আয়কর রিফান্ডে বিপদ! আগের ট্যাক্স বকেয়া কাটবে বিভাগ, জানুন বিস্তারিত

আয়কর বিভাগ সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন করদাতাকে ইমেল পাঠিয়ে সতর্ক করেছে যে, তাদের আয়কর রিটার্ন (Income Tax Refund) যদি এখনো মূল্যায়ন (Assessment) বা পুনর্মূল্যায়নের (Re-assessment) প্রক্রিয়াধীন…

Income Tax Refund

আয়কর বিভাগ সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন করদাতাকে ইমেল পাঠিয়ে সতর্ক করেছে যে, তাদের আয়কর রিটার্ন (Income Tax Refund) যদি এখনো মূল্যায়ন (Assessment) বা পুনর্মূল্যায়নের (Re-assessment) প্রক্রিয়াধীন থাকে, তবে তাদের আয়কর ফেরত (Refund) আটকে রাখা হবে। এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে আয়কর আইনের ১৯৬১ সালের ধারা ২৪৫(২)-এর আওতায়।

ধারা ২৪৫-এর ব্যাখ্যা

আয়কর আইনের ধারা ২৪৫ অনুযায়ী, কোনও করদাতার পূর্ববর্তী করবর্ষে কর বকেয়া থাকলে এবং বর্তমান করবর্ষে তার রিফান্ড পাওয়ার কথা থাকলে, আয়কর বিভাগ সেই রিফান্ডের টাকা বকেয়া করের সঙ্গে সমন্বয় করতে পারে। এই ক্ষেত্রে, করদাতাকে অবশ্যই আগেই জানানো হয় এবং তার প্রতিক্রিয়া চাওয়া হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধারা অনুসারে রিফান্ড রোধের কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই, অর্থাৎ যেকোনো সময় এই ধারা কার্যকর হতে পারে।

২০২৫ সালের ১১ মার্চ তারিখে আয়কর বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর একটি ইমেল পাঠান যেখানে বলা হয়েছে, “আপনার মামলায় যেহেতু মূল্যায়ন / পুনর্মূল্যায়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, তাই ধারা ২৪৫(২)-এর আওতায় সংশ্লিষ্ট আয়কর অফিসারের (Jurisdictional Assessing Officer – JAO) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপনার রিফান্ড মুক্তি বা আটকে রাখা হবে।”

কেন এমন পদক্ষেপ?

এই ধরনের পদক্ষেপের পেছনে মূল কারণ হল আগের বছরের কর বকেয়া এবং চলতি বছরের রিফান্ডের সম্ভাব্য সমন্বয়। আয়কর বিভাগ সন্দেহ করে যে, সেন্ট্রালাইজড প্রসেসিং সেন্টার (CPC) যখন ITR প্রক্রিয়াকরণ করে, তখন কিছু মামলায় এমন পরিস্থিতি দেখা যায় যেখানে ফেরতের পরিমাণটি প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। তখন সেই রিটার্নটি CPC-এর পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট জুরিসডিকশনাল অ্যাসেসিং অফিসারের কাছে পাঠানো হয়, যিনি আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

ITR দায়ের ও পর্যালোচনার প্রক্রিয়া

করদাতারা যখন আয়কর রিটার্ন জমা দেন, তখন সেটি প্রথমে CPC দ্বারা প্রক্রিয়া করা হয়। এটি একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা যা নির্ধারিত আইনি পরিকাঠামো অনুসরণ করে। যেসব ক্ষেত্রে CPC কোনও অসঙ্গতি বা সম্ভাব্য ট্যাক্স দাবি দেখতে পায়, সেসব রিটার্ন নিরীক্ষার জন্য স্থানীয় AO-এর কাছে পাঠানো হয়। সেখানেই নির্ধারিত হয়, করদাতার রিফান্ড হবে কি না এবং কতটা হবে।

Advertisements

নোটিশের প্রতিক্রিয়া জানাতে ২১ দিনের সময়

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই ধরনের নোটিশ সাধারণত তখনই পাঠানো হয়, যখন আগের বছরের কোনও কর বকেয়া থাকে এবং বিভাগ সেটিকে চলতি বছরের রিফান্ডের সঙ্গে সমন্বয় করতে চায়। তবে করদাতাকে তাদের বক্তব্য পেশ করার জন্য ২১ দিনের একটি সময়সীমা দেওয়া হয়। এই সময়ের মধ্যে করদাতাকে নিজেদের অবস্থান জানাতে হয় এবং কোনও ভুল থাকলে সেটিও সংশোধনের সুযোগ পাওয়া যায়।

কী করণীয় করদাতাদের?

১. ইমেল মনোযোগ সহকারে পড়ুন: অনেক সময় করদাতারা সরকারি ইমেল উপেক্ষা করেন। তবে এখন থেকে করদাতাদের উচিত আয়কর বিভাগের ইমেল নিয়মিত দেখা এবং সময়মতো প্রতিক্রিয়া জানানো।
২. আউটস্ট্যান্ডিং ট্যাক্স যাচাই করুন: আগের বছরের কোনও কর বকেয়া রয়েছে কি না তা ইনকাম ট্যাক্স পোর্টালে গিয়ে দেখে নেওয়া উচিত।
৩. যথাযথ উত্তর পাঠান: ২১ দিনের মধ্যে নির্দিষ্ট ফর্মে ও প্রক্রিয়ায় উত্তর পাঠানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে রিফান্ড আটকে থাকার সম্ভাবনা কমে যায়।
৪. প্রয়োজনে ট্যাক্স অ্যাডভাইজারের সাহায্য নিন: যারা এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্পষ্ট নন, তারা কোনো অভিজ্ঞ ট্যাক্স কনসালট্যান্ট বা CA-এর সাহায্য নিতে পারেন।

আয়কর বিভাগের এই নতুন পদক্ষেপ অনেক করদাতার জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে করদাতারা যদি সময়মতো তথ্য যাচাই করেন এবং বিভাগকে প্রয়োজনীয় উত্তর দেন, তবে রিফান্ড আটকে থাকার সম্ভাবনা কমে যাবে। সর্বোপরি, করদাতাদের উচিত আয়কর আইনের বিধান সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং সংশ্লিষ্ট নোটিশের ক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।