ফুটবল জগতে আবারও জল্পনার ঝড় উঠেছে। স্পেনের বিখ্যাত ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের প্রাক্তন কোচ জিনেদিন জিদান (Zinedine Zidane) কি আবার সান্তিয়াগো বার্নাবেউতে ফিরছেন? সাম্প্রতিক একটি রিপোর্টে এমনই সম্ভাবনার কথা উঠে এসেছে। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ফিচাজেস-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাবি আলোনসোর বায়ার লেভারকুসেনে থাকার সিদ্ধান্তের পর রিয়াল মাদ্রিদ তাদের পরবর্তী প্রধান কোচ হিসেবে জিদানের দিকে ঝুঁকছে।
Also Read | জয়ের জন্য মাঠ ছাড়তে প্রস্তুত পর্তুগাল তারকা রোনাল্ডো
রিয়াল মাদ্রিদ গত কয়েক মাস ধরে জাবি আলোনসোর গতিবিধির ওপর নজর রেখেছিল। ক্লাবের শীর্ষ কর্তারা মনে করছিলেন, আগামী মরসুমে দলের হাল ধরার জন্য আলোনসোই হবেন সেরা পছন্দ। তবে, আলোনসো যখন অপ্রত্যাশিতভাবে বুন্দেসলিগার ক্লাব লেভারকুসেনে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তখন রিয়ালকে তাদের পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে জিদানের নাম আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে। ক্লাবের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক, খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে অভিজ্ঞতা এবং অতীতের সাফল্য তাকে এই পদের জন্য অন্যতম শক্তিশালী প্রার্থী করে তুলেছে।
জাবি আলোনসো গত কয়েক মাসে লেভারকুসেনে অসাধারণ কাজ করে ফুটবল বিশ্বে নিজের নাম ছড়িয়েছেন। তার কৌশলগত দক্ষতা এবং একটি শক্তিশালী দল গড়ে তোলার ক্ষমতা তাকে রিয়াল মাদ্রিদের জন্য আদর্শ প্রার্থী করে তুলেছিল। বাঙালি ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যেও আলোনসোর খেলার ধরন নিয়ে বেশ আগ্রহ দেখা গেছে, কারণ তার দলের আক্রমণাত্মক ও সুশৃঙ্খল ফুটবল অনেকের মন জয় করেছে। কিন্তু জার্মানিতে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি রিয়ালের পরিকল্পনায় বড় ধাক্কা দিয়েছেন। এখন ক্লাবকে অন্য বিকল্পের দিকে তাকাতে হচ্ছে, এবং সেখানেই জিদানের নাম সবচেয়ে উজ্জ্বল হয়ে উঠছে।
জিনেদিন জিদানের সঙ্গে রিয়াল মাদ্রিদের সম্পর্ক শুধু কোচ হিসেবে সীমাবদ্ধ নয়। খেলোয়াড় হিসেবেও তিনি এই ক্লাবের একজন কিংবদন্তি। কোচ হিসেবে তার প্রথম দফার কাজ ছিল অসাধারণ। তার অধীনে রিয়াল মাদ্রিদ টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছে—এমন কীর্তি ফুটবল ইতিহাসে বিরল। এছাড়া, দেশীয় লিগসহ বেশ কয়েকটি শিরোপাও তার আমলে ক্লাবের ঝুলিতে এসেছে। তার শান্ত স্বভাব, তারকা খেলোয়াড়দের সামলানোর ক্ষমতা এবং জয়ের মানসিকতা রিয়ালকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিয়েছিল। বাংলার ফুটবলপ্রেমীরা জিদানের খেলার ধরনের প্রশংসা করে থাকেন, কারণ তার দলের খেলায় শিল্প আর শক্তির এক অনন্য মিশ্রণ দেখা যেত।
জিদান গত কয়েক বছর ধরে কোচিং থেকে দূরে রয়েছেন। ২০২১ সালে রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়ার পর তিনি কোনো ক্লাব বা দলের দায়িত্ব নেননি। তবে, তার ফেরার সম্ভাবনা সবসময়ই ছিল। রিয়ালের বোর্ডের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক এবং ক্লাবের গঠন সম্পর্কে তার গভীর জ্ঞান তাকে এই পদের জন্য আদর্শ করে তোলে। বর্তমান কোচ কার্লো আনচেলত্তির অধীনে রিয়াল মাদ্রিদ ভালো ফল করলেও, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার জন্য ক্লাব নতুন কাউকে চাইছে। এই পরিস্থিতিতে জিদানের ফেরা যৌক্তিক বলে মনে হচ্ছে।
কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে রিয়াল মাদ্রিদের প্রতি ভালোবাসা কম নয়। রোনাল্ডো, বেঞ্জেমা কিংবা মদ্রিচের মতো তারকাদের খেলা দেখতে রাত জেগে থাকা বাঙালি ভক্তদের জন্য জিদানের ফেরার খবর উৎসাহের। জিদান যখন কোচ ছিলেন, তখন রিয়ালের খেলায় একটা আলাদা জাদু ছিল। তার ফিরে আসা মানে হতে পারে সেই পুরোনো দিনের ফিরে আসা। বাংলার ফুটবল মহলে এই খবর নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। অনেকে বলছেন, “জিদান ফিরলে রিয়াল আবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রাজত্ব করবে।”
রিয়াল মাদ্রিদকে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মরসুম এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোচিং পদ নিয়ে আলোচনা ত্বরান্বিত হতে পারে। এখনও কোনো চুক্তি সম্পন্ন হয়নি, তবে জিদানের ফেরার সম্ভাবনা ক্রমশ বাড়ছে। ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের সঙ্গে জিদানের সম্পর্ক ভালো, এবং এটি তার ফেরার পথ সহজ করতে পারে। তবে, জিদান নিজেও কি এই দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত? এই প্রশ্নের উত্তর সময়ই দেবে।
জিদানের প্রথম দফায় রিয়াল মাদ্রিদের সাফল্য অবিস্মরণীয়। ২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত টানা তিনটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় তার কোচিং ক্যারিয়ারের সেরা অর্জন। এছাড়া, লা লিগা শিরোপা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ট্রফিও তার আমলে এসেছে। তার দলের তারকা খেলোয়াড়দের মধ্যে সমন্বয় এবং প্রতিযোগিতায় জয়ের জন্য প্রস্তুতি ছিল অতুলনীয়। এই অভিজ্ঞতা তাকে আবারও রিয়ালের হাল ধরতে সাহায্য করতে পারে।
জিনেদিন জিদানের রিয়াল মাদ্রিদে ফেরার সম্ভাবনা ফুটবল বিশ্বে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। জাবি আলোনসোর সিদ্ধান্তে ধাক্কা খাওয়া রিয়াল এখন তাদের পুরোনো কিংবদন্তির দিকে তাকিয়ে আছে। বাঙালি ফুটবলপ্রেমীরাও এই খবরে উৎসাহিত। জিদান ফিরলে রিয়ালের খেলায় কী পরিবর্তন আসবে, তা দেখার জন্য সবাই অপেক্ষায় রয়েছে। আপাতত, সান্তিয়াগো বার্নাবেউতে জিদানের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরুর গুঞ্জনই ফুটবলপ্রেমীদের মনে রোমাঞ্চ জাগিয়ে রেখেছে।