এটিএম থেকে পাঁচ বছরে ২০০০ কোটি টাকার বেশি আয় করল SBI

ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক (SBI) গত পাঁচ বছরে, অর্থাৎ ২০১৯-২০ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মধ্যে, এটিএম পরিচালনার মাধ্যমে ২০৪৩ কোটি টাকার আয় করেছে। সংসদে একটি প্রশ্নের জবাবে…

SBI Earns ATM

ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক (SBI) গত পাঁচ বছরে, অর্থাৎ ২০১৯-২০ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মধ্যে, এটিএম পরিচালনার মাধ্যমে ২০৪৩ কোটি টাকার আয় করেছে। সংসদে একটি প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় সরকার এই তথ্য প্রকাশ করেছে। লোকসভার সাংসদ মালা রায়ের পক্ষ থেকে উত্থাপিত একটি প্রশ্নের উত্তরে সরকার সরকারি ব্যাঙ্কগুলির এটিএম থেকে আয় ও ক্ষতির পাঁচ বছরের হিসাব সংসদের সামনে তুলে ধরেছে। এই তথ্যে দেখা গেছে, যুপিআই (UPI) পেমেন্টের জনপ্রিয়তা বাড়লেও SBI তার বিশাল এটিএম নেটওয়ার্কের সাহায্যে এই খাতে লাভজনক অবস্থান ধরে রেখেছে। তবে, অন্যান্য সরকারি ব্যাঙ্কগুলির ক্ষেত্রে এটিএম পরিচালনা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লোকসানের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

UPI-এর প্রভাব ও SBI-র সাফল্য

ডিজিটাল পেমেন্টের যুগে UPI-এর ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। ফোনপে, গুগল পে-র মতো অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেন এখন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। এর ফলে এটিএম থেকে নগদ টাকা তোলার প্রয়োজনীয়তা অনেকটাই কমে গেছে। তবুও, SBI তার বিস্তৃত এটিএম নেটওয়ার্ক এবং গ্রাহক ব্যবহারের কারণে এই খাত থেকে আয় করতে সক্ষম হয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে SBI এটিএম থেকে ৬৫৬ কোটি টাকা আয় করেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকায় পাঁচ বছরে মোট ২০৪৩ কোটি টাকা আয়ের পরিসংখ্যানে পৌঁছেছে।

   

SBI-র এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে তার বিশাল গ্রাহকভিত্তি এবং দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ৬৫,০০০-এর বেশি এটিএম। এই নেটওয়ার্ক গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলের মানুষের কাছে এটিএম পরিষেবা পৌঁছে দিয়েছে। যদিও UPI-এর ব্যবহার বেড়েছে, তবুও অনেকে এখনও নগদ লেনদেনের জন্য এটিএমের উপর নির্ভর করে। SBI এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে লাভের ধারা অব্যাহত রেখেছে।

অন্য ব্যাঙ্কগুলির লোকসান

SBI-র বিপরীতে, অন্যান্য সরকারি ব্যাঙ্কগুলি এটিএম পরিচালনায় লোকসানের মুখোমুখি হয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, পাঁচ বছরে এই ব্যাঙ্কগুলির মোট লোকসান ৩৭৩৯ কোটি টাকা। উদাহরণস্বরূপ, ব্যাঙ্ক অফ বড়োদা ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৭০.০৬ কোটি টাকার লোকসানের সম্মুখীন হয়েছিল, যা ২০২৩-২৪ সালে বেড়ে ২১২.০৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াও ২০১৯-২০ সালে ১২৯.৮২ কোটি টাকার লোকসান করেছিল, যদিও ২০২৩-২৪ সালে এটি কিছুটা কমে ৬৬.১২ কোটি টাকায় এসেছে।

ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে লোকসানের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০১৯-২০ সালে এটি ৪১.৮৫ কোটি টাকার লোকসান করেছিল, যা ২০২৩-২৪ সালে ১৮৮.৭৫ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার অবস্থাও একই রকম। ২০১৯-২০ সালে ৬০.২৬ কোটি টাকার লোকসান থেকে ২০২৩-২৪ সালে এটি ১৯৫.৮৮ কোটি টাকায় বেড়েছে। ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ২০১৯-২০ সালে ৩.১৭ কোটি টাকা আয় করলেও, ২০২৩-২৪ সালে ২০৩.৮৭ কোটি টাকার লোকসানে পড়েছে।

পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক (PNB) এটিএম থেকে আয়ের ক্ষেত্রে SBI-র পরে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ২০১৯-২০ সালে PNB ১০২.৪০ কোটি টাকা আয় করেছিল। তবে, এই আয় গত পাঁচ বছরে ওঠানামা করেছে, এবং অন্যান্য ব্যাঙ্কের তুলনায় এটি সীমিত সাফল্য দেখিয়েছে।

কেন এই লোকসান?

বিশ্লেষকদের মতে, এটিএম থেকে লোকসানের প্রধান কারণ হলো উচ্চ রক্ষণাবেক্ষণ খরচ এবং লেনদেনের হ্রাস। UPI-এর প্রভাবে মানুষ এখন কম নগদ টাকা তুলছে, ফলে এটিএমের ব্যবহার কমে গেছে। এছাড়া, এটিএম রক্ষণাবেক্ষণ, নিরাপত্তা, এবং নগদ পূরণের খরচ অনেক ব্যাঙ্কের জন্য লাভের তুলনায় বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে। SBI-র মতো বড় ব্যাঙ্ক এই খরচ সামাল দিতে পারলেও, ছোট বা মাঝারি আকারের ব্যাঙ্কগুলি তা পারছে না।

পশ্চিমবঙ্গে SBI-র এটিএম নেটওয়ার্ক ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে রয়েছে। কলকাতা থেকে গ্রামীণ এলাকা পর্যন্ত এই ব্যাঙ্কের এটিএম মানুষের নগদ লেনদেনের চাহিদা পূরণ করে। যদিও UPI-এর ব্যবহার শহরে বেশি, গ্রামে এখনও এটিএম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, অন্যান্য ব্যাঙ্কের লোকসানের খবর রাজ্যের ব্যাঙ্কিং পরিষেবার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। যদি এটিএম পরিচালনা লোকসানের কারণ হয়ে ওঠে, তবে গ্রামীণ এলাকায় নগদ প্রাপ্তির সুবিধা কমে যেতে পারে।

সরকারি ব্যাঙ্কগুলির ভবিষ্যৎ

সরকারি তথ্যে দেখা গেছে, এটিএম থেকে আয় ও লোকসানের এই বৈষম্য ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক কৌশলের পার্থক্যকে তুলে ধরে। SBI-র মতো ব্যাঙ্ক যেখানে এটিএমকে লাভজনকভাবে পরিচালনা করছে, সেখানে অন্যরা এই খাতে বিনিয়োগ কমানোর কথা ভাবছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যাঙ্কগুলিকে এটিএমের বিকল্প হিসেবে ডিজিটাল ব্যাঙ্কিংয়ে আরও জোর দিতে হবে। UPI-এর পাশাপাশি মোবাইল ব্যাঙ্কিং এবং ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিংয়ের প্রসার গ্রাহকদের সুবিধা বাড়াতে পারে।

UPI-এর যুগে এটিএম থেকে SBI-র ২০৪৩ কোটি টাকার আয় তার ব্যবসায়িক দক্ষতার প্রমাণ। তবে, অন্যান্য সরকারি ব্যাঙ্কের ৩৭৩৯ কোটি টাকার লোকসান ব্যাঙ্কিং খাতে নতুন চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দেয়। এটিএমের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে ব্যাঙ্কগুলির কৌশল এবং গ্রাহকদের চাহিদার উপর। SBI-র সাফল্য অন্য ব্যাঙ্কগুলির জন্য একটি শিক্ষা হতে পারে, যদি তারা ডিজিটাল ও ঐতিহ্যবাহী পরিষেবার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে শেখে। এই পরিস্থিতি ভারতীয় ব্যাঙ্কিংয়ের ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।