কেন্দ্রীয় সরকার সোমবার, ৮ এপ্রিল ২০২৫ থেকে পেট্রোল ও ডিজেলের উপর প্রতি লিটারে ২ টাকা করে এক্সাইজ ডিউটি (Excise Duty) বাড়িয়েছে। তবে, পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রণালয় (MoPNG) ভারতীয় গ্রাহকদের আশ্বস্ত করেছে যে এই মূল্য বৃদ্ধি তাদের উপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। সরকার এক্সাইজ ডিউটি বাড়ালেও, গ্যাস স্টেশনে পেট্রোল ও ডিজেলের খুচরা দাম এখনই বাড়বে না। ফলে সাধারণ মানুষের জন্য গাড়ির জ্বালানি ভরার খরচে তাৎক্ষণিক কোনো আর্থিক চাপ পড়বে না। এছাড়াও, ঘরোয়া এলপিজি সিলিন্ডারের দাম প্রতি সিলিন্ডারে ৫০ টাকা বাড়ানো হয়েছে, যা সাধারণ এবং ভর্তুকিপ্রাপ্ত গ্রাহকদের জন্য প্রযোজ্য।
পেট্রোল ও ডিজেলের এক্সাইজ ডিউটি বৃদ্ধি
পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রণালয় তার অফিসিয়াল এক্স (টুইটার) হ্যান্ডেলে জানিয়েছে, “সাম্প্রতিক এক্সাইজ ডিউটি বৃদ্ধি সত্ত্বেও, পাবলিক সেক্টর অয়েল মার্কেটিং কোম্পানিগুলি নিশ্চিত করেছে যে পেট্রোল ও ডিজেলের খুচরা মূল্যে কোনো বৃদ্ধি হবে না। জ্বালানির দাম অপরিবর্তিত থাকবে।” এই ঘোষণার পর পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “আপনারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি বিজ্ঞপ্তি দেখেছেন যে পেট্রোল ও ডিজেলের উপর এক্সাইজ ডিউটি ২ টাকা বাড়ানো হচ্ছে। আমি স্পষ্ট করে বলছি, এই বৃদ্ধি গ্রাহকদের উপর চাপানো হবে না।” তিনি আরও জানান, গত তিন বছরে ভারতে জ্বালানির দাম সাধারণভাবে কমেছে এবং বিশ্বব্যাপী তেল সংকটের মধ্যেও সরকার এটি সুচারুভাবে পরিচালনা করেছে।
রাজ্যসভায় কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিং সুরজেওয়ালার এক প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুরেশ গোপী লিখিতভাবে জানিয়েছেন, “ভারত বিশ্বের একমাত্র বড় অর্থনীতির দেশ, যেখানে গত তিন বছরে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম কমেছে।”
২০২১-২০২৪: ভারত বনাম প্রতিবেশী দেশগুলিতে জ্বালানির দামের পরিবর্তন
নভেম্বর ২০২১ থেকে ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত ভারত ও তার প্রতিবেশী দেশগুলিতে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, তার একটি তুলনা নীচে দেওয়া হল। এই তথ্য জ্বালানির দামের প্রবণতায় উল্লেখযোগ্য পার্থক্য তুলে ধরে।
ভারত: পেট্রোল ও ডিজেলের দাম কমেছে
ভারতে এই সময়ের মধ্যে পেট্রোলের দাম ১৩.৬০% কমেছে। গ্রাহকরা এখন আগের তুলনায় কম দামে পেট্রোল কিনতে পারছেন। ডিজেলের দামও ১০.৯২% কমেছে, যা গাড়ির জ্বালানির খরচ কমার ইঙ্গিত দেয়।
পাকিস্তান: পেট্রোলের দাম ২৭.৯০% এবং ডিজেল ৩৩.৩৭% বৃদ্ধি
পাকিস্তানে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত। এই সময়ে পেট্রোলের দাম ২৭.৯০% বেড়েছে। পাকিস্তানি নাগরিকদের এখন গাড়ির জ্বালানির জন্য বেশি খরচ করতে হচ্ছে। ডিজেলের দাম আরও বেশি, ৩৩.৩৭% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দৈনন্দিন খরচের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
বাংলাদেশ: পেট্রোলের দাম ১২.৬২% এবং ডিজেল ২৯.৩১% বৃদ্ধি
বাংলাদেশেও জ্বালানির দাম বেড়েছে। পেট্রোলের দাম ১২.৬২% এবং ডিজেলের দাম ২৯.৩১% বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের মানুষের জন্য জ্বালানি ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে, এবং পরিবহন খরচ বাড়তে পারে।
শ্রীলঙ্কা: পেট্রোল ৫৪.২৯% এবং ডিজেল ৯৮.৫৯% বৃদ্ধি
শ্রীলঙ্কায় জ্বালানির দামে সবচেয়ে বড় বৃদ্ধি ঘটেছে। পেট্রোলের দাম ৫৪.২৯% এবং ডিজেলের দাম ৯৮.৫৯% বেড়েছে। এই ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি শ্রীলঙ্কায় জীবনযাত্রার খরচে বড় প্রভাব ফেলতে পারে, যা পরিবহন ও পণ্যের দাম বাড়িয়ে তুলবে।
নেপাল: পেট্রোল ২০.০৬% এবং ডিজেল ৩১.৬৪% বৃদ্ধি
নেপালে পেট্রোলের দাম ২০.০৬% এবং ডিজেলের দাম ৩১.৬৪% বেড়েছে। এই বৃদ্ধি দেশটির জনগণের জন্য জ্বালানি ব্যয় বাড়িয়েছে।
এক্সাইজ ডিউটি কী?
এক্সাইজ ডিউটি হল জ্বালানির উপর আরোপিত একটি কর। কেন্দ্রীয় সরকার এককালীন রাজস্ব সংগ্রহের জন্য জ্বালানি ও ডিজেল কোম্পানিগুলির উপর এই কর আরোপ করে। বর্তমানে ভারতে পেট্রোলের উপর এক্সাইজ ডিউটি ১৩ টাকা এবং ডিজেলের উপর ১০ টাকা। ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেড জানিয়েছে, “কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক পেট্রোল ও ডিজেলে প্রতি লিটারে ২ টাকা এক্সাইজ ডিউটি বৃদ্ধি গ্রাহকদের উপর চাপানো হবে না। এটি গ্রাহকদের মূল্যবৃদ্ধি থেকে রক্ষা করবে এবং সংগৃহীত অর্থ এলপিজির কম মূল্যের জন্য ব্যবহার করা হতে পারে, যা অয়েল মার্কেটিং কোম্পানিগুলির জন্য স্বস্তি আনবে।”
এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ৫০ টাকা বৃদ্ধি
পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি সোমবার ঘোষণা করেছেন যে ঘরোয়া এলপিজি বা রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারের দাম প্রতি সিলিন্ডারে ৫০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এই বৃদ্ধি সাধারণ বিভাগের গ্রাহক এবং ভর্তুকিপ্রাপ্ত গ্রাহক উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। ফলে রান্নার গ্যাসের খরচ এখন বেশি হবে, যা পরিবারের বাজেটে প্রভাব ফেলতে পারে।
ভারতের জ্বালানি নীতির সাফল্য
মন্ত্রী পুরি জানিয়েছেন, গত তিন বছরে ভারতে জ্বালানির দাম কমেছে, যা বিশ্বের অন্যান্য বড় অর্থনীতির দেশগুলির তুলনায় একটি বিরল ঘটনা। তিনি বলেন, “বিশ্বব্যাপী তেল সংকটের মধ্যেও আমরা সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দিতে পেরেছি।” এই সময়ে প্রতিবেশী দেশগুলিতে জ্বালানির দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে, যেখানে ভারত দাম কমিয়ে গ্রাহকদের স্বস্তি দিয়েছে।
৮ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়া এক্সাইজ ডিউটি বৃদ্ধি সত্ত্বেও ভারতীয় গ্রাহকদের জন্য পেট্রোল ও ডিজেলের দাম অপরিবর্তিত থাকবে। তবে, এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বৃদ্ধি গৃহস্থালির খরচে কিছুটা চাপ সৃষ্টি করতে পারে। ২০২১-২০২৪ সময়ে ভারতের জ্বালানির দাম কমলেও, প্রতিবেশী দেশগুলিতে এটি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এই পরিস্থিতি ভারতের জ্বালানি নীতির সাফল্য এবং সাধারণ মানুষের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা প্রকাশ করে।