‘মোদী’র সানন্দ মুহূর্তের পুনরাবৃত্তি! এই রাজ্যে ৯৯ পয়সায় ২১ একর জমি পেল টাটা সংস্থা

অন্ধ্রপ্রদেশকে একটি বৃহৎ প্রযুক্তি কেন্দ্রে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে রাজ্য সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে, টাটা গ্রুপের প্রধান সংস্থা টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস…

Andhra Pradesh Allots Land to TCS for 99 Paise in Vizag

অন্ধ্রপ্রদেশকে একটি বৃহৎ প্রযুক্তি কেন্দ্রে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে রাজ্য সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে, টাটা গ্রুপের প্রধান সংস্থা টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (TCS)-কে বিশাখাপত্তনমে মাত্র ৯৯ পয়সায় ২১.১৬ একর জমি বরাদ্দ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তকে অনেকে টাটা মোটরস-সানন্দ মুহূর্তের সঙ্গে তুলনা করছেন, যা গুজরাটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখ্যমন্ত্রীত্বকালে একটি যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়। ভারতের প্রযুক্তি শিল্পে বাজার মূলধনের দিক থেকে শীর্ষে থাকা টিসিএস-এর এই জমি বরাদ্দ রাজ্যের আইটি খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

   

টাটা মোটরস-সানন্দ মুহূর্ত কী?

এই ঘটনাটি ২০০৮ সালে গুজরাটে ঘটেছিল, যখন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টাটা মোটরসকে সানন্দে মাত্র ৯৯ পয়সায় জমি বরাদ্দ করেছিলেন। এই সিদ্ধান্ত গুজরাটে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং ব্যবসায়িক বিনিয়োগ আকর্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। টাটা মোটরসের সানন্দ প্ল্যান্ট, যা ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, ১১০০ একর জুড়ে বিস্তৃত এবং ৬,০০০-এর বেশি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মী নিয়োগ করেছে। গত বছর মার্চ মাসে টাটা মোটরস ঘোষণা করেছিল যে, তাদের সানন্দ প্ল্যান্ট থেকে ১০ লক্ষতম গাড়ি উৎপাদিত হয়েছে, যা এই সিদ্ধান্তের সাফল্যের প্রমাণ। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং লিন প্রসেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে এই প্ল্যান্ট টাটা মোটরসের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

বিশাখাপত্তনমে টিসিএস-এর জমি বরাদ্দ

মানি কন্ট্রোলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার বিশাখাপত্তনমের আইটি হিল নম্বর ৩-এ ২১.১৬ একর জমি টিসিএস-কে মাত্র ৯৯ পয়সায় ইজারা দিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত সম্ভবত ১৫ এপ্রিল মন্ত্রিসভার বৈঠকে চূড়ান্ত হয়েছে। রাজ্যের আইটি ও ইলেকট্রনিক্স মন্ত্রী নারা লোকেশ গত বছর অক্টোবরে মুম্বাইয়ে টাটা গ্রুপের সদর দফতরে গিয়ে টিসিএস-এর কাছে এই প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। তিনি অন্ধ্রপ্রদেশে একটি বৃহৎ উন্নয়ন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য টিসিএস-কে উৎসাহিত করেছিলেন। গত কয়েক মাস ধরে রাজ্য সরকার এবং টিসিএস-এর মধ্যে একাধিক আলোচনার পর এই প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে।

একজন সরকারি কর্মকর্তা মানি কন্ট্রোলকে বলেন, “এটি আমাদের আইটি খাতের সানন্দ মুহূর্ত। আমরা চাই বিশাখাপত্তনম প্রতিটি প্রযুক্তি সংস্থার মানচিত্রে স্থান পাক।” টিসিএস আগামী ৯০ দিনের মধ্যে বিশাখাপত্তনমে একটি ভাড়া ভবন থেকে কার্যক্রম শুরু করবে, যখন স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ চলবে। স্থায়ী ক্যাম্পাসটি নির্মাণে ২ থেকে ৩ বছর সময় লাগতে পারে এবং এটি ১০,০০০ কর্মীকে স্থান দেবে। টিসিএস এই উন্নয়ন কেন্দ্রে ১,৩৭০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে, যা প্রায় ১২,০০০ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।

অন্ধ্রপ্রদেশের আইটি লক্ষ্য

এই পদক্ষেপ রাজ্য সরকারের আইটি খাতে ৫ লক্ষের বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যের অংশ। টিসিএস ভারতের বৃহত্তম নিয়োগকর্তাদের মধ্যে একটি এবং ক্যাম্পাস নিয়োগের ক্ষেত্রেও শীর্ষে রয়েছে। ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত টিসিএস-এর কর্মী সংখ্যা ছিল ৬,০৭,৯৭৯, যা এটিকে তার প্রতিযোগীদের মধ্যে শীর্ষে রেখেছে। বিশাখাপত্তনমে টিসিএস-এর উপস্থিতি রাজ্যে অন্যান্য প্রযুক্তি সংস্থাগুলিকেও আকর্ষণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে উইপ্রো এবং টেক মাহিন্দ্রার মতো শীর্ষস্থানীয় আইটি সংস্থাগুলি শহরে কাজ করছে এবং গুগল ক্লাউড সম্প্রতি বিশাখাপত্তনমে একটি ডেটা সিটি স্থাপনের জন্য রাজ্য সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে।

সানন্দ মুহূর্তের সঙ্গে তুলনা

সানন্দে টাটা মোটরসের জন্য ৯৯ পয়সায় জমি বরাদ্দের ঘটনা গুজরাটের স্বয়ংচালিত খাতে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হয়। এই সিদ্ধান্ত গুজরাটে শিল্প বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করেছিল। একইভাবে, অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার আশা করছে যে টিসিএস-এর জন্য এই জমি বরাদ্দ বিশাখাপত্তনমকে একটি প্রধান আইটি হাবে রূপান্তরিত করবে। মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু, যিনি সম্প্রতি দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে অংশ নিয়েছিলেন, জোর দিয়ে বলেছেন, “টিসিএস-এর ইউনিট স্থাপনের মাধ্যমে বিশাখাপত্তনম একটি আইটি বিপ্লবের সাক্ষী হবে।”

অন্ধ্রপ্রদেশের এই সাহসী সিদ্ধান্ত প্রযুক্তি শিল্পে রাজ্যের প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব এবং বিনিয়োগ আকর্ষণের প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে। টিসিএস-এর বিশাখাপত্তনম ক্যাম্পাস শুধু কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে না, বরং রাজ্যের প্রযুক্তি ইকোসিস্টেমকে শক্তিশালী করবে। এই ‘সানন্দ মুহূর্ত’ অন্ধ্রপ্রদেশের আইটি খাতের জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে, যা বিশাখাপত্তনমকে ভারতের প্রযুক্তি মানচিত্রে একটি উজ্জ্বল নাম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।