ইডি’র হানায় ধরা পড়ল বেআইনি পর্ন ভিডিও রেকর্ডিং চক্র, উদ্ধার কোটি কোটি টাকা

সম্প্রতি নয়ডায় ইডি (ED Raid) একটি ব্যাপক পর্নোগ্রাফি র‌্যাকেটের সন্ধান পায়, যা ভারতের পাশাপাশি বিদেশেও ব্যাপকভাবে কাজ করছিল। এই চক্রটি চালানো হচ্ছিল এক উঠতি মডেল…

Anil Ambani Appears at ED Office for Questioning in Multiple Fraud Cases Linked to PMLA and Yes Bank Loan Scandal

সম্প্রতি নয়ডায় ইডি (ED Raid) একটি ব্যাপক পর্নোগ্রাফি র‌্যাকেটের সন্ধান পায়, যা ভারতের পাশাপাশি বিদেশেও ব্যাপকভাবে কাজ করছিল। এই চক্রটি চালানো হচ্ছিল এক উঠতি মডেল দম্পতির দ্বারা, যাদের সম্পর্কে কেউ কোনো সন্দেহও করেনি।

সাধারণত সংসারী ও নিরীহ এক দম্পতি হিসেবে পরিচিত উজ্জ্বল কিশোর ও তাঁর স্ত্রী নীলু শ্রীবাস্তব আসলে এক বিশাল অপরাধ জগতের অংশ ছিলেন। এই দম্পতি দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে এই বেআইনি ব্যবসা চালাচ্ছিলেন, যা দেশের মধ্যে শুধু নয়, বিদেশ থেকেও প্রচুর পরিমাণে ফান্ডিং পাচ্ছিল।

   

ইডি কর্তৃক তাদের বাড়িতে হানা দেওয়ার পর উঠে আসে একাধিক চমকপ্রদ তথ্য। ইডি তাদের বাড়ির ভেতরে ১৫.৬৬ কোটি টাকা নগদ উদ্ধার করে এবং সেখানে চলছিল একটি পর্নোগ্রাফি ভিডিও রেকর্ডিং। যে ঘরটিতে এই ভিডিও রেকর্ডিং হচ্ছিল, সেখানে পেশাদার ওয়েবক্যাম সিস্টেমও স্থাপন করা ছিল। এই সিস্টেম থেকে ভিডিও ব্রডকাস্ট করা হতো এবং সেখানে মডেলদের নগ্ন শরীরের বিভিন্ন স্তর দেখা যেত, এবং তাতে যত বেশি টাকা, তত বেশি নগ্নতা। অর্থাৎ, ওই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে একেবারে পেইড সাবস্ক্রাইবারদের জন্য এক ধরনের অশ্লীল কনটেন্ট প্রস্তুত করা হচ্ছিল।

প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, এই দম্পতি একটি সাইপ্রাসভিত্তিক কোম্পানি থেকে টাকা পেত। ওই কোম্পানি (ED Raid)  মূলত পর্নোগ্রাফির জগতের জন্য পরিচিত ছিল। আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন ও মার্কেট রিসার্চের নামে তারা এই টাকা পাঠাত এবং ভুয়ো নথিপত্র তৈরি করে বিদেশে টাকা ট্রান্সফার করা হত। দম্পতির কাজে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা ছিল, যার মধ্যে ছিল মডেলদের আকর্ষণ করা, তাদের পারিশ্রমিকের জন্য মোটা টাকার প্রস্তাব দেওয়া এবং তাদের ফাঁদে ফেলা।

এই চক্রের মূল লক্ষ্য ছিল দিল্লি-এনসিআর অঞ্চলের উঠতি মডেলদের ফাঁদে ফেলা। সেসব মডেলদের অডিশনের নাম করে ডাকা হত, এবং পরে তাদের পর্নোগ্রাফি ভিডিও রেকর্ডিংয়ের প্রস্তাব দেওয়া হত। মডেলদের বলা হত, তাদের মাসে ১-২ লক্ষ টাকা পারিশ্রমিক দেওয়া হবে, যাতে তারা কাজ করতে রাজি হয়। ফেসবুকের মাধ্যমে এসব মডেলদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করা হত এবং তাদের এই অপরাধমূলক কাজে নিযুক্ত করা হত।

Advertisements

তদন্তে আরও জানা যায়, এই দম্পতি পূর্বে রাশিয়ায় বসবাস করত এবং সেখানে সেখানকার একই ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম চালাচ্ছিল। ভারতে ফিরে আসার পর তারা নতুন করে এই ব্যবসা শুরু করেন। অর্থের লেনদেনের ক্ষেত্রে ৭৫-২৫ শতাংশের শেয়ার সিস্টেম ছিল। অর্থাৎ, ৭৫ শতাংশ টাকা তারা নিজেদের কাছে রাখত, বাকি ২৫ শতাংশ টাকাই দিত মডেলদের। এছাড়া, তাদের একটি অ্যাকাউন্টও নেদারল্যান্ডে পাওয়া গেছে, যেখানে ৭ কোটি টাকা ট্রান্সফার করা হয়েছিল।

এই ঘটনায় শুধু দেশের নয়, বিদেশ থেকেও পর্নোগ্রাফি র‌্যাকেটের সঙ্গে যুক্ত থাকার সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। গোটা চক্রটি অত্যন্ত সুগঠিত এবং দেশের ভেতরও অনেক জায়গায় এর কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়েছিল। ইডির তরফে এই ঘটনায় আরও তদন্ত করা হচ্ছে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এটি একটি বড় সতর্কতা যে, আমরা যদি সামাজিক মাধ্যমগুলোকে সঠিকভাবে ব্যবহার না করি, তাহলে অনেকে এই ধরনের অপরাধমূলক কাজে নিযুক্ত হতে পারে। ফেসবুক বা অন্যান্য সামাজিক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সহজেই ফাঁদে পড়া যায়, এবং পরিণতি হতে পারে ভয়ঙ্কর। সরকারি সংস্থাগুলির মধ্যে এটি একটি উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, তারা কিভাবে দেশি-বিদেশি অপরাধীদের ধরতে এবং তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে।