ভারত ও চিনের মধ্যে বাণিজ্যিক (India-China Trade) সম্পর্ক গত কয়েক বছরে নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যেও স্থিতিশীল থেকেছে। কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে এই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিসংখ্যান জানলে অনেকেই অবাক হবেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, চিনের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ এখন এক বিশাল অঙ্কে পৌঁছেছে, যা ভারতের অর্থনৈতিক কৌশলের দৃষ্টিকোণ থেকে গভীরভাবে বিশ্লেষণের দাবি রাখে।
চলতি অর্থবর্ষে ভারত চিন থেকে আমদানি করেছে প্রায় ১১৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য। অন্যদিকে, চিনে ভারতের রপ্তানি হয়েছে মাত্র ১৪.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। অর্থাৎ, এই দুই দেশের মধ্যে মোট বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৯.২ বিলিয়ন ডলার, যা সম্পূর্ণভাবে চিনের পক্ষে।
এই পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে, ভারত এখনও চিনের উপরে ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল, বিশেষ করে প্রযুক্তিপণ্য, যন্ত্রাংশ, ওষুধ প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত কাঁচামাল ও ইলেকট্রনিক পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে। চিন থেকে যে পণ্যগুলি ভারতে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয়, তার মধ্যে রয়েছে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, সৌর প্যানেল, বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ, কেমিক্যাল ও ওষুধের কাঁচামাল।
Also Read | সোনার বাজারে বড় ঝাঁকুনি, হঠাৎ বেড়ে গেল দাম
অন্যদিকে, ভারত থেকে চিনে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়, তা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। মূলত লৌহ আকরিক, কিছু কৃষিপণ্য এবং রাসায়নিক দ্রব্য চিনে রপ্তানি করে ভারত। তবে রপ্তানির সেই পরিমাণ চিনের বাজারে বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারছে না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এত বড় বাণিজ্য ঘাটতি ভারতের জন্য দীর্ঘমেয়াদে উদ্বেগের কারণ হতে পারে। কারণ এটি দেশের মুদ্রার উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং স্থানীয় উৎপাদন শিল্পকে চিনা পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে অসুবিধা হয়।
ভারত সরকার ইতিমধ্যেই চিনা পণ্যের উপরে কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং ‘আত্মনির্ভর ভারত’ কর্মসূচির আওতায় ঘরোয়া শিল্পকে উৎসাহ দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। বিভিন্ন খাতে দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে ‘প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেন্টিভ’ (PLI) স্কিম চালু হয়েছে, যার মাধ্যমে চিনের উপরে নির্ভরশীলতা কমানোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
তবে বাস্তবতা হচ্ছে, এখনও অনেক ক্ষেত্রে চিনের বিকল্প বাজার বা যোগানদার খুঁজে পাওয়া কঠিন। চিনের উৎপাদন দক্ষতা, বিশাল স্কেল এবং প্রতিযোগিতামূলক মূল্য ভারতের বহু ব্যবসায়ীর কাছে অত্যন্ত লাভজনক হয়ে উঠেছে। তাই হঠাৎ করে চিনা পণ্যের উপরে নির্ভরতা পুরোপুরি কমানো সম্ভব নয়।
Also Read | কলকাতায় আজকের পেট্রোল-ডিজেলের দাম কত, দেখে নিন এখনই
অন্যদিকে, ভূ-রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যেও বাণিজ্যিক সম্পর্কে খুব বেশি ভাঙন পড়েনি। সীমান্তে উত্তেজনা থাকা সত্ত্বেও দুই দেশই অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নিজেদের স্বার্থ বজায় রেখে চলার চেষ্টা করছে।
চলতি অর্থবর্ষে এত বড় বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়টি ভারতের জন্য একটি সতর্কবার্তা হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে টেকসই অর্থনৈতিক কৌশল, ঘরোয়া উৎপাদনে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং রপ্তানি বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ না দিলে চিনের সঙ্গে ভারসাম্যহীন বাণিজ্যিক সম্পর্ক ভারতের অর্থনীতির উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে।
এই পরিস্থিতি বদলাতে হলে কেবল নীতি-নির্ধারকদের নয়, ভারতীয় শিল্প ও ব্যবসায়ীদেরও চিন্তাভাবনার ধরণে পরিবর্তন আনতে হবে। তবেই সম্ভব হবে চিনের সঙ্গে বাণিজ্যিক ভারসাম্য অর্জনের দিকে এগিয়ে যাওয়া।