ভাঙড়ের (Bhangar) বাসন্তী হাইওয়ের বৈরামপুর এলাকায় আজ তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে যখন পুলিশ ওয়াকফ (সংশোধনী) বিলের প্রতিবাদে শিয়ালদহ রামলীলা ময়দানে যাওয়ার পথে ভাঙড়, মিনাখাঁ, এবং সন্দেশখালি থেকে আগত সাধারণ মানুষ ও আইএসএফ (ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট) কর্মীদের গাড়ি আটকে দেয়। এই ঘটনার পর বাসন্তী হাইওয়েতে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন আইএসএফ কর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়, এবং একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওয়াকফ (সংশোধনী) বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে সন্দেশখালি, মিনাখাঁ, এবং ভাঙড়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে সাধারণ মানুষ ও আইএসএফ কর্মীরা শিয়ালদহ রামলীলা ময়দানে একটি বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু বৈরামপুরে পুলিশ তাঁদের গাড়ি আটকে দিলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আইএসএফ কর্মীরা অভিযোগ করেন, পুলিশ তাঁদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে বাধা দিচ্ছে। এর প্রতিবাদে তাঁরা বাসন্তী হাইওয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।
এই অবরোধ শুধু বৈরামপুরেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। বৈরামপুরের পর ভোজেরহাট তিন রাস্তার মোড়েও আইএসএফ কর্মীরা রাস্তা অবরোধ করেন। ভোজেরহাটে পুলিশ গার্ডরেল দিয়ে এলাকা ঘিরে ফেললেও আইএসএফ কর্মীরা সেখানে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু করেন। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা গার্ডরেল ভাঙার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে ওঠে। পুলিশের সঙ্গে তাঁদের ধস্তাধস্তি শুরু হয়, এবং জোর করে গার্ডরেল ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টার সময় পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এই লাঠিচার্জে আইএসএফ কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। স্থানীয়দের মতে, লাঠিচার্জে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন, তবে এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাওয়া যায়নি।
পুলিশ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীদের রাস্তা অবরোধের কারণে বাসন্তী হাইওয়েতে যান চলাচল ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছি। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা গার্ডরেল ভাঙার চেষ্টা করলে আমাদের লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হতে হয়।” তবে আইএসএফ কর্মীরা অভিযোগ করেছেন যে পুলিশ অহেতুক শক্তি প্রয়োগ করেছে এবং তাঁদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে বাধা দিয়েছে।
এই ঘটনার পর বাসন্তী হাইওয়ে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, অবরোধের কারণে রাস্তায় দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে, এবং অনেকে তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছাতে বিলম্বের সম্মুখীন হয়েছেন। কিছু বাসিন্দা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে যদি উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা না হয়।
আইএসএফ নেতৃত্ব জানিয়েছে, ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকারের উপর আঘাত এবং এটি তাঁদের সম্পত্তি কেড়ে নেওয়ার একটি প্রচেষ্টা। তাঁরা এই বিলের বিরুদ্ধে তাঁদের প্রতিবাদ অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন। অন্যদিকে, পুলিশ জানিয়েছে, তারা আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর এবং কোনো ধরনের অশান্তি সহ্য করা হবে না।
এই ঘটনা ভাঙড় এবং আশপাশের এলাকায় রাজনৈতিক ও সামাজিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। স্থানীয় নেতা এবং সমাজকর্মীরা উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার এবং সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে, বর্তমানে বাসন্তী হাইওয়েতে পুলিশের কঠোর নজরদারি চলছে, এবং পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই নজরদারি অব্যাহত থাকবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।