জনস্বাস্থ্যের গুরুত্ব বিবেচনায়, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court ) এক গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছেন। আদালত কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে এমন ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে প্যাকেটজাত খাদ্যদ্রব্যের মোড়কে চিনির, লবণের ও চর্বির পরিমাণ স্পষ্টভাবে প্যাকেটের সামনের দিকে উল্লেখ করা হয়। এই রায়ের ফলে, ভোক্তারা সহজেই জানতে পারবেন কোন পণ্য তাঁদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে, এবং সচেতনভাবে খাদ্য বাছাই করতে পারবেন।
এই রায় আসে একাধিক জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে, যেখানে বহু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি দাবি জানিয়েছিল যে, বর্তমান প্যাকেটজাত খাবারের মোড়কে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগত তথ্য অনেক সময়ই অস্পষ্ট থাকে বা পিছনে এমনভাবে লেখা থাকে, যা সাধারণ মানুষের পক্ষে পড়া বা বোঝা কঠিন হয়। এর ফলে বিশেষ করে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে উচ্চমাত্রার চিনি, লবণ এবং চর্বিযুক্ত খাদ্যপণ্যের প্রতি আকর্ষণ বাড়ছে, যার প্রভাব পড়ছে তাঁদের স্বাস্থ্যের উপর।
Also Read | কর্মী নিয়োগে ভাটা, বেতন বৃদ্ধিও স্থগিত করল টিসিএস
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হেমন্ত গুপ্ত ও বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদীর বেঞ্চ জানায়, “একটি সুস্থ সমাজ গঠনে স্বচ্ছ খাদ্য তথ্য অত্যন্ত জরুরি। জনগণের কাছে স্পষ্টভাবে পুষ্টিগত তথ্য পৌঁছে দেওয়া সরকারের দায়িত্ব। আমরা কেন্দ্রকে নির্দেশ দিচ্ছি, তিন মাসের মধ্যে যথাযথ বিধি তৈরি করে তা কার্যকর করতে হবে, যাতে প্রতিটি প্যাকেটজাত খাদ্যদ্রব্যের সামনের দিকে বড় হরফে চিনির, লবণের ও ফ্যাটের পরিমাণ লেখা হয়।”
এই রায়ের পর, ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (FSSAI)-র ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে সংস্থাটি এই বিষয়ক একাধিক খসড়া গাইডলাইন তৈরি করেছিল, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তা চূড়ান্ত রূপ পাচ্ছিল না বিভিন্ন শিল্প সংস্থার আপত্তির কারণে। তবে এখন আদালতের নির্দেশে কেন্দ্র এবং FSSAI বাধ্য হবে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে।
Also Read | দেশজুড়ে সব প্ল্যাটফর্মেই UPI লেনদেন ব্যর্থ, হাজার হাজার গ্রাহক সমস্যায়
পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসকদের মতে, অধিক পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটজাত খাবার খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা এবং হৃদরোগের মতো অসুখের ঝুঁকি বাড়ছে। এক জরিপে দেখা গেছে, ভারতে প্রতি তিনজন প্রাপ্তবয়স্কর মধ্যে একজন অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খান, এবং শিশুদের মধ্যেও চিনিযুক্ত পানীয় ও স্ন্যাক্সের প্রবণতা বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। এই পরিস্থিতিতে স্পষ্ট ও সামনে দৃশ্যমান লেবেল একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে চলেছে জনস্বাস্থ্য রক্ষায়।
জনস্বার্থে রায়কে স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, এই সিদ্ধান্ত প্যাকেটজাত খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলিকে আরও দায়িত্বশীল করে তুলবে এবং বাজারে স্বাস্থ্যকর পণ্যের চাহিদা বাড়বে।
তবে খাদ্য প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির একাংশ এই সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তাঁদের যুক্তি, পণ্যের সামনে এভাবে পুষ্টিগত তথ্য লিখতে বাধ্য করা হলে গ্রাহকদের মধ্যে ভয় বা বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে, যার প্রভাব বিক্রয়ের উপর পড়বে। তারা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে, এই প্রক্রিয়ায় ব্যবসায়িক স্বার্থও যেন বিবেচনায় রাখা হয়।
সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করেছে, জনস্বাস্থ্যের প্রশ্নে কোনোরকম ছাড় দেওয়া যাবে না। তিন মাসের মধ্যে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে বিস্তারিত গাইডলাইন প্রকাশ করতে হবে এবং তা কার্যকর করার রূপরেখাও জানাতে হবে। আদালতের এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে ভারতে পুষ্টিসচেতনতা বাড়াতে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে উঠবে।