ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (ISL 2025) ২০২৪-২৫ মরশুমের ফাইনালে শনিবার সন্ধ্যায় যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মুখোমুখি হয়েছে মোহনবাগান (Mohun Bagan) সুপার জায়ান্ট এবং বেঙ্গালুরু এফসি। এই হাই-ভোল্টেজ ম্যাচে প্রথমার্ধ শেষে উভয় দলই গোলশূন্য ড্র নিয়ে মাঠ ছেড়েছে। তবে ম্যাচের শুরু থেকেই তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং উত্তেজনা মাঠের চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। মোহনবাগানের ঘরের মাঠে খেলা হলেও বেঙ্গালুরু এফসি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চাপ বাড়িয়ে ম্যাচে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে।
ম্যাচের আগে থেকেই এটা স্পষ্ট ছিল যে দুই শক্তিশালী দলের লড়াই সহজ হবে না। মোহনবাগানের কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস এবং বেঙ্গালুরুর কোচ জেরার্ড জারাগোজা দুজনেই নিজেদের সেরা একাদশ নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। মোহনবাগান ঘরের মাঠের সুবিধা কাজে লাগিয়ে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে শুরু করে। প্রথম কয়েক মিনিটে তারা বেশ কয়েকটি গোলের সুযোগ তৈরি করে, কিন্তু বেঙ্গালুরুর গোলরক্ষক গুরপ্রীত সিং সান্ধু এবং তাদের শক্তিশালী রক্ষণভাগ মোহনবাগানের আক্রমণকে বারবার ব্যর্থ করে দেয়।
মোহনবাগানের ফরোয়ার্ডরা, বিশেষ করে জেসন কামিংস এবং মানবীর সিং, বেশ কয়েকবার বেঙ্গালুরুর বক্সে বিপদ ডেকে এনেছিল। একটি উল্লেখযোগ্য সুযোগ এসেছিল ২০তম মিনিটে, যখন দিমিত্রি পেত্রাতোসের একটি দুর্দান্ত ফ্রি-কিক বেঙ্গালুরুর ডিফেন্ডার মাত্র সামান্য দূর দিয়ে বাইরে চলে যায়। তবে গোলের দেখা না মেলায় মেরিনার্সদের মধ্যে কিছুটা হতাশা দেখা দেয়। সমর্থকদের উৎসাহ সত্ত্বেও মোহনবাগান প্রথমার্ধে গোলের মুখ খুলতে ব্যর্থ হয়।
অন্যদিকে, বেঙ্গালুরু এফসি শুরুতে কিছুটা রক্ষণাত্মক মনোভাব নিয়ে খেললেও ধীরে ধীরে ম্যাচে ফিরে আসে। তাদের অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী এবং রায়ান উইলিয়ামসের নেতৃত্বে বেঙ্গালুরু মোহনবাগানের রক্ষণভাগে চাপ সৃষ্টি করতে শুরু করে। আলবার্তো নগুয়েরার মিডফিল্ড থেকে সুনির্দিষ্ট পাস এবং রায়ানের গতিময় রান মোহনবাগানের ডিফেন্ডারদের ব্যস্ত রাখে। ৩৫তম মিনিটে বেঙ্গালুরু একটি সুন্দর সুযোগ তৈরি করে, যখন সুনীল ছেত্রী একটি হেডারে গোলের চেষ্টা করেন। কিন্তু মোহনবাগানের গোলরক্ষক বিশাল কাইথ দুর্দান্ত সেভ করে দলকে রক্ষা করেন।
প্রথমার্ধের শেষ দিকে উভয় দলই গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। মোহনবাগানের পক্ষে পেত্রাতোস এবং বেঙ্গালুরুর পক্ষে নগুয়েরা বারবার চেষ্টা চালিয়ে যান। তবে মোহনবাগানের শক্তিশালী রক্ষণভাগ, বিশেষ করে হেক্টর ইয়ুস্তে এবং সুভাশিস বোসের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স, বেঙ্গালুরুর আক্রমণকে ব্যর্থ করে দেয়। একইভাবে, বেঙ্গালুরুর ডিফেন্ডাররা মোহনবাগানের আক্রমণকে নিষ্ফল করতে সফল হয়।
নির্ধারিত ৪৫ মিনিট শেষে রেফারি দুই মিনিটের অতিরিক্ত সময় যোগ করেন। এই সময়ে উভয় দলই গোলের জন্য শেষ চেষ্টা চালায়, কিন্তু কোনো দলই সাফল্য পায়নি। ফলে প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্য ড্র দিয়ে। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে উপস্থিত হাজার হাজার সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। সময় যত এগোচ্ছে, ম্যাচের ফলাফল নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ছে।
দ্বিতীয়ার্ধে মোহনবাগান নিশ্চিতভাবেই তাদের ঘরের মাঠের সমর্থন কাজে লাগিয়ে গোলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে। অন্যদিকে, বেঙ্গালুরু তাদের প্রথমার্ধের শেষ দিকের গতি ধরে রেখে মোহনবাগানের রক্ষণে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করবে। দুই দলেরই লক্ষ্য এখন দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোল তুলে নিয়ে ম্যাচে এগিয়ে যাওয়া।
এই ম্যাচে মোহনবাগানের শক্তি তাদের সমর্থকদের উৎসাহ এবং ঘরের মাঠের পরিবেশ, যেখানে তারা অতীতে অনেকবার অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। বেঙ্গালুরু এফসি, তবে, তাদের অভিজ্ঞতা এবং কৌশলগত শৃঙ্খলার উপর ভরসা করছে। সুনীল ছেত্রীর নেতৃত্বে তারা যে কোনো মুহূর্তে ম্যাচের চেহারা বদলে দিতে পারে।
এখন সবার চোখ দ্বিতীয়ার্ধের দিকে। কে শেষ হাসি হাসবে—মোহনবাগান না বেঙ্গালুরু? এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য অপেক্ষা করতে হবে ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজা পর্যন্ত। যুবভারতীতে উত্তেজনার পারদ ক্রমশ চড়ছে, আর ফুটবলপ্রেমীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন এই মহারণের ফলাফলের জন্য।