ওয়েস্টার্ন রেলওয়ে (Western Railway) বুধবার ঘোষণা করেছে যে, মাহিম এবং বান্দ্রা স্টেশনের মধ্যে একটি সেতুর “রি-গার্ডারিং” কাজের জন্য ১১ ও ১২ এপ্রিল এবং ১২ ও ১৩ এপ্রিলের মধ্যরাতে একটি মেগা ব্লক (Trains Cancelled) নেওয়া হবে। এই ব্লকের ফলে শহরতলি এবং দূরপাল্লার অনেক ট্রেন পরিষেবা প্রভাবিত হবে। প্রতি রাতে এই ব্লকের সময়কাল হবে ৯.৫ ঘণ্টা, বলে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
১১ এপ্রিল রাত ১১টা থেকে পরদিন সকাল ৮.৩০টা পর্যন্ত এবং ১২ এপ্রিল রাত ১১.৩০টা থেকে পরদিন সকাল ৯টা পর্যন্ত ব্লক চলবে। তবে, ফাস্ট এবং স্লো লাইনের জন্য ব্লকের সময় কিছুটা ভিন্ন হবে। ওয়েস্টার্ন রেলওয়ের চিফ পাবলিক রিলেশনস অফিসার বিনীত অভিষেক জানিয়েছেন, “এই কাজ চলাকালীন কিছু শহরতলি পরিষেবা এবং মেল/এক্সপ্রেস ট্রেন প্রভাবিত হবে।”
এই মেগা ব্লকের কারণে মোট ৩৩৪টি ট্রেন সম্পূর্ণভাবে বাতিল করা হবে—প্রথম দিন ১৩২টি এবং দ্বিতীয় দিন ২০২টি। এছাড়া, ১৮৫টি পরিষেবা আংশিকভাবে বাতিল হবে—প্রথম দিন ৬৮টি এবং দ্বিতীয় দিন ১১৭টি। যাত্রীদের অতিরিক্ত ভিড় সামলাতে ওয়েস্টার্ন রেলওয়ে ১১০টি অতিরিক্ত পরিষেবা চালানোর পরিকল্পনা করেছে—প্রথম দিন ৪২টি এবং দ্বিতীয় দিন ৬৮টি। এছাড়া, নয়টি দূরপাল্লার ট্রেন আংশিকভাবে বাতিল হবে, এবং প্রায় ১১টি ট্রেন নিয়ন্ত্রিত বা পুনঃনির্ধারিত হবে।
ওয়েস্টার্ন রেলওয়ের শহরতলি নেটওয়ার্ক দক্ষিণ মুম্বইয়ের চার্চ গেট থেকে পার্শ্ববর্তী পালঘর জেলার দহানু রোড স্টেশন পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রতিদিন এই শহরতলি পরিষেবায় ৩০ লক্ষেরও বেশি যাত্রী ভ্রমণ করেন। এই ব্লকের ফলে যাত্রীদের দৈনন্দিন যাতায়াতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ব্লকের সময়সূচী এবং প্রভাব
১১ এপ্রিল রাত ১১টা থেকে শুরু হওয়া এই ব্লকের প্রথম দিনে স্লো এবং ফাস্ট লাইনে ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। ১২ এপ্রিল রাত ১১.৩০টা থেকে দ্বিতীয় দিনের ব্লক শুরু হবে। এই সময়ে শহরতলির স্লো লাইনের পাশাপাশি ফাস্ট লাইনের কিছু ট্রেনও প্রভাবিত হবে। বিনীত অভিষেক জানিয়েছেন, “এই কাজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি সেতুর কাঠামোগত স্থায়িত্ব এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। তবে, এর ফলে কিছু অসুবিধা হবে, যার জন্য আমরা যাত্রীদের কাছে ক্ষমা চাইছি।”
মাহিম এবং বান্দ্রার মধ্যে অবস্থিত এই সেতুটি মিঠি নদীর উপর নির্মিত। এটি ওয়েস্টার্ন রেলওয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ যাত্রীকে পরিষেবা দেয়। এই সেতুর রি-গার্ডারিং কাজটি দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার অংশ, যা রেলপথের অবকাঠামো উন্নত করার লক্ষ্যে করা হচ্ছে। তবে, এই কাজের জন্য দুই দিনের জন্য বড় ধরনের ব্লক নেওয়া হচ্ছে, যা যাত্রীদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।
ট্রেন বাতিল এবং বিকল্প ব্যবস্থা
প্রথম দিনে ১৩২টি এবং দ্বিতীয় দিনে ২০২টি ট্রেন সম্পূর্ণ বাতিল হওয়ায় শহরতলির যাত্রীদের বিকল্প পরিবহনের উপর নির্ভর করতে হবে। এছাড়া, ৬৮টি এবং ১১৭টি ট্রেন যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে আংশিকভাবে বাতিল হবে, অর্থাৎ এগুলো নির্দিষ্ট স্টেশন পর্যন্ত চলবে এবং তারপর বন্ধ হয়ে যাবে। এই পরিস্থিতিতে যাত্রীদের ভিড় সামলাতে ৪২টি এবং ৬৮টি অতিরিক্ত ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।
দূরপাল্লার ট্রেনের ক্ষেত্রে নয়টি ট্রেন আংশিকভাবে বাতিল হবে, যার মধ্যে কিছু ট্রেন নির্দিষ্ট স্টেশনে শেষ হবে এবং বাকি পথে চলবে না। এছাড়া, ১১টি ট্রেনের সময়সূচী পরিবর্তন বা নিয়ন্ত্রণ করা হবে, যার ফলে এগুলো নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে চলতে পারে।
যাত্রীদের জন্য পরামর্শ
ওয়েস্টার্ন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের এই দুই দিনের জন্য ভ্রমণ পরিকল্পনা আগে থেকে করে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। যারা নিয়মিত শহরতলি ট্রেনে যাতায়াত করেন, তাদের বিকল্প হিসেবে বাস বা অন্যান্য পরিবহন ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। রেলওয়ে তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে বাতিল এবং অতিরিক্ত ট্রেনের সময়সূচী প্রকাশ করবে, যাতে যাত্রীরা আগাম প্রস্তুতি নিতে পারেন।
এই ব্লকটি যদিও যাত্রীদের জন্য অসুবিধার কারণ হবে, তবে দীর্ঘমেয়াদে এটি রেলপথের নিরাপত্তা এবং দক্ষতা বাড়াবে। ওয়েস্টার্ন রেলওয়ে আশা করছে যে, এই কাজ সম্পন্ন হলে ভবিষ্যতে এই রুটে ট্রেন চলাচল আরও মসৃণ এবং নির্ভরযোগ্য হবে। তাই যাত্রীদের এই অস্থায়ী অসুবিধার জন্য ধৈর্য ধরতে অনুরোধ করা হচ্ছে।