কেন্দ্রীয় সরকারের একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে মহিলা অল ইন্ডিয়া সার্ভিসেস (এআইএস) অফিসার এবং পেনশনভোগীদের (Family Pension) জন্য নতুন সুযোগ এসেছে। কর্মী, জন অভিযোগ ও পেনশন মন্ত্রকের অধীনস্থ কর্মী ও প্রশিক্ষণ বিভাগ (ডিওপিটি) ২৮ মার্চ ২০২৫-এ একটি নতুন নিয়ম জারি করেছে। এই নিয়ম অনুযায়ী, মহিলা এআইএস অফিসার এবং পেনশনভোগীরা তাঁদের স্বামীর পরিবর্তে তাঁদের সন্তান বা সন্তানদের পারিবারিক পেনশনের জন্য মনোনয়ন করতে পারবেন, যদি বৈবাহিক বিবাদের কারণে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদের মামলা আদালতে চলমান থাকে।
এই নিয়মের শিরোনামে বলা হয়েছে, “মহিলা এআইএস অফিসার/পেনশনভোগীদের তাঁদের স্বামীর পরিবর্তে সন্তান/সন্তানদের পারিবারিক পেনশনের জন্য মনোনয়নের অনুমতি দেওয়া, যদি বৈবাহিক বিবাদের কারণে আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা চলছে অথবা গার্হস্থ্য হিংসা থেকে নারী সুরক্ষা আইন, যৌতুক নিষেধ আইন বা ভারতীয় দণ্ডবিধির অধীনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।”
ডিওপিটি-র আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, “যদি কোনো মহিলা সার্ভিস সদস্য বা মহিলা পেনশনভোগীর বিবাহবিচ্ছেদের মামলা আদালতে বিচারাধীন থাকে, অথবা তিনি তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসা থেকে নারী সুরক্ষা আইন, যৌতুক নিষেধ আইন বা ভারতীয় দণ্ডবিধির অধীনে মামলা দায়ের করে থাকেন, তবে তিনি তাঁর মৃত্যুর পর পারিবারিক পেনশন তাঁর যোগ্য সন্তান/সন্তানদের দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাতে পারেন, যিনি তাঁর স্বামীর থেকে অগ্রাধিকার পাবেন।” এই নিয়মটি মহিলাদের জন্য একটি বড় স্বস্তি এবং স্বাধীনতার পথ খুলে দিয়েছে।
পূর্বের নিয়মে কী ছিল?
অল ইন্ডিয়া সার্ভিসেস (ডেথ-কাম-রিটায়ারমেন্ট বেনিফিটস) রুলস, ১৯৫৮-এর ২২ নম্বর নিয়ম অনুযায়ী, যদি কোনো মৃত সার্ভিস সদস্য বা পেনশনভোগীর স্বামী বা স্ত্রী জীবিত থাকেন, তবে পারিবারিক পেনশন প্রথমে সেই স্বামী বা স্ত্রীকে দেওয়া হয়। সন্তান বা অন্য পরিবারের সদস্যরা পেনশনের জন্য তখনই যোগ্য হন, যখন স্বামী বা স্ত্রী পেনশন পাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়েন বা মারা যান। তবে এই নতুন সংশোধনী এই নিয়মে ব্যতিক্রম এনেছে। এর আগে, সরকারি কর্মচারীদের জন্য পেনশন ও পেনশনভোগী কল্যাণ বিভাগের ১ জানুয়ারি ২০২৪-এর অফিস মেমোরেন্ডামে এই ধরনের বিধান চালু করা হয়েছিল। এখন সেই বিধানগুলো পরিবর্তন সহ (mutatis mutandis) এআইএস সদস্যদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য করা হয়েছে।
নিয়মের তাৎপর্য
এই সিদ্ধান্তটি বিশেষ করে সেই মহিলা এআইএস অফিসার ও পেনশনভোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যাঁরা তাঁদের বৈবাহিক জীবনে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। বিবাহবিচ্ছেদ বা গার্হস্থ্য হিংসার মতো পরিস্থিতিতে অনেক মহিলা তাঁদের স্বামীর উপর আর্থিকভাবে নির্ভর করতে চান না। এই নিয়মের মাধ্যমে তাঁরা তাঁদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার একটি বিকল্প পথ পেয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো মহিলা অফিসারের মৃত্যু হয় এবং তাঁর বিবাহবিচ্ছেদের মামলা চলমান থাকে, তবে তিনি তাঁর সন্তানদের পেনশনের জন্য মনোনয়ন করতে পারেন, যাতে তাঁর স্বামী এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন।
আইনি ভিত্তি
এই নিয়মটি গার্হস্থ্য হিংসা থেকে নারী সুরক্ষা আইন (২০০৫), যৌতুক নিষেধ আইন (১৯৬১) এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির মতো আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই আইনগুলো নারীদের অধিকার এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রণীত হয়েছে। এই নতুন বিধান নারীর ক্ষমতায়ন এবং তাঁদের স্বাধীনতার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি সরকারের এমন একটি প্রতিশ্রুতি দেখায়, যা মহিলা কর্মীদের ব্যক্তিগত জীবনের চ্যালেঞ্জগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করতে চায়।
বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া
এই নিয়ম কার্যকর করতে হলে মহিলা এআইএস অফিসার বা পেনশনভোগীকে একটি লিখিত অনুরোধ জানাতে হবে। তাঁকে প্রমাণ দিতে হবে যে, তাঁর বিবাহবিচ্ছেদের মামলা আদালতে চলছে বা তিনি স্বামীর বিরুদ্ধে উল্লিখিত আইনের অধীনে মামলা দায়ের করেছেন। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাঁর আবেদন পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেবে। এই প্রক্রিয়াটি নিশ্চিত করবে যে, শুধুমাত্র যোগ্য এবং প্রকৃত ক্ষেত্রে এই সুবিধা প্রদান করা হবে।
সমাজে প্রভাব
এই নিয়মটি সমাজে নারীদের আর্থিক স্বাধীনতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে। এআইএস-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ক্ষেত্রে কর্মরত মহিলারা দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছেন। তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনে সংকটের সময় এই ধরনের সিদ্ধান্ত তাঁদের মানসিক ও আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রদান করবে। এটি অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর জন্যও একটি উদাহরণ হতে পারে।
সমালোচনা ও সম্ভাবনা
কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন যে, এই নিয়মের ফলে পারিবারিক সম্পর্কে আরও জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তবে বেশিরভাগ মানুষ এটিকে নারীদের জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। এই নিয়মের সফল বাস্তবায়ন নির্ভর করবে সরকারি কর্তৃপক্ষের সচেতনতা এবং সঠিক প্রয়োগের উপর।
মহিলা এআইএস অফিসার ও পেনশনভোগীদের জন্য এই নতুন বিধান তাঁদের জীবনে একটি নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। এটি তাঁদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার পাশাপাশি বৈবাহিক বিবাদের সময় স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা প্রদান করবে। আগামী দিনে এই নিয়ম কীভাবে কার্যকর হয় এবং কতটা মহিলা এর সুবিধা নিতে পারেন, সেদিকে নজর থাকবে সকলের।