অ্যানালগ ছেড়ে ডিজিটাল যুগে পা রাখল টুভালু

প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরে আন্তর্জাতিক ডেটলাইন ঘেঁষে থাকা এক ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্র—টুভালু (Tuvalu)। বিশ্ব মানচিত্রে এটি খুঁজে পাওয়াও বেশ কষ্টসাধ্য। জনসংখ্যা মাত্র ১২,০০০। কিন্তু এই সপ্তাহে,…

Tuvalu

প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরে আন্তর্জাতিক ডেটলাইন ঘেঁষে থাকা এক ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্র—টুভালু (Tuvalu)। বিশ্ব মানচিত্রে এটি খুঁজে পাওয়াও বেশ কষ্টসাধ্য। জনসংখ্যা মাত্র ১২,০০০। কিন্তু এই সপ্তাহে, বিশাল এক পদক্ষেপ নিল এই ছোট্ট দেশটি: প্রথমবারের মতো চালু হলো স্বয়ংক্রিয় টেলার মেশিন বা ATM।

Advertisements

ATM আমাদের কাছে বহু পুরনো প্রযুক্তি, ১৯৬৭ সালে প্রথম এটিএম স্থাপিত হয় লন্ডনে বার্কলেস ব্যাংকের মাধ্যমে। ১৯৬৯ সালে আমেরিকায় প্রথম ATM বসানো হয় নিউ ইয়র্কে। সেই থেকে সারা বিশ্বেই এটিএম ব্যাংকিং ব্যবস্থায় এক বিপ্লব এনেছে। বর্তমানে যদিও ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের প্রসারে অনেক জায়গায় এটিএমের ব্যবহার কমছে, তবে টুভালুর জন্য এটি এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

   

দীর্ঘ লাইনের অবসান, দ্রুত সেবার হাতছানি

টুভালুতে ব্যাংকিং ব্যবস্থা এতদিন ছিল সম্পূর্ণরূপে এনালগ বা কাগজ-কলম নির্ভর। ব্যাংকের কাজ শেষ হয়ে যেত দুপুর ২টার মধ্যেই, আর সাধারণ মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন ধরে অপেক্ষা করতে হতো নিজের অর্থ ব্যবস্থাপনার জন্য। এমন পরিস্থিতিতে ফুনাফুতি দ্বীপের ভাইয়াকু গ্রামে পাঁচটি চকচকে ATM বসানো যেন আলোর রশ্মি হয়ে এল।

টুভালুর প্রধানমন্ত্রী ফেলেতি তেও একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে এটিএম উদ্বোধন করেন। উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, স্থানীয় নেতা এবং গভর্নর জেনারেল। প্রধানমন্ত্রী তেও বলেন, “আজকের দিনটি শুধু একটি মাইলফলক নয়, বরং এটি একটি ঐতিহাসিক দিন, যা টুভালু ব্যাংকের নতুন যুগে প্রবেশকে নির্দেশ করে।”

তিন মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প, প্রযুক্তি আনল ফিজি

এটিএম ও পয়েন্ট-অফ-সেল (POS) ব্যবস্থা স্থাপন প্রকল্পটি শুরু হয় ২০২১ সালে। পুরো উদ্যোগে ব্যয় হয়েছে ৩০ লক্ষ অস্ট্রেলিয়ান ডলার। টুভালুর জাতীয় ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক সিয়োসে পেনিতালা তেও জানান, “আমরা এতদিন এনালগ যুগে ছিলাম, এটা আমাদের স্বপ্ন ছিল।” ফিজির প্যাসিফিক টেকনোলজিস লিমিটেড এই প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে।
প্রাথমিকভাবে মোট পাঁচটি এটিএম স্থাপন করা হয়েছে ফুনাফুতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে—যেমন বিমানবন্দর, গ্রামাঞ্চল ও শহরের কেন্দ্রীয় এলাকায়। এ ছাড়া আরও ৩০টি POS টার্মিনাল চালুর অপেক্ষায় রয়েছে।

Advertisements

এখনই ডেবিট কার্ড নয়, প্রিপেইড কার্ডেই সেবা

এটিএমগুলো এখন শুধুমাত্র প্রিপেইড কার্ডের মাধ্যমেই কার্যকর। অর্থাৎ, ব্যাংকের গ্রাহকদের আগে থেকে একটি নির্দিষ্ট কার্ড সংগ্রহ করতে হবে, যার মাধ্যমে তারা এটিএম থেকে টাকা উত্তোলন বা অন্যান্য লেনদেন করতে পারবেন।
তবে ভবিষ্যতে জাতীয় ব্যাংক নিজস্ব ডেবিট কার্ড চালু করার পরিকল্পনা নিয়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক লেনদেন ও অনলাইন শপিংয়ের জন্য ভিসা ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুযোগ চালু করতেও কাজ চলছে।

আরও আরামদায়ক ও সহজতর ব্যাংকিং ব্যবস্থা

জাতীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ৬,০০০ গ্রাহক বর্তমানে ব্যাংকে হিসাব পরিচালনা করেন—অনেকের একাধিক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং চালু হলে লম্বা লাইনের ভোগান্তি কমবে, নগদের ওপর নির্ভরতা কমবে, এবং দূরবর্তী অঞ্চলেও সহজে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে যাবে।

ব্যাংকের আধুনিকীকরণ কেবল একটি প্রযুক্তিগত আপডেট নয়, এটি একটি সামগ্রিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক রূপান্তর। ডিজিটাল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে টুভালুর মানুষ আন্তর্জাতিক অর্থনীতির সঙ্গে আরও সহজে যুক্ত হতে পারবেন।

ডিজিটাল জাগরণ শুরু

এটিএম চালুর মাধ্যমে টুভালু প্রমাণ করল, ছোট দেশ হলেও তাদের স্বপ্ন বড়। যেখানে অনেক দেশ ডিজিটাল ব্যাংকিং-এর পরবর্তী ধাপে আছে, সেখানে টুভালু তার প্রথম ধাপে পা ফেলেছে—তবে দৃঢ় আত্মবিশ্বাস নিয়ে।
একটি এটিএম কেবলমাত্র একটি মেশিন নয়, এটি একটি জানালা—যার মাধ্যমে এক দ্বীপ জাতি নিজেকে যুক্ত করছে বিশ্বের সঙ্গে। তুভালুর এই পদক্ষেপ শুধু দেশটির আর্থিক পরিকাঠামোর উন্নয়ন নয়, বরং এক নতুন যুগের সূচনা।