বিশ্ব ক্রীড়ায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলতে জয় শা-ফিফা প্রধান বৈঠক

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (ICC) চেয়ারম্যান জয় শাহ (Jay Shah) গ্রিসের কোস্টা নাভারিনোতে অনুষ্ঠিত ১৪৪তম আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) সেশনের মধ্যে ফিফার প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর সঙ্গে…

Jay Shah Meets FIFA President Gianni Infantino

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (ICC) চেয়ারম্যান জয় শাহ (Jay Shah) গ্রিসের কোস্টা নাভারিনোতে অনুষ্ঠিত ১৪৪তম আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) সেশনের মধ্যে ফিফার প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। ফুটবলের বিশ্ব নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান ইনফান্তিনো এই বৈঠকের কথা সামাজিক মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে প্রকাশ করেছেন। তিনি জয় শাহের প্রশাসনিক দক্ষতার প্রশংসা করার পাশাপাশি ভারতে ক্রিকেটের প্রতি মানুষের অগাধ ভালোবাসা এবং শাহের নেতৃত্বে খেলাটির উন্নয়নের কথা উল্লেখ করেছেন।

Also Read | গোলশূন্য ফলাফলে শিলংয়ের শেষ হল ভারত-বাংলাদেশ লড়াই

   

ইনফান্তিনো তাঁর ইনস্টাগ্রাম পোস্টে লিখেছেন, “আইসিসি চেয়ারম্যান এবং একজন অসাধারণ প্রশাসক জয় শাহের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমি আনন্দিত। আমি ভারতে গিয়েছিলাম, বিশেষ করে ২০২৩ সালের আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের সময়, এবং সেখানে ক্রিকেটের প্রতি মানুষের অসাধারণ উৎসাহ আমার নজরে এসেছে। জয় শাহ এই খেলাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে অসামান্য কাজ করেছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।” এই বৈঠক ক্রীড়া জগতে দুই ভিন্ন খেলার প্রশাসনিক নেতৃত্বের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যাচ্ছে।

Advertisements

জয় শাহ, যিনি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আইসিসি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের (বিসিসিআই) সেক্রেটারি হিসেবে তাঁর কার্যকালে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে ভারত ২০২৩ সালের আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের সফল আয়োজন করেছে, যা বিশ্বব্যাপী ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে একটি মানদণ্ড হয়ে উঠেছে। এই টুর্নামেন্টে ভারতীয় দল ফাইনালে পৌঁছালেও অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে যায়। তবে, টুর্নামেন্টের সাংগঠনিক দিক এবং দর্শকদের উৎসাহ বিশ্বের প্রশংসা কুড়িয়েছে।

Also Read | ডেভিড কাতালা কে? কেরালা ব্লাস্টার্সের নতুন হেড কোচকে জানুন 

অন্যদিকে, জিয়ান্নি ইনফান্তিনো ২০১৬ সাল থেকে ফিফার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর নেতৃত্বে ফুটবল বিশ্বে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার এবং উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে, ফিফা বিশ্বকাপের আয়োজনকে আরও বিস্তৃত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক করার জন্য তিনি কাজ করে চলেছেন। ২০২২ সালে কাতারে অনুষ্ঠিত ফিফা বিশ্বকাপ তাঁর নেতৃত্বে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়।

এই সাক্ষাৎ ক্রিকেট এবং ফুটবল—বিশ্বের দুটি জনপ্রিয় খেলার মধ্যে সহযোগিতার সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করে তুলেছে। ভারতে যেখানে ক্রিকেট একটি ধর্মের মতো পালিত হয়, সেখানে ফুটবলও ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। পশ্চিমবঙ্গ, গোয়া, কেরলের মতো রাজ্যগুলিতে ফুটবলের প্রতি মানুষের ভালোবাসা দীর্ঘদিনের। এই প্রেক্ষাপটে জয় শাহ এবং ইনফান্তিনোর বৈঠক ভারতীয় ক্রীড়া জগতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

ক্রীড়া বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বৈঠকের মাধ্যমে দুই খেলার প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা এবং কৌশল আদান-প্রদানের সুযোগ তৈরি হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতে ফুটবলের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং তৃণমূল স্তরে খেলাটির প্রচারে আইসিসি এবং বিসিসিআই-এর সাংগঠনিক দক্ষতা কাজে লাগানো যেতে পারে। একইভাবে, ফিফার বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক এবং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ ক্রিকেটের প্রসারে সহায়ক হতে পারে।

পশ্চিমবঙ্গের ক্রীড়াপ্রেমীদের জন্য এই খবর বিশেষভাবে উৎসাহজনক। কলকাতা, যেখানে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের মতো ফুটবল ক্লাবগুলির সমর্থকদের উন্মাদনা বিশ্ববিখ্যাত, সেখানে এই ধরনের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ফুটবলের উন্নয়নে নতুন গতি আনতে পারে। একই সঙ্গে, ক্রিকেটের প্রতি বাঙালির ভালোবাসা অপরিসীম। এডেন গার্ডেন্সে ক্রিকেট ম্যাচের সময় যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়, তা বিশ্বের অন্যতম সেরা। তাই, জয় শাহের এই উদ্যোগ বাঙালি ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে দ্বৈত আনন্দের সংবাদ হয়ে উঠেছে।

এই বৈঠকের পরবর্তী ধাপে কী হতে পারে, তা নিয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়নি। তবে, ক্রীড়া মহলে গুঞ্জন চলছে যে ভবিষ্যতে আইসিসি এবং ফিফার মধ্যে কোনো যৌথ উদ্যোগ বা প্রকল্প দেখা যেতে পারে। এটি হতে পারে যৌথ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, প্রযুক্তি বিনিময়, অথবা এমনকি ক্রীড়া উৎসবের আয়োজন। ভারতের মতো দেশে, যেখানে ক্রীড়ার বাজার দিন দিন বড় হচ্ছে, এই ধরনের সহযোগিতা অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উভয় ক্ষেত্রেই ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

জয় শাহের প্রশাসনিক দক্ষতা শুধু ভারতেই নয়, আন্তর্জাতিক মঞ্চেও স্বীকৃতি পাচ্ছে। তিনি যখন বিসিসিআই-এর সেক্রেটারি ছিলেন, তখন আইপিএলের মতো বিশ্বের সবচেয়ে লাভজনক ক্রিকেট লিগের পরিচালনায় তাঁর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন আইসিসি চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি বিশ্ব ক্রিকেটকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন। এই প্রেক্ষাপটে ইনফান্তিনোর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ ক্রীড়া প্রশাসনে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।

শেষ পর্যন্ত, এই বৈঠক ক্রিকেট এবং ফুটবলের ভক্তদের জন্য একটি উৎসাহের বিষয়। ভারতের ক্রীড়া জগৎ যে বিশ্ব মঞ্চে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে, তা জয় শাহের মতো নেতৃত্বের মাধ্যমেই সম্ভব হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই সাক্ষাতের ফলাফল কী হয়, তা দেখার জন্য ক্রীড়াপ্রেমীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।