২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার অন্যতম মূল পরিকল্পনাকারী তাহাউর হুসেন রানার (Tahawwur Rana) প্রত্যর্পণ ভারতের কূটনৈতিক এবং আইনি প্রচেষ্টার একটি বড় মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ২০১১ সালে যখন আমেরিকার একটি আদালত তাহাউর রানাকে মুম্বাই হামলার অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয়, তখন তৎকালীন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। তিনি এটিকে ভারতের সার্বভৌমত্বের অবমাননা এবং কেন্দ্রের তৎকালীন সরকারের পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। ২০২৫ সালে, একই আমেরিকান ব্যবস্থা রানার ভারতে প্রত্যর্পণের অনুমোদন দিয়েছে। এই নাটকীয় পরিবর্তনের পিছনে রয়েছে ভারতের দৃঢ় নেতৃত্ব এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অটল প্রতিশ্রুতি।
২০১১ সালে, যখন শিকাগোর একটি ফেডারেল আদালত তাহাউর রানাকে ২৬/১১ হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয়, তখন এই রায় ভারতের জন্য একটি বড় ধাক্কা ছিল। রানা, যিনি পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক, লস্কর-ই-তৈবার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং হামলার পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি তার বন্ধু ডেভিড কোলম্যান হেডলিকে মুম্বাইয়ে লক্ষ্যবস্তুর নজরদারির জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করেছিলেন। মোদী, তখন সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্টে বলেছিলেন, “আমেরিকার আদালত তাহাউর রানাকে মুম্বাই হামলায় নির্দোষ ঘোষণা করেছে, এটি ভারতের সার্বভৌমত্বের অবমাননা এবং পররাষ্ট্রনীতির একটি বড় ব্যর্থতা।” তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের নিষ্ক্রিয়তার সমালোচনা করে আমেরিকার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
Also Read | ভারতের হাতে রানা, ২৬/১১-র চক্রীকে জেরা করবে NIA
১৬ বছর পর, ২০২৫ সালের ১০ এপ্রিল, তাহাউর রানাকে অবশেষে আমেরিকা থেকে ভারতে প্রত্যর্পণ করা হয়। এই ঘটনা ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)-এর নেতৃত্বে এবং ভারত-আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের শক্তির ফল। রানা দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর তাকে এনআইএ-র হেফাজতে নেওয়া হয় এবং পটিয়ালা হাউস আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাকে ১৮ দিনের এনআইএ হেফাজতে পাঠিয়েছে, যাতে হামলার পিছনের পূর্ণ ষড়যন্ত্র উন্মোচন করা যায়। এই প্রত্যর্পণের পিছনে ভারতের আইনি দলের দীর্ঘমেয়াদী প্রচেষ্টা এবং আমেরিকার সঙ্গে কূটনৈতিক সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
কী পরিবর্তন হলো? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সাফল্যের মূলে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী মোদীর দৃঢ় নেতৃত্ব এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তার ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতি। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে মোদী সরকার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। রানার প্রত্যর্পণের জন্য ভারত ২০২০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে আমেরিকার কাছে অনুরোধ জানায়। এরপর দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর, ২০২৩ সালে আমেরিকার একটি আদালত তার প্রত্যর্পণের সার্টিফিকেশন দেয়। রানা এর বিরুদ্ধে একাধিক আপিল করলেও, ২০২৫ সালের এপ্রিলে আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট তার শেষ আবেদন খারিজ করে, যা ভারতের জন্য পথ প্রশস্ত করে।
Also Read | ২৬/১১ মুম্বই হামলা মামলায় এনআইএ হেফাজতে তাহাউর রানা
মোদীর নেতৃত্বে ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে মোদীর আমেরিকা সফরের সময় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রানার প্রত্যর্পণের অনুমোদন ঘোষণা করেন। এই ঘটনা কেবল আইনি বিজয়ই নয়, ভারতের কূটনৈতিক দক্ষতারও প্রমাণ। সামাজিক মাধ্যমে মোদীর ২০১১ সালের পোস্টটি আবার ভাইরাল হয়েছে, যেখানে নেটিজেনরা তার প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য প্রশংসা করছেন। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “মোদী কখনো ভারতের শত্রুদের ভোলেন না।” আরেকজন বলেছেন, “মোদী আছেন, তাই এটা সম্ভব হয়েছে।”
❗Throwback — PM Modi BOLDLY called out the release of Tahawwur Rana.
2011: US court freed 26/11 plotter.
2025: The same system approved his EXTRADITION 🔥— What changed? India’s leadership – PM Modi. 💪 pic.twitter.com/2KaS6gMgXE
— Megh Updates 🚨™ (@MeghUpdates) April 11, 2025
তাহাউর রানার প্রত্যর্পণ ভারতের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি ২৬/১১ হামলায় নিহত ১৬৬ জনের পরিবারের জন্য ন্যায়ের একটি আশা জাগিয়েছে। এনআইএ-র তদন্ত এখন হামলার পিছনে আরও গভীর ষড়যন্ত্র উন্মোচন করতে পারে, বিশেষ করে পাকিস্তানের ভূমিকা সম্পর্কে। এই ঘটনা বিশ্বকে দেখিয়েছে যে, ভারত তার শত্রুদের ক্ষমা করে না এবং ন্যায়ের জন্য অপেক্ষা করতে প্রস্তুত।