সম্প্রতি, ওয়াকফ আইনের (Waqf Act) সংশোধনী নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে একগুচ্ছ আবেদন জমা পড়েছে। এই আবেদনগুলির মধ্যে মূলত ওয়াকফ আইনের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। আসলে, গত ৮ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়া নতুন ওয়াকফ (Waqf Act) সংশোধনী আইনের বিরোধিতা দেশজুড়ে নানা মহলে চলছে।
বিশেষত, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং জনগণের মধ্যে এই আইন নিয়ে একাধিক মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। আজ, প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে এই আবেদনের শুনানি হতে চলেছে। সেক্ষেত্রে, সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্তের দিকে নজর থাকবে দেশের বিভিন্ন অংশের মানুষদের।
ওয়াকফ আইন সংশোধন: কি পরিবর্তন আনা হয়েছে?
ইতিমধ্যে, গত জানুয়ারি মাসে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সংসদে ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাশ করা হয়। এর পরে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাভের পর এটি আইনে (Waqf Act) পরিণত হয়। এই আইনে মূলত ওয়াকফের সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কিছু নতুন বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। নতুন আইনের (Waqf Act) আওতায়, ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং তাদের ব্যবস্থাপনায় আরো স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা করা হয়েছে।
এছাড়া, ওয়াকফ বোর্ডের (Waqf Act) মধ্যে এমন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, যা রাজ্য সরকারের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করবে। তবে, এই পরিবর্তনগুলির মধ্যে বিরোধীদের অভিযোগ, এই আইন মুসলিম সম্প্রদায়ের স্বার্থের প্রতি নজর না দিয়ে সরকারের বেশি হস্তক্ষেপের পথ প্রশস্ত করছে।
বিরোধীদের দাবী: সাংবিধানিক লঙ্ঘন
বিরোধীরা বিশেষ করে ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা এই ওয়াকফ আইনের (Waqf Act) বিরুদ্ধে একাধিক সাংবিধানিক যুক্তি তুলে ধরছেন। তাঁদের দাবি, এই আইন মুসলিম সম্প্রদায়ের বিশেষ অধিকারকে আঘাত করে এবং সংবিধানের যে নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা উচিত ছিল, তা লঙ্ঘন করছে। এআইএমআইএম (All India Majlis-e-Ittehad-ul-Muslimeen) দলের নেতা এবং লোকসভার সাংসদ আসাউদ্দিন ওয়াইসি এই আইনের (Waqf Act) বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, এই আইন সংবিধানের মৌলিক অধিকার, বিশেষত ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সত্ত্বাধিকারকে খর্ব করছে। এর ফলে, মুসলিম সম্প্রদায় নিজেদের ধর্মীয় ও সামাজিক সম্পত্তি নিয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।
এছাড়া, কিছু আইনি বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নতুন আইন মুসলিম সম্প্রদায়ের সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সরকারকে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণের অধিকার দিয়েছে, যা সংবিধানিকভাবে যুক্তিসংগত নয়। তারা বলছেন, এটি মুসলিম জনগণের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করতে পারে এবং এর ফলে দীর্ঘমেয়াদী আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া
ওয়াকফ আইনের (Waqf Act) বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তিনি ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছেন যে, বাংলায় ওয়াকফ আইন কার্যকর হতে দেওয়া হবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, কেন্দ্রীয় সরকারের এই আইন স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের উপর হস্তক্ষেপ করছে এবং রাজ্য সরকারকে আরও কার্যকরভাবে তাদের অঞ্চলের ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্থাগুলির সঙ্গে সমন্বয় করার সুযোগ পাওয়া উচিত।
সুপ্রিম কোর্টে শুনানি: পরবর্তী পদক্ষেপ কি?
আজ সুপ্রিম কোর্টে ওয়াকফ আইনের (Waqf Act) সংশোধনী আইন নিয়ে একাধিক আবেদন জমা পড়েছে। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বে এই মামলার শুনানি হবে। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে যে, এই আইনের বিরোধিতায় কোনো অন্তর্বর্তী নির্দেশ না দেওয়া হোক, যেন আইন কার্যকর হওয়ার পথে কোনো বাধা সৃষ্টি না হয়। এছাড়া, কোর্টের সামনে সরকারের পক্ষ থেকে একটি ক্যাভিয়েটও দাখিল করা হয়েছে, যাতে বিষয়টির শুনানির (Waqf Act) সময়ে সরকারের বক্তব্য শোনা না গেলে কোন তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া না হয়।
বিচারপতি সঞ্জয় কুমার এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হবে। এই শুনানির ফলাফলে দেশের রাজনীতি এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি সরকারের আচরণকে আরও স্পষ্টভাবে দেখা যেতে পারে। আইনটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজ্যে প্রতিবাদ চলছে এবং সরকারের পক্ষ থেকে এই আইনের বিষয়ে আরও সমঝোতা প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে, ওয়াকফ আইন (Waqf Act) নিয়ে যে তর্ক-বিতর্ক চলছে, তা ভারতের সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে সরকারের প্রস্তাবিত আইনগুলির বৈধতা, গ্রহণযোগ্যতা এবং প্রয়োগ নিয়ে আরও আলোচনা, বিচার এবং সমঝোতার প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত দেয়। আজ সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার পরবর্তী সিদ্ধান্ত কি হয়, তা দেখার জন্য পুরো দেশের চোখ থাকবে।