পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ানে উত্তেজনাপূর্ণ (Dhulian violence) পরিস্থিতি নিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumda) বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলে দাবি করেছেন, ধুলিয়ানে অশান্তি সৃষ্টির পিছনে রাজ্য সরকারের প্রত্যক্ষ মদত রয়েছে। এই ঘটনাকে তিনি সম্প্রতি ২৬,০০০ শিক্ষকের চাকরি হারানোর ঘটনা থেকে জনগণের দৃষ্টি সরানোর একটি কৌশল বলেও অভিহিত করেছেন।
সুকান্ত মজুমদার দাবি করেছেন, ধুলিয়ানে একজন তৃণমূল বিধায়কের ভাই প্রকাশ্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে গুলি চালাচ্ছেন, যা এলাকায় ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, “ধুলিয়ানে হিন্দুদের যখন-তখন হত্যা করা হতে পারে। এই পরিস্থিতি ভয়ংকর। বাংলার সীমান্তবর্তী জেলাগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে তুলে দেওয়া উচিত।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই এই অশান্তির পিছনে রয়েছেন এবং তাঁর নির্দেশেই এই ঘটনাগুলি ঘটছে।
মজুমদার তৃণমূল মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীকে তীব্র আক্রমণ করে বলেন, “সিদ্দিকুল্লাহর মতো ব্যক্তির মন্ত্রী হওয়ার কোনও যোগ্যতা নেই। তিনি টাইট দেওয়ার কথা বলছেন, তিনি কে? ওয়াকফ বিল সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি নিজেই বুঝতে পারবেন না এতে কী আছে।” তিনি অভিযোগ করেন, সিদ্দিকুল্লাহর মতো নেতারা ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়িয়ে মুসলিম সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করছেন। তিনি দাবি করেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়েও মিথ্যে প্রচার চালানো হয়েছিল, যা রাজ্যের মুসলিম সম্প্রদায়কে অন্ধকারে রাখার একটি প্রচেষ্টা।
ধুলিয়ানে সম্প্রতি উত্তেজনার খবর পাওয়া গেছে, যদিও এই ঘটনাগুলি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য এখনও স্পষ্ট নয়। মজুমদার দাবি করেছেন, এলাকাটি আবারও অশান্ত হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, “বিজেপি কখনও সংবিধানের ৩৫৫ বা ৩৫৬ ধারা প্রয়োগের পক্ষে নয়। কিন্তু যে পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে এটি অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠতে পারে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই ধরনের উগ্র সম্প্রদায়িক শক্তি কারও পক্ষে কাজ করে না এবং এটি বাংলার সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করছে।
মজুমদার আরও বলেন, “আমরা মানুষকে বোঝাব, যে পতাকা খুলে ফেলা হয়েছিল, সেই পতাকা তারা যেন বাড়িতে, গাড়িতে লাগায়। তবে আমরা কোথাও জোর করে পতাকা লাগাতে চাই না।” তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ভারতের অন্যান্য রাজ্যে এই ধরনের সমস্যা না থাকলেও বাংলায় কেন বারবার এমন ঘটনা ঘটছে? তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “আসামে মুসলিম জনসংখ্যা বেশি থাকলেও সেখানে এই ধরনের ঝামেলা হচ্ছে না। কারণ বাংলায় একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল এই বিভেদকে উসকে দিচ্ছে।”
বাংলার মুসলিম সম্প্রদায়ের শিক্ষা ও সামাজিক অবস্থা নিয়েও মজুমদার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “বাংলার মুসলিম সমাজ শিক্ষায়, দীক্ষায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তাদের ধর্মীয় আফিম দিয়ে শুইয়ে রাখা হয়েছে। একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল তাদের ভোটের জন্য এই অন্ধকারে রাখছে।” তিনি দাবি করেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত, ধর্মীয় উসকানির পরিবর্তে।
এই ঘটনা নিয়ে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস এখনও এই অভিযোগের জবাবে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। তবে ধুলিয়ানে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পুলিশ প্রশাসন সক্রিয় রয়েছে বলে জানা গেছে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আগেও এই ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে, এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলেছেন যে তাঁর সরকার সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সুকান্ত মজুমদারের এই বক্তব্য বাংলার রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ধুলিয়ানের পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। অনেকে মনে করছেন, এই ধরনের বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। অন্যদিকে, বিজেপির সমর্থকরা মজুমদারের বক্তব্যকে সমর্থন করে বলছেন, রাজ্য সরকারের ব্যর্থতাই এই অশান্তির জন্য দায়ী।
ধুলিয়ানের ঘটনা এবং এই রাজনৈতিক বাকযুদ্ধ কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, তা এখনও অস্পষ্ট। তবে এই ঘটনা বাংলার সীমান্তবর্তী এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে। শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সরকার এবং বিরোধী দলগুলির মধ্যে সংযম এবং সহযোগিতার প্রয়োজন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।