Wakf Act protest West Bengal: মুর্শিদাবাদের পর এবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনের প্রতিবাদে নতুন করে হিংসার ঘটনা ঘটেছে। এই আইন, যা মুসলিম সম্প্রদায়ের দাতব্য সম্পত্তি পরিচালনার নিয়ম নিয়ন্ত্রণ করে, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোমবার ভাঙড় এলাকায় ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ) কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের তীব্র সংঘর্ষ হয়। এই ঘটনায় পুলিশের মোটরবাইক ও একটি বাসে আগুন দেওয়া হয় এবং বাসের সামনের কাচ ভেঙে ফেলা হয়। সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য এবং অন্তত একজন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, আইএসএফ কর্মীরা কলকাতার রামলীলা ময়দানে একটি প্রতিবাদ সভায় যোগ দিতে যাচ্ছিলেন, যেখানে দলের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী বক্তৃতা দেওয়ার কথা ছিল। তবে পুলিশ জানিয়েছে, এই সভার জন্য কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। তারপরও সভা অনুষ্ঠিত হয়, এবং নওশাদ সিদ্দিকী এই নতুন আইনকে “মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ এবং সংবিধানের প্রতি অপমান” বলে অভিহিত করেন। পরিস্থিতি তখন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যখন বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করে। একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হয়েছে।
আইএসএফ পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে এই আইন কার্যকর না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাহলে তাঁদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে কেন বাধা দেওয়া হল? এই ঘটনা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে, বিশেষ করে আগামী বছরের নির্বাচনের আগে বিরোধী দল বিজেপি এই ঘটনাকে হাতিয়ার করতে পারে।
এর আগে, মুর্শিদাবাদ জেলায় ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে হিংসাত্মক ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয় এবং রেলপথ অবরোধ, গাড়িতে আগুন দেওয়া ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২০০-র বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে মুর্শিদাবাদের হিংসার বিষয়টি উত্থাপিত হয়। একটি পিটিশনে এই ঘটনার তদন্ত কেন্দ্রীয় সংস্থার মাধ্যমে করার দাবি জানানো হয়। এছাড়া, রাজ্য সরকারের কাছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যর্থতার কারণ ব্যাখ্যা করার দাবিও উঠেছে।
ওয়াকফ (সংশোধনী) বিলটি চলতি মাসে সংসদে পাস হয়েছে। তীব্র বিতর্কের মধ্যে এই বিলে ৩০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আলোচনা হয়। নতুন আইনে রাজ্য ওয়াকফ বোর্ড এবং কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিলে দুজন অমুসলিম সদস্যের মনোনয়ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া, দানকারীদের পাঁচ বছর ধরে “প্র্যাকটিসিং মুসলিম” হিসেবে নিজেদের প্রত্যয়ন করতে হবে। এই শর্তগুলো মুসলিম সম্প্রদায় এবং বিরোধী দলগুলোর মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, এই আইনের মাধ্যমে কেন্দ্র ওয়াকফ বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে। তবে, কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী রিজিজু এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ওয়াকফ বোর্ডের ব্যবস্থাপনা, সৃষ্টি এবং সুবিধাভোগী সম্পূর্ণভাবে মুসলিম সম্প্রদায়ের হাতেই থাকবে।
এই নতুন আইনের বিরুদ্ধে ১৫টি পিটিশন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হবে আগামী ১৬ এপ্রিল। এদিকে, ভাঙড়ের সংঘর্ষের ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্বিগ্ন। বাসন্তী হাইওয়েতে যান চলাচল ব্যাহত হওয়ায় অনেকেই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে, আইএসএফ কর্মীরা তাদের প্রতিবাদ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।
এই ঘটনা রাজ্যের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। স্থানীয় নেতা এবং সমাজকর্মীরা শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে, পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পুলিশের নজরদারি অব্যাহত থাকবে বলে জানা গেছে।