Supreme Court Orders License Cancellation Over Newborn Trafficking
সুপ্রিম কোর্ট (supreme court) সোমবার শিশু পাচারের মতো গুরুতর অপরাধ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং এই সমস্যা মোকাবিলায় কঠোর নির্দেশিকা জারি করেছে। কোর্টের মতে, কোনো হাসপাতাল থেকে নবজাতক উধাও হলে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সেই হাসপাতালের লাইসেন্স স্থগিত করা উচিত।
এই মন্তব্য এসেছে শিশু পাচার মামলায় অভিযুক্তদের জামিনের বিরুদ্ধে একটি আবেদনের শুনানির সময়। বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চ এই মামলায় উত্তরপ্রদেশ সরকার এবং এলাহাবাদ হাইকোর্টের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেছে।
শিশু পাচার মামলায় হাইকোর্টের ভূমিকায় ক্ষোভ
বিচারপতি পারদিওয়ালার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিরুদ্ধে জামিনের আবেদনগুলো “অবহেলার সঙ্গে” মোকাবিলা করার অভিযোগ তুলেছে। তারা বলেন, জামিন দেওয়ার সময় হাইকোর্টের ন্যূনতম শর্ত হিসেবে অভিযুক্তদের প্রতি সপ্তাহে থানায় হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এই শর্ত না থাকায় অনেক অভিযুক্ত এখন পলাতক।
“এই অভিযুক্তরা সমাজের জন্য গুরুতর হুমকি। পুলিশ সব অভিযুক্তের হদিশ হারিয়েছে,” বলেন বিচারপতি পারদিওয়ালা। তিনি উত্তরপ্রদেশ সরকারের ভূমিকায়ও হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “কোনো আপিল করা হয়নি, কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।”
মামলার একটি ঘটনায় দেখা গেছে, এক অভিযুক্ত পুত্রসন্তানের আকাঙ্ক্ষায় চার লাখ টাকায় একটি শিশু কিনেছিলেন। বিচারপতি পারদিওয়ালা বলেন, “পুত্র চাই বলে পাচারকৃত শিশু নেওয়া যায় না। তিনি জানতেন শিশুটি চুরি করা।” কোর্ট সমস্ত অভিযুক্তকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছে এবং তাদের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর কথা বলেছে।
কঠোর নির্দেশিকা জারি
সুপ্রিম কোর্ট (supreme court) শিশু পাচার মোকাবিলায় বিস্তারিত নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। বিচারপতি পারদিওয়ালা বলেন, “এই রায়ে শিশু পাচার রোধে বিশদ সুপারিশ রয়েছে। রাজ্য সরকারগুলোকে এই নির্দেশ অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, দেশের সমস্ত হাইকোর্টকে শিশু পাচার মামলার বিচারের অগ্রগতির তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। “এই নির্দেশ বাস্তবায়নে কোনো শৈথিল্য দেখানো হলে তা গুরুতরভাবে নেওয়া হবে এবং আদালত অবমাননার কার্যক্রম শুরু করবে,” তিনি হুঁশিয়ারি দেন।
কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, সব অভিযুক্তকে এক সপ্তাহের মধ্যে অভিযোগ গঠন করতে হবে। যদি কেউ পলাতক থাকে, তবে ট্রায়াল কোর্টকে নন-বেলেবল ওয়ারেন্ট জারি করতে হবে। উপস্থিত অভিযুক্তদের বিচার কোনো বিলম্ব ছাড়াই চলবে।
হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিলের নির্দেশ (supreme court)
শিশু পাচারের ঘটনায় হাসপাতালগুলোর ভূমিকা নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি পারদিওয়ালা বলেন, “কোনো হাসপাতাল থেকে নবজাতক পাচার হলে প্রথম পদক্ষেপ হবে হাসপাতালের লাইসেন্স স্থগিত করা। কোনো মহিলা প্রসবের জন্য হাসপাতালে এসে শিশু হারালে, লাইসেন্স বাতিলই প্রথম পদক্ষেপ।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, হাসপাতালগুলোর উপর কঠোর নজরদারি প্রয়োজন, কারণ অনেক ক্ষেত্রে এই ধরনের অপরাধে হাসপাতালের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
EMI-তে বড় সাশ্রয়! পয়লা বৈশাখে SBI নিয়ে এল গ্রাহকদের জন্য দারুন খবর
শিশু পাচারের ভয়াবহতা
বিচারপতি পারদিওয়ালা শিশু পাচারের মানসিক প্রভাব তুলে ধরে বলেন, “শিশুর মৃত্যুতে পিতামাতার যে বেদনা হয়, তা শিশু পাচারের ক্ষেত্রে ভিন্ন। মৃত শিশু ঈশ্বরের কাছে থাকে, কিন্তু পাচার হওয়া শিশু পড়ে থাকে অপরাধী চক্রের হাতে।” তিনি অভিভাবকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, শিশুদের নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো অবহেলা করা যাবে না।
জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরোর (এনসিআরবি) তথ্য অনুযায়ী, ভারতে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ২,০০০ শিশু পাচারের ঘটনা রিপোর্ট হয়। ২০২২ সালে এমন ২,২৫০টি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে তেলঙ্গানা, মহারাষ্ট্র এবং বিহারে সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে। এই পরিসংখ্যান শিশু পাচারের ভয়াবহতা তুলে ধরে এবং এই অপরাধ রোধে আরও কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত দেয়।
সমাজ ও সরকারের ভূমিকা
সুপ্রিম কোর্টের (supreme court) এই রায় শিশু পাচারের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বার্তা দিয়েছে। শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার, প্রশাসন এবং সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। কোর্টের নির্দেশে হাসপাতালগুলোর উপর কঠোর নজরদারি এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এই নির্দেশিকা বাস্তবায়ন করতে পারলে শিশু পাচারের মতো গুরুতর অপরাধ অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এই রায়ের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। কংগ্রেস নেতারা বলেছেন, শিশু পাচার রোধে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলোর আরও তৎপরতা প্রয়োজন। বিজেপি নেতারা কোর্টের নির্দেশকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, তারা এই নির্দেশ বাস্তবায়নে সরকারের পাশে থাকবে। তবে, উত্তরপ্রদেশ সরকারের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের এই রায় শিশু পাচারের বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিলের নির্দেশ এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর বিচারের আহ্বান এই অপরাধের মূলোৎপাটনে সহায়ক হবে। শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা শুধু সরকারের নয়, সমাজের প্রতিটি স্তরের দায়িত্ব। এই রায় আমাদের সকলকে সতর্ক করে দেয় যে, শিশু পাচারের মতো অপরাধের বিরুদ্ধে একটি সম্মিলিত লড়াই প্রয়োজন।