বুধবারের সকালে মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee) নবান্নে বসছেন রাজ্যের ইমাম ও মোয়াজ্জিনদের সঙ্গে। ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে সম্প্রতি রাজ্যের কিছু অংশে, বিশেষ করে মুর্শিদাবাদে, অশান্তির সৃষ্টি হয়েছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভ্রান্তি ও উদ্বেগের ফলে পথ অবরোধ ও হিংসাত্মক ঘটনার খবর পাওয়া গিয়েছে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর (Mamata Banerjee) হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এখন তিনি চাইছেন, এই অশান্তির পর আর যেন কোনও বিভ্রান্তি বা ভুল বার্তা না ছড়ায়।
মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee) আজ ইমাম-মোয়াজ্জিনদের কাছে স্পষ্ট বার্তা দিতে চান—ওয়াকফ আইন নিয়ে যা বিতর্ক, তা পুরোপুরি কেন্দ্রীয় আইন এবং রাজ্যে তা কার্যকর হবে না। তিনি প্রশ্ন তুলবেন, ‘‘যে আইন কার্যকর হবে না, তা নিয়ে এত বিভ্রান্তি কেন?’’ এই বিষয়টি ইমামদের মাধ্যমে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে তুলে ধরতে চান মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee) । ইমামদের সংগঠন অল ইন্ডিয়া ইমাম অ্যাসোসিয়েশন ইতিমধ্যেই সকলকে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছে। আজকের বৈঠকে কলকাতা ও জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইমাম-মোয়াজ্জিনরা উপস্থিত থাকবেন।
এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য হল শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রেখে জনগণের মধ্যে সঠিক বার্তা পৌঁছে দেওয়া। সরকার ও ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে সমন্বয় আরও মজবুত করাও এই আলোচনার অন্যতম লক্ষ্য।
জগন্নাথ মন্দির নিয়ে বৈঠক
দুপুরের পর মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee) দ্বিতীয় বৈঠকে বসবেন—দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন উপলক্ষে। আগামী ৩০ এপ্রিল অক্ষয় তৃতীয়ার পবিত্র দিনে এই মন্দিরের উদ্বোধন হতে চলেছে। তার আগে ২৯ এপ্রিল ধর্মীয় প্রথা মেনে যজ্ঞের আয়োজন থাকবে। মুখ্যমন্ত্রী ২৭ এপ্রিলই দিঘায় যাবেন এবং ২৮ তারিখে ট্রাস্টি বোর্ডের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
আজকের নবান্নের বৈঠকে প্রশাসনিক স্তরের শীর্ষকর্তারা যেমন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তী, কলকাতা পুলিশ কমিশনার, হিডকোর কর্তা ও ইসকনের প্রতিনিধিরা থাকবেন। উপস্থিত থাকবেন মুখ্যমন্ত্রীর লন্ডন সফরের প্রতিনিধিরাও।
এই বৈঠকে মন্দির উদ্বোধনের প্রতিটি খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা হবে—কে কোন দায়িত্বে থাকবেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থার রূপরেখা, যান নিয়ন্ত্রণ, পর্যটকদের যাতায়াত, এবং উদ্বোধনের দিন ভিড় সামলানোর কৌশল। ২৯ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত দিঘায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা হবে। পর্যটন দপ্তর, পরিবহণ দপ্তর এবং পুলিশ এই পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।
সম্প্রীতির বার্তা
দিঘার জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধন শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবেও রাজ্য সরকার তুলে ধরতে চাইছে। বাংলার বহু ধর্মের মানুষ একসঙ্গে এই অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন—এই বার্তা দিতে চায় মুখ্যমন্ত্রীর সরকার। একদিকে মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বার্তা, অন্যদিকে হিন্দু ধর্মীয় আচারকে ঘিরে একতা ও সহনশীলতার ছবি—এই জোড়া বার্তাই মুখ্যমন্ত্রীর বুধবারের বৈঠকের মূল বিষয়।
সবমিলিয়ে, আজকের দিনটি শান্তি, সংহতি ও প্রশাসনিক প্রস্তুতির এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলস্টোন হয়ে থাকল রাজ্য রাজনীতিতে।