বাংলার হিংসা কবলিত এলাকার সাংসদ কংগ্রেসের, বিধায়ক কোন দলের?

মুর্শিদাবাদের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি (Murshidabad violence) রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে উত্তাপ ছড়াল। ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের নামে ছড়িয়ে পড়া হিংসার জেরে বাড়ি-ঘর পুড়েছে, প্রাণ গিয়েছে সাধারণ…

Murshidabad violence Mamata Banerjee

মুর্শিদাবাদের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি (Murshidabad violence) রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে উত্তাপ ছড়াল। ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের নামে ছড়িয়ে পড়া হিংসার জেরে বাড়ি-ঘর পুড়েছে, প্রাণ গিয়েছে সাধারণ মানুষের, বহু মানুষ ঘরছাড়া হয়ে আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে কিংবা ত্রাণ শিবিরে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) মুখোমুখি হলেন ইমাম-মোয়াজ্জিনদের সঙ্গে, নেতাজি ইন্ডোরে ডাকা হয় বিশেষ বৈঠক।

Advertisements

বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি অভিযোগের তির ছুঁড়লেন বিরোধীদের দিকে। কটাক্ষ করলেন ইন্ডি জোটের শরিক কংগ্রেসের দিকেও। তাঁর কথায়, “যেখানে হয়েছে সেটা মালদার সিট। কংগ্রেসের জেতা আসন। জেতবার সময় জিতবে। আর দাঙ্গা হলে তাঁরা রাস্তায় বেরোবে না, কন্ট্রোল করবে না। এটুকু আশা আমি করি না।”

   

প্রসঙ্গত, হিংসা কবলিত এলাকার সাংসদ কংগ্রেসের ইশা খান চৌধুরী। তিনি মালদা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই একটি আসনেই রাজ্যে জয়ী হয় কংগ্রেস। সেই কেন্দ্রের অন্তর্গত এলাকাগুলির অনেকটাই পড়ে মুর্শিদাবাদ জেলার মধ্যে। এবং সেখানেই ঘটে লাগাতার অশান্তি, সহিংসতা।

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, সেই এলাকায় বিধায়ক কোন দলের? তার উত্তর আরও জটিল রাজনৈতিক সমীকরণের দিকে ইঙ্গিত করছে। মালদা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ফরাক্কা ও সামশেরগঞ্জ — এই দুই বিধানসভা আসনে বর্তমানে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক রয়েছেন। ফরাক্কায় মনিরুল ইসলাম এবং সামশেরগঞ্জে আমিরুল ইসলাম — দু’জনেই তৃণমূলের টিকিটে নির্বাচিত।

অর্থাৎ, যেখানে হিংসা হয়েছে, সেই এলাকায় সাংসদ কংগ্রেসের হলেও, বিধায়ক তৃণমূলের। এই প্রেক্ষাপটে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যকে ঘিরে শুরু হয়েছে প্রবল রাজনৈতিক চাপানউতোর। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছে, স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ কিংবা তৃণমূলের বিধায়কদের ভূমিকা নিয়ে। তাঁদের মতে, প্রশাসনিক ব্যর্থতা ঢাকতেই মুখ্যমন্ত্রী দায় চাপাতে চাইছেন কংগ্রেসের উপর।

Advertisements

অন্যদিকে, কংগ্রেসও চুপ নেই। রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, ‘‘আমাদের সাংসদের কার্যত কোনও প্রশাসনিক ক্ষমতা নেই। আইন-শৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়। যেখানে তৃণমূলের বিধায়ক রয়েছেন, সেখানে হিংসা ঠেকাতে তাঁদের ভূমিকা কোথায়?’’ একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে প্রশাসনিক বৈঠকে কেবল ইমাম-মোয়াজ্জিনদের ডাকা হলেও, অন্যান্য রাজনৈতিক দল বা সমাজের বিশিষ্টদের অন্তর্ভুক্ত করা হল না কেন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যের রাজনৈতিক তাৎপর্য নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে যখন তিনি ইন্ডি জোটের শরিক কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সরাসরি আঙুল তুলছেন, তখন প্রশ্ন উঠছে, ভবিষ্যতে এই জোটের অভ্যন্তরীণ সমন্বয় কতটা টেকসই থাকবে।

সব মিলিয়ে, একদিকে হিংসার আগুনে পুড়ছে মুর্শিদাবাদ, অন্যদিকে সেই আগুনের রাজনীতিকরণে উত্তপ্ত বঙ্গ রাজনীতি। কার কী ভূমিকা ছিল, কে কতটা দায়িত্ব পালন করেছেন বা ব্যর্থ হয়েছেন, তা নিয়েই এখন চলছে জোর চর্চা। তদন্ত চলছে প্রশাসনিক স্তরে, কিন্তু জনমানসে বারবারই ঘুরে ফিরে আসছে সেই প্রশ্ন— হিংসা কবলিত এলাকার সাংসদ কংগ্রেসের, কিন্তু বিধায়ক যাঁরা? তাঁরা কি হিংসা রুখতে সচেষ্ট ছিলেন?