তৃণমূল (tmc) কংগ্রেসের দুই সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কীর্তি আজাদের মধ্যে ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট মঙ্গলবার প্রকাশ করে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), যা বাংলার শাসক দলের অভ্যন্তরীণ বিভেদ এবং উত্তেজনার চিত্র তুলে ধরেছে।
‘বহুমুখী আন্তর্জাতিক মহিলা’
এই চ্যাটে একজন ‘বহুগুন সম্পন্ন আন্তর্জাতিক মহিলা’র ‘সুন্দর কার্যকলাপ’-এর উল্লেখ রয়েছে, যা রাজনৈতিক মহলে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিজেপির আইটি সেল প্রধান অমিত মালব্য এই চ্যাটের স্ক্রিনশট এক্স-এ পোস্ট করেছেন, যা তৃণমূলের জন্য একটি বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে, বিশেষ করে আগামী বছরের গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে।
এই ফাঁস হওয়া চ্যাটে দেখা যায়, কীর্তি আজাদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, “তুমি একটু বেশি মদ্যপান করেছ… তোমার শিশুসুলভ এবং অস্থির আচরণ বন্ধ করো। প্রাপ্তবয়স্কের মতো আচরণ করো।” এই বার্তাগুলো তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং ব্যক্তিগত আক্রমণের একটি চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে।
তৃণমূলের (tmc) পক্ষ থেকে এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া
তৃণমূলের (tmc) পক্ষ থেকে এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দলের প্রবীণ নেতা সৌগত রায়। তিনি বলেন, “যে স্ক্রিনশটগুলো প্রকাশিত হয়েছে, তা আমাদের লজ্জা এবং বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। এটা হওয়া উচিত ছিল না।” তিনি দলের গোপনীয়তা রক্ষার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে বলেন, “প্রতিটি দলেরই অভ্যন্তরীণ গোপনীয়তা বজায় রাখা উচিত।” সৌগত রায় তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ঘটনার পটভূমি
বিজেপি দাবি করেছে যে, এই কলহের সূত্রপাত ঘটে গত ৪ এপ্রিল নির্বাচন কমিশনের সদর দফতরে তৃণমূলের (tmc) একটি প্রতিনিধি দলের সফরের সময়। অমিত মালব্যর মতে, দলের সাংসদদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল সংসদ কার্যালয়ে জড়ো হয়ে একটি স্মারকলিপি স্বাক্ষর করার জন্য, তারপর কমিশনে যাওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু একজন সাংসদ সেই সভা এড়িয়ে সরাসরি কমিশনে চলে যান, যা অন্য একজন সাংসদের ক্ষোভের কারণ হয়। এরপর কমিশনের সামনে দুজনের মধ্যে তুমুল তর্ক শুরু হয়, এমনকি পুলিশের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন পড়ে। এই ঘটনা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পৌঁছলে তিনি উভয় সাংসদকে শান্ত হওয়ার নির্দেশ দেন।
কিন্তু বিরোধ এখানেই থামেনি। ‘এআইটিসি এমপি ২০২৪’ নামের তৃণমূলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এই তর্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফাঁস হওয়া চ্যাটে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, “আজ আমি সেই ভদ্রলোককে অভিনন্দন জানাই, যিনি বহুগুন সম্পন্ন আন্তর্জাতিক মহিলার সুন্দর কার্যকলাপ প্রকাশ করেছেন।
বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক ৫টি যুদ্ধবিমান, যা যেকোনো যুদ্ধের দিক পরিবর্তন করতে পারে
সেদিন তাঁর একটি প্রেমিকও তাঁর পাশে দাঁড়ায়নি। যাকে তিনি বিএসএফ দিয়ে গ্রেফতার করাতে চেয়েছিলেন, সেই মূর্খ ব্যক্তি তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিল। আজ অবশ্য ৩০ বছরের বিখ্যাত খেলোয়াড় আমাকে গ্রেফতার করাতে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে।” এই বার্তায় তিনি কীর্তি আজাদের প্রতি কটাক্ষ করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
কীর্তি আজাদ জবাবে বলেন, “শান্ত হও কল্যাণ। তুমি একটু বেশি পান করেছ। কিশোরের মতো দুষ্টুমি করো না। দিদি তোমাকে আমাদের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছেন। আরাম করো, ভালো ঘুমোও। আমার তোমার সঙ্গে কোনও বিরোধ নেই। আমি বয়সে তোমার থেকে ছোট হলেও রাজনীতিতে নয়, তাই বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে চলো।”
On 4th April 2024, two TMC MPs had a public spat at the headquarters of the Election Commission of India, where they had gone to submit a representation. It appears the party had instructed its MPs to gather at the Parliament office to sign the memorandum before proceeding to the… pic.twitter.com/BwqQRE8FhI
— Amit Malviya (@amitmalviya) April 7, 2025
তৃণমূলের বিব্রতকর অবস্থা
এই ঘটনা তৃণমূলের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে, বিশেষ করে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির সময়। দলের অভ্যন্তরীণ কলহ প্রকাশ্যে আসায় বিজেপি এটিকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। অমিত মালব্য এক্স-এ লিখেছেন, “তৃণমূলের সাংসদদের মধ্যে এই কোন্দল দলের অস্থিরতা প্রকাশ করে। আর এর মাঝে প্রশ্ন থেকে যায়—কে এই ‘বহুগুন সম্পন্ন আন্তর্জাতিক মহিলা’?”
সৌগত রায়ের প্রতিক্রিয়া থেকে স্পষ্ট যে, তৃণমূল এই ঘটনাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। তিনি বলেন, “এই ধরনের ঘটনা দলের শৃঙ্খলা এবং ঐক্যের উপর প্রশ্ন তুলেছে। দিদির উচিত এই বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া।” তবে, এই ‘বহুগুন সম্পন্ন আন্তর্জাতিক মহিলা’ কে, তা নিয়ে দলের পক্ষ থেকে কোনও স্পষ্ট বক্তব্য আসেনি, যা জল্পনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
রাজনৈতিক প্রভাব
বিজেপি এই ফাঁসকে তৃণমূলের দুর্বলতা হিসেবে তুলে ধরে দলের শৃঙ্খলাহীনতার অভিযোগ তুলেছে। মালবিয়া দাবি করেছেন, “এই ঘটনা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার প্রমাণ।” অন্যদিকে, তৃণমূলের নেতারা এটিকে বিজেপির ‘নোংরা রাজনীতি’ বলে সমালোচনা করেছেন।
২০২৬-এর নির্বাচনের আগে তৃণমূলের জন্য এই ঘটনা একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলের ঐক্য এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী পদক্ষেপ নেন, সেদিকে সবার নজর রয়েছে। এই কলহ কীভাবে দলের ভবিষ্যৎ কৌশলকে প্রভাবিত করবে, তা সময়ই বলবে।