সম্প্রতি কসবার ডিআই অফিস ঘিরে শিক্ষকদের আন্দোলন (West Bengal teacher protest) ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজ্য রাজনীতি। নিয়োগপত্র হারানো চাকরিপ্রার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ এবং তার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া ঘিরে তৈরি হয়েছে তীব্র বিতর্ক। একদিকে যেখানে আন্দোলনরত শিক্ষকরা তাঁদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য রাস্তায় নেমেছিলেন, অন্যদিকে পুলিশের হস্তক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।
ঘটনার সূত্রপাত হয় বুধবার, যখন কয়েকশো চাকরিহারার দল কসবার ডিআই অফিস ঘিরে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন। তাদের দাবি ছিল, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তারা চাকরি পাচ্ছেন না। অভিযোগ, ২০১৪-২০১৭ সালের মধ্যে টেট পাশ করা প্রার্থীদের নিয়োগ হয়নি, অথচ অনেক কম নম্বর পাওয়া প্রার্থীরা চাকরি পেয়েছেন। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন চাকরিপ্রার্থীরা।
Also Read | বাংলায় ওয়াকফ আইন কার্যকর হবে না, জানালেন মমতা
এই পরিস্থিতিতে পুলিশের তরফ থেকে প্রথমে মৌখিকভাবে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু আন্দোলনকারীরা অবস্থান চালিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ ‘মৃদু লাঠিচার্জ’ করে বলে দাবি করেন সিপি। তিনি জানান, “পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছিল, তাই নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে সামান্য বলপ্রয়োগ করা হয়।” তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, শিক্ষক আন্দোলনকারীদের ওপর যথেষ্ট পরিমাণ বলপ্রয়োগ করা হয়েছে। এক শিক্ষক জামা-প্যান্ট খুলে দেখান শরীরজুড়ে লাঠির চিহ্ন, যা পুলিশের ‘মৃদু’ লাঠিচার্জ দাবিকে প্রশ্নের মুখে ফেলে।
Also Read | কসবায় DI অফিসের সামনে তুলকালাম, চলল লাঠি
বিজেপি নেতা সজল ঘোষ কড়া ভাষায় এই ঘটনার নিন্দা করে বলেন, “চাকরি খেয়েছে তারপর পেটে-পিঠে লাঠি। এবার ওদের জেলেও ঢোকাবে। লজ্জার কথা এই পুলিশ ছ’মাস আগে ডাক্তারদের পিছনে লেগেছিল, আজ মাস্টারদের পিছনে লেগেছে।” তাঁর মতে, মুখ্যমন্ত্রী হয়তো ভুলে গিয়েছেন, যাদের আজ লাঠিপেটা করা হচ্ছে, তাঁদের একটা বড় অংশই তাঁকে ভোট দিয়েছিল।
সিপিএম নেতা শতরূপ ঘোষ বলেন, “এই ন’বছরে যারা চুরি করেছে, সেই চোরদের একটাও আঁচড় লাগেনি পুলিশের। বরং যাঁরা চাকরি পাওয়ার যোগ্য, সেই শিক্ষকরাই মার খেলেন। এতে সরকারের পুলিশি চরিত্রই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।”
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কসবা থানায় ডিআই অফিসের পক্ষ থেকে অভিযোগ জানানো হয়েছে এবং পুলিশের তরফ থেকেও স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুইটি পৃথক মামলা রুজু হয়েছে – একটি পুলিশের তরফে, অপরটি ডিআই অফিসের পক্ষ থেকে।
এই ঘটনাকে ঘিরে রাজ্যজুড়ে শিক্ষক সমাজে ও সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। জনমতের চাপের মুখে পড়ে সরকারের ভূমিকা এবং পুলিশের আচরণ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। শিক্ষক আন্দোলন, লাঠিচার্জ এবং তার রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াগুলি আজকের বাংলার রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে।