ফুটবল ফেডারেশনের এক্সিকিউটিভ কমিটির বৈঠকে গৃহীত সেরা পাঁচ সিদ্ধান্ত

অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (AIFF)-এর এক্সিকিউটিভ কমিটি গত সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে ফুটবল হাউসে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক আয়োজন করে। এই বৈঠকে ফুটবল স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট…

Top 5 Key Decisions from AIFF Executive Committee Meeting on April 7, 2025

অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (AIFF)-এর এক্সিকিউটিভ কমিটি গত সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে ফুটবল হাউসে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক আয়োজন করে। এই বৈঠকে ফুটবল স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড (এফএসডিএল)-এর দেওয়া মাস্টার রাইটস এগ্রিমেন্ট (এমআরএ) প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এআইএফএফ-এর প্রেসিডেন্ট শ্রী কল্যাণ চৌবে এই বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মি. এন এ হারিস, ট্রেজারার মি. কিপা অজয়, ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল মি. সত্যনারায়ণ এম, সঙ্গে কমিটির সদস্যরা—মি. আরিফ আলি, মি. জি পি পালগুনা, মি. লালঙিংলোভা হমার, মি. মেনলা এথেনপা, মি. মোহন লাল, মি. নেইবো সেকহোসে, মি. সৈয়দ হুসনাইন নকভি, মি. সৈয়দ ইমতিয়াজ হুসেন, মিস. ভালঙ্কা আলেমাও, মি. বিজয় বালি, মিস. থোঙ্গম তবাবি দেবী, মিস. পিঙ্কি বোমপাল মাগার, মি. শাব্বির আলি, মি. ভাইচুং ভুটিয়া এবং মি. ক্লাইম্যাক্স লরেন্স। এই বৈঠকে ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ গড়তে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। নীচে শীর্ষ পাঁচটি সিদ্ধান্তের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হল।

১. এমআরএ আলোচনার জন্য আট সদস্যের টাস্ক ফোর্স গঠন
বৈঠকে এমআরএ প্রস্তাব নিয়ে গভীর আলোচনা হয়। এফএসডিএল-এর সঙ্গে এই চুক্তির বিষয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনার জন্য একটি আট সদস্যের টাস্ক ফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই টাস্ক ফোর্সে থাকবেন এআইএফএফ প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট, ট্রেজারার, সেক্রেটারি জেনারেল, ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল, ফিনান্স কমিটির চেয়ারপার্সন ও ডেপুটি চেয়ারপার্সন এবং লিগ কমিটির চেয়ারপার্সন। এই দলটি এমআরএ-এর শর্তাবলী পরীক্ষা করে ফেডারেশনের স্বার্থে সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কাজ করবে। এই পদক্ষেপ ভারতীয় ফুটবলের বাণিজ্যিক দিককে শক্তিশালী করার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

২. উপদেষ্টা নিয়োগ ও জাতীয় দলের জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা জোরদার
এআইএফএফ প্রেসিডেন্ট শ্রী কল্যাণ চৌবে প্রস্তাব করেন যে, সম্প্রতি দ্রোণাচার্য পুরস্কারে সম্মানিত দুই প্রখ্যাত কোচ—মি. বিমল ঘোষ এবং মি. আরমান্ডো কোলাকো—কে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করা হোক। এই দুই কোচ টেকনিক্যাল ডিরেক্টর মি. সৈয়দ সাবির পাশা, ন্যাশনাল টিমস ডিরেক্টর মি. সুব্রত পাল, টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারপার্সন মি. আই এম বিজয়ন (পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত) এবং ডেপুটি চেয়ারপার্সন মি. শাব্বির আলি (মেজর ধ্যানচাঁদ পুরস্কারপ্রাপ্ত)-এর সঙ্গে সমন্বয় করে পুরুষ ও মহিলা জাতীয় দলের প্রধান কোচদের সহায়তা করবেন। তারা প্রশিক্ষণ শিবিরের সময়কাল, স্কাউটিং এবং প্রকাশ ম্যাচের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কাজ করবেন। এই টাস্ক ফোর্স প্রতি ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে এআইএফএফ-এর কাছে রিপোর্ট জমা দেবে। এই সিদ্ধান্ত জাতীয় দলগুলির প্রযুক্তিগত উন্নয়নে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

৩. যোগাযোগ নির্দেশিকা প্রবর্তন এবং মুখপাত্র নিয়োগ
কমিটি এআইএফএফ-এর সমস্ত বিষয়, বিশেষ করে জাতীয় দলগুলির জন্য একটি যোগাযোগ নির্দেশিকা প্রণয়নের প্রস্তাব দেয়। এছাড়াও, ফেডারেশনের পক্ষ থেকে বিবৃতি প্রকাশের জন্য একজন মুখপাত্র নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে এআইএফএফ তার যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও সংগঠিত ও পেশাদার করতে চায়। এটি জনসাধারণের কাছে ফেডারেশনের বার্তা সঠিকভাবে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

৪. রাজ্য ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনে নরমালাইজেশন কমিটির প্রস্তাব
এক্সিকিউটিভ কমিটি প্রস্তাব করে যে, জম্মু ও কাশ্মীর ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন এবং তামিলনাড়ু ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনে নির্বাচন দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য একটি নরমালাইজেশন কমিটি গঠন করা হোক। এই কমিটি রাজ্য স্তরে ফুটবল প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করতে কাজ করবে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এআইএফএফ রাজ্য ফুটবল সংস্থাগুলির গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করছে।

Advertisements

৫. ইনস্টিটিউশনাল লিগের সম্ভাব্যতা রিপোর্টের জন্য চার সদস্যের টাস্ক ফোর্স
কমিটি একটি চার সদস্যের টাস্ক ফোর্স গঠনের প্রস্তাব দেয়, যার মধ্যে থাকবেন ডিআইজি সিআইএসএফ মি. জিতেন্দ্র রানা (আইপিএস), সেক্রেটারি, সার্ভিসেস স্পোর্টস কন্ট্রোল বোর্ড মি. বরুণ সিং, সেক্রেটারি, রেলওয়ে স্পোর্টস প্রমোশন বোর্ড মি. প্রেম চন্দ লোচাব এবং দ্রোণাচার্য পুরস্কারপ্রাপ্ত মি. বিমল ঘোষ, প্রাক্তন এয়ার ইন্ডিয়া কোচ। এই টাস্ক ফোর্স এআইএফএফ-এর পুনরুজ্জীবনের পরিকল্পনা করা ইনস্টিটিউশনাল লিগ/টুর্নামেন্টের সম্ভাব্যতা রিপোর্ট তৈরি করবে এবং ৩০ দিনের মধ্যে ফেডারেশনের কাছে জমা দেবে। এই উদ্যোগ ভারতীয় ফুটবলে প্রাতিষ্ঠানিক অংশগ্রহণ বাড়ানোর একটি পদক্ষেপ।

বৈঠকের তাৎপর্য
এই বৈঠক ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এমআরএ নিয়ে আলোচনা থেকে শুরু করে জাতীয় দলের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, রাজ্য ফুটবলের গণতান্ত্রিকীকরণ এবং ইনস্টিটিউশনাল লিগের সম্ভাবনা—এই সিদ্ধান্তগুলি এআইএফএফ-এর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ‘ভিশন ২০৪৭’-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই পদক্ষেপগুলি ভারতীয় ফুটবলকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছে।

৭ এপ্রিলের এই বৈঠক এআইএফএফ-এর প্রশাসনিক দক্ষতা এবং দূরদর্শিতার প্রমাণ দেয়। এই সিদ্ধান্তগুলি কার্যকর হলে ভারতীয় ফুটবলের বাণিজ্যিক, প্রযুক্তিগত এবং প্রতিযোগিতামূলক দিকগুলিতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হবে। ফুটবলপ্রেমীরা এখন এই পরিকল্পনার ফলাফল দেখার জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন।