সম্প্রতি স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (SBI)-এর একটি রিপোর্টে প্রকাশ পেয়েছে যে, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক (RBI) তার আর্থিক নীতিতে আরও বেশি সহনশীল (accommodative) দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, মুদ্রাস্ফীতির প্রত্যাশা ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে এবং ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক প্রবণতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছে।
SBI-এর এই বিশ্লেষণ বলছে, RBI শুধুমাত্র অতীতের মুদ্রাস্ফীতির হার দেখে নয়, বরং ভবিষ্যতের প্রত্যাশিত মুদ্রাস্ফীতিকেও গুরুত্ব দিয়ে তার নীতি নির্ধারণ করছে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, “আমরা খতিয়ে দেখেছি RBI-এর নীতিগত অবস্থানের পরিবর্তন কি মুদ্রাস্ফীতির প্রত্যাশার দিক পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আমাদের অনুমান, মুদ্রাস্ফীতির প্রত্যাশার দিক পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ায় RBI তার নীতি পরিবর্তন করে।”
Also Read | রাজ্য সরকারি কর্মীদের জন্য সুখবর, ডিএ বাড়ল ২ শতাংশ
রিপোর্ট অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সময়ে RBI ‘নিউট্রাল’ মনোভাব থেকে ‘অ্যাকোমোডেটিভ’ নীতিতে স্থানান্তর করেছে, যার পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে মুদ্রাস্ফীতির প্রত্যাশার কমে যাওয়া। ঘরোয়া পরিবারের মধ্যে বর্তমানে আগামী তিন মাসের জন্য মুদ্রাস্ফীতির প্রত্যাশা ৮.৯ শতাংশে নেমে এসেছে, যা পূর্ববর্তী তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। এর অর্থ, জনগণের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতির ভয় কিছুটা কমেছে এবং সেই সুযোগে RBI অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সহায়তা করার জন্য নীতি শিথিল করছে।
২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে RBI-এর মনিটারি পলিসি কমিটি (MPC) তাদের নীতিগত অবস্থান পরিবর্তন করেছে। SBI-এর বিশ্লেষণ বলছে, প্রতিবারই এই পরিবর্তন মুদ্রাস্ফীতির প্রত্যাশায় পরিষ্কার দিক পরিবর্তনের পরে হয়েছে। যখন মুদ্রাস্ফীতির প্রত্যাশা বেড়েছে, তখন RBI কঠোর নীতি গ্রহণ করেছে। আবার যখন প্রত্যাশা হ্রাস পেয়েছে, তখন নীতিও শিথিল হয়েছে।
Also Read | কম সুদের হারে পার্সোনাল লোন পাওয়ার সেরা উপায়
এই ধারা বোঝায় যে RBI একটি প্রোঅ্যাকটিভ মনোভাবে কাজ করছে—অর্থাৎ শুধুমাত্র বর্তমান পরিসংখ্যানের ওপর নির্ভর না করে ভবিষ্যৎ ঝুঁকি বিবেচনায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক অর্থনীতির মূলধারা অনুসারে, ভবিষ্যৎ মুদ্রাস্ফীতির প্রত্যাশা স্থিতিশীল রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক লক্ষ্য, এবং আরবিআই সে পথে হাঁটছে বলেই রিপোর্টটি মনে করছে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত আরবিআই ৫০ বেসিস পয়েন্ট (bps) হার কমিয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে রেপো রেট ২৫ বিপিএস কমানোর পর, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলি আমানতের সুদের হার ৬ বিপিএস কমিয়েছে এবং বিদেশি ব্যাংকগুলি ১৫ বিপিএস কমিয়েছে। তবে বেসরকারি ব্যাংকগুলি আমানতের সুদের হার ২ বিপিএস বাড়িয়েছে, যা ব্যাংকগুলির মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন হারের সংক্রমণ প্যাটার্ন নির্দেশ করে।
তবে এর মধ্যেও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে এসেছে—পাবলিক, প্রাইভেট এবং অন্যান্য নির্ধারিত বাণিজ্যিক ব্যাংকের ওজনভিত্তিক গড় ঋণদানের হার (Weighted Average Lending Rate – WALR) রেপো রেট পরিবর্তনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মিল রেখে পরিবর্তিত হয়েছে। এর মানে, নীতিগত হারের পরিবর্তন বাস্তবে দ্রুত এবং কার্যকরভাবে আর্থিক ব্যবস্থায় প্রতিফলিত হচ্ছে।
SBI-এর এই বিশ্লেষণ স্পষ্ট করে বলছে যে, আরবিআই তার মুদ্রানীতিকে বর্তমান বাস্তবতার ভিত্তিতে দ্রুত রূপান্তর করছে এবং একাধারে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি—উভয় লক্ষ্য পূরণে সচেষ্ট রয়েছে।
বর্তমানে RBI যে সহনশীল নীতির পথ বেছে নিচ্ছে তা কেবল সাময়িক সুবিধার কথা নয়, বরং একটি সুপরিকল্পিত এবং দূরদর্শী পদক্ষেপ। মুদ্রাস্ফীতির প্রত্যাশার পরিবর্তনগুলিকে গুরুত্ব দিয়ে নীতি গঠন করে, রিজার্ভ ব্যাংক ভারতের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল এবং টেকসই পথে পরিচালনার চেষ্টা করছে। এসবিআই-এর এই রিপোর্ট অর্থনীতিবিদ, নীতি-নির্ধারক এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে—ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কেবল অতীত দেখছে না, ভবিষ্যৎও ভাবছে।