‘হিন্দুরা মরুক’ দিলীপের মন্তব্য ঘিরে উত্তাল রাজনীতি, ভিডিয়ো সামনে এনে খোঁচা দেবাংশুর

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ফের একবার বিতর্কের কেন্দ্রে বিজেপির ফায়ারব্র্যান্ড নেতা দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরে কৃষ্ণনগর কেন্দ্র থেকে বিজেপির পরাজয়ের প্রেক্ষিতে দিলীপ…

"Debangshu Attacks Dilip Ghosh Over His Old 'Let Hindus Die' Remark

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ফের একবার বিতর্কের কেন্দ্রে বিজেপির ফায়ারব্র্যান্ড নেতা দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরে কৃষ্ণনগর কেন্দ্র থেকে বিজেপির পরাজয়ের প্রেক্ষিতে দিলীপ ঘোষের একটি পুরনো মন্তব্য ঘিরে নতুন করে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। ওই মন্তব্যে তিনি বলেছিলেন, “হিন্দুরা মরুক না। আমাদের কোনও মায়া নেই।”

সেই বিতর্কিত বক্তব্যের ভিডিও সম্প্রতি সামনে আনেন তৃণমূলের মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্য (Debangshu Bhattacharya)। তারপর থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে শুরু হয়েছে চরম চাপানউতোর।

দেবাংশু Debangshu Bhattacharya) তাঁর পোস্টে লেখেন, “ভাইরাল হওয়া মেসেজটি কতটা সত্যি সেটা আস্তে আস্তে প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে ঘটনা পরম্পরায়!” তিনি ভিডিওটির শেষ অংশ শোনার অনুরোধ করে বলেন, এই বক্তব্য বিজেপির প্রকৃত মনোভাবেরই প্রতিফলন। তাঁর দাবি, বিজেপির কাছে হিন্দু-মুসলিম বিভাজন শুধুই রাজনৈতিক লাভের হাতিয়ার। যখন ভোট না মেলে, তখন হিন্দুদের প্রতিও কোনও সহানুভূতি থাকে না।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কৃষ্ণনগর কেন্দ্র থেকে পরাজয়ের পর দিলীপ ঘোষ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, “নির্মম হোন। হিন্দু অনেক মরেছে, আরও কিছু মরুক।” এই বক্তব্য ঘিরে একদিকে রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়েছে, অন্যদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া।

দিলীপ ঘোষের (Dilip Ghosh)। ঘনিষ্ঠদের একাংশের দাবি, ওই মন্তব্য পুরোপুরি রাজনৈতিক হতাশা থেকে বলা। বিজেপি দীর্ঘদিন ধরে হিন্দু সমাজের পক্ষে নানা উদ্যোগ নিয়েছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রত্যাশামতো ভোট না পাওয়ার হতাশা থেকেই দিলীপ ঘোষ ওই মন্তব্য করেছিলেন। অনেকের মতে, এটি তাঁর “আভিমান” প্রকাশ ছাড়া কিছু নয়।

অন্যদিকে, সমালোচকদের মতে, একজন জাতীয় নেতার মুখ থেকে এমন মন্তব্য আসা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। এতে সমাজে বিভাজনের বার্তা যায়। তৃণমূল নেতৃত্বও এই ইস্যুতে বিজেপিকে (Dilip Ghosh)। একহাত নিয়েছে। তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপির হিন্দু প্রেম আসলে মুখোশ। ভেতরে রয়েছে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতি।

Advertisements

এই বিতর্কের মধ্যেই দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। আরও একবার হিন্দুদের উপর হামলা নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সরব হন। তিনি বলেন, “মুর্শিদাবাদে দু’দিন ধরে যেভাবে হিন্দুদের বাড়িঘর লুঠ হয়েছে, কোটি টাকার সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে, রাজ্য সরকার চুপ ছিল। বিএসএফ নিয়ন্ত্রণে না আনলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হিন্দুদের শেষ করে দিতে চাইছেন।” এই বক্তব্য আবার নতুন করে উসকে দিয়েছে রাজনৈতিক উত্তেজনা।

সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা মতামত দেখা যাচ্ছে। কেউ লিখছেন, “দিলীপ ঘোষ যা বলেছেন, সেটা হিন্দুদের প্রতি গভীর হতাশা থেকেই এসেছে।” আবার কেউ লিখছেন, “বাঙালি হিন্দুরা সাবধান। বিজেপির মুখোশ এখন খুলে গেছে।” ‘সনাতনী হিন্দু’ নামের একটি প্রোফাইল থেকে লেখা হয়েছে, “হিন্দুদের দুঃখ দেখেই এভাবে কথা বেরিয়ে আসে।”

এই বিতর্ককে কেন্দ্র করে রাজ্যে বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে উঠেছে। একদিকে বিজেপি দাবি করছে তারা হিন্দুদের পক্ষে কাজ করছে, অন্যদিকে তৃণমূল বলছে, বিজেপির এই হিন্দু প্রেম আসলে সুবিধাবাদী রাজনীতি ছাড়া কিছু নয়।

বিতর্কিত মন্তব্যের সত্যতা যাচাই না হলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের বক্তব্য রাজ্যের রাজনীতিকে আরও মেরুকরণে ঠেলে দিচ্ছে। সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন, তার আগে এই ইস্যু ভোটের ময়দানে কতটা প্রভাব ফেলবে, সেটাই এখন দেখার।