বাংলাকে ধ্বংস করছে তৃণমূল, বিস্ফোরক বাংলাপক্ষ

সম্প্রতি বাংলাপক্ষের (Bangla Pokkho) নেতা কৌশিক মাইতির এক ফেসবুক পোস্টে তীব্র রাজনৈতিক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। রবিবারের সেই পোস্টে তিনি সরাসরি অভিযোগ করেন, “তৃণমূলের অধিকাংশ নেতা-…

koushik maity bangla pokkho

সম্প্রতি বাংলাপক্ষের (Bangla Pokkho) নেতা কৌশিক মাইতির এক ফেসবুক পোস্টে তীব্র রাজনৈতিক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। রবিবারের সেই পোস্টে তিনি সরাসরি অভিযোগ করেন, “তৃণমূলের অধিকাংশ নেতা- কর্মী আসলে সার্কাস কর্মী। তৃণমূল ভোটে জিতছে, কিন্তু বাংলার সব কিছুকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।” কৌশিক মাইতির এই মন্তব্যের পর থেকে রাজনৈতিক মহলে উত্তাল হয়ে উঠেছে তৃণমূল-বিরোধিতার এই নতুন অধ্যায়।

এই পোস্টের কমেন্ট সেকশনে অনেকেই নিজেদের ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। স্বপন বিশ্বাস মন্তব্য করেছেন, “বাংলাকে শেষ করবে এই সরকার। খালি বলে, এখানে সবাই থাকবে। দেখা যাচ্ছে বাঙালিরা আর থাকতে পারবে কিনা এই বাংলায়। এখন প্রশ্ন চিহ্ন দেখা দিয়েছে।” হরগতি চক্রবর্তী লেখেন, “সব বেচে কুচে খেয়ে ফেলছে। এরা নিজেদের সাত পুরুষের ভবিষ‍্যৎ নিশ্চিত করতে গিয়ে বাংলা ও বাঙালির সর্বনাশ করে চলে যাবে।” বিকাশ দত্তের মত, “পার্মানেন্ট ড্যামেজ করে দিয়ে চলে যাচ্ছে বাংলার আর বাঙালির।” আরও একজন মন্তব্য করেছেন, “আমরা বিজেপিকে দোষ দিই। কিন্তু বঙ্গে বহিরাগত বেড়েছে এই জমানায়।” এমনকি অনেকে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গঠনের পরামর্শও দিয়েছেন।

   

তবে এই সমালোচনার আশ্চর্য দিক হলো, বাংলাপক্ষ বরাবরই তৃণমূলপন্থী বলেই পরিচিত। বাংলাপক্ষের প্রধান গর্গ চট্টোপাধ্যায় নিজেকে তৃণমূলের সমর্থক বলে দাবি করেন এবং ‘জয় বাংলা’ স্লোগানেও বিশ্বাসী। আগে কখনও কখনও ইস্যুভিত্তিক সমালোচনা করলেও, তা অত্যন্ত সংযত ও ভারসাম্যপূর্ণ ছিল। ফলে এই হঠাৎ করে তৃণমূল-বিরোধী অবস্থান নিয়ে অনেকেই অবাক হয়েছেন।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই রদবদলের মূল কারণ তৃণমূলের সাম্প্রতিক রামনবমী উদযাপন। বাংলাপক্ষ সবসময় রামনবমীর নামে রাজনীতির বিরোধিতা করে এসেছে, বিশেষত বিজেপির সাম্প্রদায়িক প্রচারের বিরুদ্ধে। কিন্তু এ বছর দেখা গেছে, তৃণমূলও একই কায়দায় রামনবমীর মিছিলে অংশ নিচ্ছে। আর তাতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছে বাংলাপক্ষ।

রবিবার বীরভূমে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল রামনবমীর মিছিলে হাঁটেন এবং রামের নামে জয়ধ্বনি দেন। একইভাবে কলকাতার ঠনঠনিয়া কালীবাড়ির সামনে গেরুয়া মিছিলে অংশ নেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ, গোলাপি পাগড়ি ও ওড়না পরে। হাওড়ার সালকিয়ায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মিছিলে পা মেলান তৃণমূল বিধায়ক গৌতম চৌধুরী। বরানগরের রামনবমীর শোভাযাত্রায় অংশ নেন সাংসদ সৌগত রায় ও বিধায়ক সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিলিগুড়িতে মেয়র গৌতম দেব রামের পুজো দিয়ে দিন শুরু করেন। এছাড়াও শ্রীরামপুরে সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ইসলামপুরে কানাইলাল আগরওয়ালাও অংশ নেন রামনবমীর অনুষ্ঠানে।

Advertisements

এই ঘটনাগুলি দেখে অনেকেই মনে করছেন, তৃণমূল এখন হিন্দুত্বের পথে হাঁটছে, যা বাংলাপক্ষের মতো সংগঠনের ভাবনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই মতাদর্শগত বিরোধ থেকেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে এত বড় শব্দে প্রতিবাদ করছে বাংলাপক্ষ।

বর্তমানে বাংলার রাজনীতিতে এক নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে এই ঘটনা। তৃণমূলের রাজনৈতিক অবস্থান বদলের ফলে তাদের দীর্ঘদিনের সমর্থকেরাও এখন প্রশ্ন তুলছেন— আদৌ কি বাংলার রাজনীতি বাংলার নিজস্ব সংস্কৃতি ও পরিচয় রক্ষা করতে পারছে? না কি ভোটের রাজনীতির চাপে বাংলার অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে উঠছে?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে এখন গোটা রাজ্য।