রাজ্যে সাড়ে চারশোর বেশি সরকারি কর্মী দুর্নীতির দায়ে গ্রেপ্তার

গুয়াহাটি, ২৪ মার্চ ২০২৫: অসমের (Assam) মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সোমবার রাজ্য বিধানসভায় জানিয়েছেন, ২০২১ সাল থেকে দুর্নীতির অভিযোগে ৪৫০-এর বেশি সরকারি কর্মচারীকে গ্রেপ্তার…

Assam Govt Arrests 450 Employees for Corruption

গুয়াহাটি, ২৪ মার্চ ২০২৫: অসমের (Assam) মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সোমবার রাজ্য বিধানসভায় জানিয়েছেন, ২০২১ সাল থেকে দুর্নীতির অভিযোগে ৪৫০-এর বেশি সরকারি কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই সময়ে তাদের কাছ থেকে প্রায় ১২ কোটি টাকা নগদ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, তার সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতি গ্রহণ করেছে এবং এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।

Also Read | পয়লা থেকে আর ১৫ বছরের পুরনো গাড়িতে পেট্রোল নয় 

   

বিধানসভায় একটি আলোচনার সময় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “২০২১ সাল থেকে আমরা দুর্নীতির অভিযোগে ২৪ জন প্রথম শ্রেণির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ৩৪৯ জন দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা এবং ৩৪৯ জন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করেছি। তাদের কাছ থেকে ২২৪.৭৪ গ্রাম সোনা এবং ১২ কোটি টাকা নগদ উদ্ধার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এদের মধ্যে ৩১ জনের বিরুদ্ধে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।” এই তথ্য দিল্লির পরিপ্রেক্ষিতে বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে, যারা প্রায়ই প্রতিবেশী রাজ্য অসমের ঘটনাবলীর প্রতি আগ্রহী।

Advertisements

দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত হাত
হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ২০২১ সালের মে মাসে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তার নেতৃত্বে রাজ্যের প্রশাসনে স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে একের পর এক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এই গ্রেপ্তার ও নগদ উদ্ধারের ঘটনা তার সরকারের দুর্নীতি নির্মূলের প্রতিশ্রুতির একটি প্রমাণ। তিনি বলেন, “আমরা প্রশাসন থেকে দুর্নীতি সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করতে বদ্ধপরিকর। এই প্রচেষ্টা ভবিষ্যতেও একই জোরে চলবে।”

এই অভিযানে শুধু নগদ টাকাই নয়, সোনার মতো মূল্যবান সম্পদও উদ্ধার হয়েছে, যা দুর্নীতির মাত্রা কতটা গভীরে প্রোথিত ছিল তা নির্দেশ করে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্থিতি প্রমাণ করে যে, এই অভিযান কোনো স্তরে ছাড় দেয়নি। অসমের এই উদ্যোগ পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাদের মধ্যেও প্রশংসিত হচ্ছে, যারা প্রায়ই রাজ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে একই ধরনের কঠোরতা দেখতে চান।

কীভাবে সম্ভব হল এই অভিযান?
অসমে দুর্নীতি দমনের জন্য গঠিত ভিজিল্যান্স অ্যান্ড অ্যান্টি-করাপশন ডিরেক্টরেট এই অভিযানে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে এবং স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় এই গ্রেপ্তারগুলো সম্ভব হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই অভিযানে জড়িত কর্মকর্তারা ঘুষ গ্রহণের সময় হাতেনাতে ধরা পড়েছেন। এছাড়া, তাদের সম্পত্তি তল্লাশি করে বিপুল পরিমাণ নগদ এবং অন্যান্য সম্পদ উদ্ধার করা হয়েছে। এই অভিযানে ৩১ জনের দোষ প্রমাণিত হওয়া এবং সাজা হওয়া নিশ্চিত করে যে, আইনি প্রক্রিয়াও দ্রুত এগোচ্ছে।

বাঙালি দৃষ্টিকোণ
পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে অসমের ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক নৈকট্যের কারণে এই খবর বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। অনেকে মনে করছেন, পশ্চিমবঙ্গেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এমন কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। একজন কলকাতার বাসিন্দা বলেন, “অসমে যদি ৪৫০ জনকে গ্রেপ্তার করে ১২ কোটি টাকা উদ্ধার করা যায়, তবে আমাদের রাজ্যেও এমন উদ্যোগ নেওয়া দরকার।” অন্যদিকে, কেউ কেউ এই অভিযানকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে সমালোচনা করেছেন, তবে হিমন্ত শর্মা এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, “এটি জনগণের স্বার্থে করা হচ্ছে, কোনো রাজনীতি এখানে নেই।”

দুর্নীতির প্রভাব ও সমাধান
দুর্নীতি যে কোনো প্রশাসনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অসমে গ্রেপ্তারকৃত এই কর্মচারীরা বিভিন্ন স্তরে কাজ করতেন, যা দেখায় যে, দুর্নীতি শুধু উচ্চপদে নয়, নিম্ন স্তরেও ছড়িয়ে আছে। এই অভিযানের মাধ্যমে সরকারি পরিষেবায় স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা জনগণের ভরসা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধু গ্রেপ্তারই যথেষ্ট নয়, প্রশাসনিক সংস্কার এবং কঠোর আইনি কাঠামোর মাধ্যমে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করতে হবে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
মুখ্যমন্ত্রী শর্মা জানিয়েছেন, দুর্নীতি দমনে এই অভিযান থেমে থাকবে না। তিনি বলেন, “আমরা প্রতিটি স্তরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব। জনগণের টাকা জনগণের কাজেই ব্যবহার হবে।” এছাড়া, তিনি ভিজিল্যান্স ডিরেক্টরেটকে আরও শক্তিশালী করার পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ করেছেন। এই প্রতিশ্রুতি অসমের জনগণের মধ্যে আশা জাগিয়েছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতির কারণে সরকারি পরিষেবায় ভুগছেন।

অসমে ৪৫০-এর বেশি সরকারি কর্মচারীর গ্রেপ্তার এবং ১২ কোটি টাকা নগদ উদ্ধার দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বার্তা। এটি শুধু অসমের জন্য নয়, বাংলা সহ অন্যান্য রাজ্যের জন্যও একটি উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে। হিমন্ত বিশ্ব শর্মার এই ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতি কতটা সফল হয়, তা আগামী দিনে প্রমাণিত হবে। তবে, এই পদক্ষেপ সরকারি ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে বলে অনেকে মনে করছেন।