সাম্প্রদায়িক কাজিয়ার আবহে দলিত ভোটব্যাঙ্ক কার দখলে ?

Who Holds the Dalit Vote Bank Amid Communal Tensions? পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক মঞ্চে দলিত ভোটব্যাঙ্ককে (dalit vote bank) কেন্দ্র করে তীব্র বিতর্ক ও বক্তব্যের ঝড় চলছে।…

dalit vote bank

Who Holds the Dalit Vote Bank Amid Communal Tensions?

পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক মঞ্চে দলিত ভোটব্যাঙ্ককে (dalit vote bank) কেন্দ্র করে তীব্র বিতর্ক ও বক্তব্যের ঝড় চলছে। সম্প্রতি বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য, যেখানে তিনি রাজ্যে সাম্প্রদায়িক অশান্তি ও হিংসার জন্য তৃণমূল কংগ্রেস সরকারকে দায়ী করেছেন, তা নতুন করে দলিত সম্প্রদায়ের ভোটের গুরুত্বকে সামনে এনেছে। তিনি দাবি করেছেন, রাজ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে এবং দলিত সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিজেপি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তবে, তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, বিজেপি দলিত ভোট পাওয়ার জন্য সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টি করছে। এই বিতর্কের মাঝে কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীও ২৬,০০০ চাকরি হারানো শিক্ষকদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সমর্থন জানিয়েছেন, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দলিত সম্প্রদায়ের।

দলিত ভোটের (dalit vote bank) গুরুত্ব

পশ্চিমবঙ্গে দলিত (dalit vote bank) সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা প্রায় ২৩.৫%। রাজ্যের অনেক বিধানসভা কেন্দ্রে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায়, দলিত ভোটাররা নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাজনৈতিক দলগুলো এই ভোটব্যাঙ্ককে আকর্ষণ করতে নানা কৌশল গ্রহণ করছে। বিজেপি দলিত সম্প্রদায়ের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের প্রচার করছে, যেমন মুদ্রা যোজনা, উজ্জ্বলা যোজনা এবং

এসসি উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ ঋণ। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস তাদের সামাজিক কল্যাণ প্রকল্প, যেমন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার এবং স্বাস্থ্য সাথী, দলিত সম্প্রদায়ের মধ্যে জনপ্রিয় করার চেষ্টা করছে। কংগ্রেসও শিক্ষকদের চাকরি হারানোর ইস্যুতে দলিত সম্প্রদায়ের অধিকারের পক্ষে কথা বলে তাদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টায় রয়েছে।

রাজনৈতিক বক্তব্যের ঝড়

শুভেন্দু অধিকারী সম্প্রতি দাবি করেছেন, তৃণমূল সরকারের আমলে দলিত (dalit vote bank) সম্প্রদায়ের উপর হামলা বেড়েছে। তিনি বলেন, “রাজ্যে দলিতরা নিরাপদ নন। তৃণমূলের শাসনে সাম্প্রদায়িক হিংসা বাড়ছে, এবং দলিত সম্প্রদায় এর শিকার হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে দলিতদের নিরাপত্তা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করবে। তবে, তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, “বিজেপি দলিত ভোট পাওয়ার জন্য মিথ্যা অভিযোগ ছড়াচ্ছে। আমাদের সরকার সকল সম্প্রদায়ের জন্য কাজ করছে।”

অধীর রঞ্জন চৌধুরীর সাম্প্রতিক বক্তব্যও এই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তিনি বলেন, “২৬,০০০ শিক্ষক তাদের চাকরি হারিয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই দলিত সম্প্রদায়ের। সরকার তাদের সমস্যার সমাধানে উদাসীন। আমরা তাদের পাশে আছি।” তিনি শিক্ষকদের দিল্লিতে প্রতিবাদে সমর্থন জানিয়ে কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। এই বক্তব্য দলিত সম্প্রদায়ের মধ্যে কংগ্রেসের প্রভাব বাড়ানোর কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সাম্প্রদায়িক হিংসার অভিযোগ

রাজ্যে সাম্প্রদায়িক হিংসার অভিযোগ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র বাকযুদ্ধ চলছে। বিজেপি দাবি করছে, তৃণমূলের শাসনে দলিত ও হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা বেড়েছে। তারা মুর্শিদাবাদের জাফরাবাদে হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাসের হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক হিংসার উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরছে। অন্যদিকে, তৃণমূল বলছে, এই ঘটনাগুলো ব্যক্তিগত শত্রুতার ফল, এবং বিজেপি এগুলোকে সাম্প্রদায়িক রঙ দিয়ে ভোটের রাজনীতি করছে।

ওয়াকফ আইন থেকে ‘ডান্ডা রাজনীতি’—বাংলার উত্তাপে জ্বলে উঠলেন যোগী

Advertisements

দলিত ভোটের কৌশল

দলিত ভোটব্যাঙ্ককে আকর্ষণ করতে রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করছে। বিজেপি রাজ্যে দলিত সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষ আউটরিচ কর্মসূচি চালাচ্ছে, যেমন এসসি মোর্চার মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকায় সভা ও প্রচার।

তারা বাবাসাহেব আম্বেদকরের জন্মজয়ন্তী ও সংবিধান দিবসে বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দলিত সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছে। তৃণমূল তাদের দলিত নেতাদের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে প্রচার চালাচ্ছে এবং সরকারি প্রকল্পের সুবিধা দলিত সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দাবি করছে। কংগ্রেস শিক্ষা ও চাকরির ইস্যুতে দলিত সম্প্রদায়ের অধিকারের কথা তুলে ধরে তাদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টায় রয়েছে।

সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব

দলিত ভোট নিয়ে এই রাজনৈতিক বক্তব্য রাজ্যের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। অনেকে মনে করছেন, দলিত সম্প্রদায়কে কেবল ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে দেখা হচ্ছে, তাদের প্রকৃত সমস্যার সমাধানে কেউ আন্তরিক নয়। একজন দলিত স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের সময় আমাদের কথা বলে, কিন্তু ক্ষমতায় এলে আমাদের ভুলে যায়। আমরা চাই শিক্ষা, চাকরি আর নিরাপত্তা।”

সামাজিক মাধ্যমে এই বিতর্ক তীব্র আকার নিয়েছে। অনেকে বিজেপির অভিযোগকে সমর্থন করলেও, তৃণমূলের সমর্থকরা বলছেন, এটি ভোটের জন্য সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা। কংগ্রেসের শিক্ষকদের সমর্থনও দলিত সম্প্রদায়ের মধ্যে তাদের অবস্থান শক্ত করার কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

দলিত ভোটব্যাঙ্ক পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আগামী নির্বাচনে এই ভোট কোন দিকে যাবে, তা নির্ভর করবে দলগুলোর প্রতিশ্রুতি ও কাজের উপর। বিজেপি যেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প ও সাম্প্রদায়িক বিষয়ে জোর দিচ্ছে, সেখানে তৃণমূল রাজ্যের উন্নয়ন ও সম্প্রীতির কথা বলছে। কংগ্রেস শিক্ষা ও চাকরির ইস্যুতে দলিত সম্প্রদায়ের পাশে থাকার চেষ্টা করছে। তবে, দলিত সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জন করতে হলে কেবল বক্তব্য নয়, প্রকৃত কাজের প্রয়োজন।

পশ্চিমবঙ্গে দলিত ভোটের জন্য রাজনৈতিক বক্তব্যের এই দড়ি টানাটানি রাজ্যের রাজনীতিকে নতুন মোড় দিয়েছে। শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, তৃণমূলের পাল্টা বক্তব্য এবং অধীর রঞ্জন চৌধুরীর শিক্ষকদের সমর্থন দলিত সম্প্রদায়কে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর কৌশলকে স্পষ্ট করছে। তবে, এই বক্তব্যের ঝড় কতটা দলিত সম্প্রদায়ের প্রকৃত উন্নয়নে অবদান রাখবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর উপর এখন দায়িত্ব, তারা কেবল ভোটের জন্য নয়, দলিত সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা, শিক্ষা ও উন্নয়নের জন্য কাজ করুক।