ ও ইনভয়েস
১১. অগ্রিম কর ও স্ব-মূল্যায়ন কর চালান:
যদি আপনি কোনও অগ্রিম কর বা স্ব-মূল্যায়ন কর দিয়ে থাকেন, তাহলে চ্যালান ২৮০-এর রসিদ প্রস্তুত রাখুন।
১২. পূর্ববর্তী বছরের রিটার্ন ও কর সংক্রান্ত নোটিশ:
গত বছরের আইটিআর এবং যে কোনও মুলতুবি নোটিশের কপি হাতে রাখলে চলতি বছরের রিটার্ন প্রস্তুতিতে সুবিধা হয়।
কবে থেকে শুরু হবে ITR ফাইলিং ২০২৫?
সাধারণত CBDT (Central Board of Direct Taxes) এপ্রিল মাসেই আপডেটেড ITR ফর্ম প্রকাশ করে। গত বছর ফর্ম ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশ পেলেও ই-ফাইলিং শুরু হয়েছিল এপ্রিল থেকে। চলতি বছরও সেই ধারা বজায় থাকার সম্ভাবনা প্রবল।
তবে, অধিকাংশ বেতনভোগী করদাতার ক্ষেত্রে ITR ফাইলিং সাধারণত জুনের মাঝামাঝি শুরু হয়, যখন ফর্ম ১৬ হাতে আসে। নিয়োগকর্তাদের ১৫ জুনের মধ্যে ফর্ম ১৬ দিতে হয়। ফলে, যদিও এপ্রিলেই ফাইলিং পোর্টাল খোলা থাকে, অধিকাংশ মানুষ জুনে ফাইলিং শুরু করেন।
সঠিক সময়ে রিটার্ন জমা দিতে চাইলে এখন থেকেই উপরোক্ত নথিগুলি গুছিয়ে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ। এতে সময়মতো, নির্ভুল এবং ঝামেলাহীন ফাইলিং সম্ভব হবে।