বাংলার প্রাথমিকে ২৫০০ প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি

West Bengal primary teacher: একদিকে যখন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীরা কর্মহীনতার সম্মুখীন হচ্ছেন, তখন অন্যদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য উল্লেখযোগ্য…

DPSC Midnapore

West Bengal primary teacher: একদিকে যখন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীরা কর্মহীনতার সম্মুখীন হচ্ছেন, তখন অন্যদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ। প্রায় দুই দশক পর, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিষদ (ডিপিএসসি) প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এই বিজ্ঞপ্তি শিক্ষক সম্প্রদায়ের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে, বিশেষ করে এমন সময়ে যখন শিক্ষা ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছে।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে প্রধান শিক্ষকের প্রায় ২৫০০ শূন্যপদ রয়েছে। এই শূন্যপদ পূরণের লক্ষ্যে ডিপিএসসি আগামী ১৬ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে যোগ্য ও ইচ্ছুক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছ থেকে আবেদন গ্রহণ করবে। সংসদের তরফে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে প্রধান শিক্ষক পদে আবেদনের জন্য ন্যূনতম যোগ্যতার মানদণ্ড স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

যোগ্যতার মানদণ্ড:

১. ২০০১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর বা তার আগে নিযুক্ত শিক্ষকদের জন্য:
মাধ্যমিক পাশ হতে হবে।

১ বছর বা ২ বছরের শিক্ষক প্রশিক্ষণ (পিটিটিআই বা সমতুল্য) থাকতে হবে।

২. ২০০১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৫ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিযুক্ত শিক্ষকদের জন্য:
যোগ্যতার মানদণ্ড একই, অর্থাৎ মাধ্যমিক পাশ এবং ১ বা ২ বছরের শিক্ষক প্রশিক্ষণ।

৩. ২০০৫ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত নিযুক্ত শিক্ষকদের জন্য:
উচ্চ মাধ্যমিকে ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর বা স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে।

দুই বছরের ডি.এল.এড বা পিটিটিআই প্রশিক্ষণ থাকা বাধ্যতামূলক।

Advertisements

যদি কোনও শিক্ষক স্পেশাল ডি.এড, স্পেশাল বি.এড বা সাধারণ বি.এড সম্পন্ন করে থাকেন, তবে তাঁদের ৬ মাসের ব্রিজ কোর্স সম্পূর্ণ করতে হবে।

আবেদন প্রক্রিয়া

আগ্রহী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সংসদের দেওয়া নির্দিষ্ট ফর্ম্যাটে আবেদনপত্র পূরণ করে অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক (এসআই) কার্যালয়ে জমা দিতে হবে। সংসদ স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে অন্য কোনও জায়গায় জমা দেওয়া আবেদন গ্রহণ করা হবে না। আবেদনের সময়সীমা ১৬ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল, ২০২৫ পর্যন্ত। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সিনিয়রিটি বা শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে অভিজ্ঞ শিক্ষকদের প্রাধান্য দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে সংসদ।

শিক্ষক সম্প্রদায়ে প্রভাব

দীর্ঘদিন ধরে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় শিক্ষার গুণগত মান এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি হয়েছে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় শিক্ষকদের মধ্যে উৎসাহের সঞ্চার হয়েছে। অনেক শিক্ষক, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে আসছেন, এই সুযোগকে তাঁদের ক্যারিয়ারের অগ্রগতির একটি পথ হিসেবে দেখছেন। তবে, কঠোর যোগ্যতার মানদণ্ড এবং সিনিয়রিটির উপর গুরুত্ব দেওয়ায় কিছু তরুণ শিক্ষকের মধ্যে আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব

প্রাথমিক শিক্ষা যে কোনও শিক্ষা ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। প্রধান শিক্ষকের ভূমিকা শুধুমাত্র প্রশাসনিক নয়, তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখা চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছিল। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেই সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

চ্যালেঞ্জ ও প্রত্যাশা

নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। অতীতে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, যা জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল। তাই সংসদের উপর দায়িত্ব রয়েছে যেন এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে এবং যোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচন করে সম্পন্ন হয়। একই সঙ্গে, শিক্ষকদের প্রত্যাশা, এই নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হবে এবং শূন্যপদগুলি পূরণের মাধ্যমে বিদ্যালয়গুলির কার্যক্রম আরও মসৃণ হবে। পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের এই উদ্যোগ শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। প্রায় ২৫০০ শূন্যপদ পূরণের মাধ্যমে জেলার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা আরও সুগঠিত ও কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। শিক্ষক সম্প্রদায়ের জন্য এটি একটি সুযোগ, যার মাধ্যমে তারা তাদের ক্যারিয়ারে নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে পারবেন। সেই সঙ্গে, ছাত্রছাত্রীদের জন্যও এটি একটি উন্নত শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তোলার পথ প্রশস্ত করবে।