শনিবার ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের (East Bengal) নবরূপকার দীপক (পল্টু) দাসের ২৪তম প্রয়াণ বার্ষিকী উপলক্ষে ক্লাবে একটি বিশেষ স্মরণসভা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সকালে ক্লাব তাঁবুতে দীপক দাসের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন খেলোয়াড় ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, প্রশান্ত ব্যানার্জি, বিকাশ পঞ্জি, অনিত ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক রূপক সাহা, কর্মসমিতির সদস্য দেবব্রত সরকারসহ অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
দুপুর ১টায় ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে দীপক দাসের আদর্শকে সামনে রেখে একটি গৌরবময় অনুষ্ঠান শুরু হয়। এই অনুষ্ঠানে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখা গুণীজনদের “দীপক জ্যোতি” সম্মানে ভূষিত করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে দীপক দাসের জীবন ও অবদানের উপর নির্মিত একটি ভিডিও প্রদর্শিত হয়, যা উপস্থিত সকলের মনে গভীর ছাপ ফেলে।
স্বনামধন্য সঙ্গীতশিল্পী শম্পা কুণ্ডু তাঁর মধুর কণ্ঠে গান পরিবেশন করে অনুষ্ঠানে শিল্পের ছোঁয়া যোগ করেন। তাঁকে সম্মাননা প্রদান করেন রজত গুহ। এরপর ক্লাব সভাপতি মুরারি লাল লোহিয়া তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন। তিনি দীপক দাসের ক্লাবের প্রতি অবদান এবং তাঁর আদর্শের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন।
এই অনুষ্ঠানে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের অনূর্ধ্ব-১৩ ও অনূর্ধ্ব-১৫ দলের খেলোয়াড় এবং প্রশিক্ষকদেরও সংবর্ধনা দেওয়া হয়। জোনাল রাউন্ডে বিজয়ী হয়ে তারা জাতীয় পর্যায়ে খেলতে যাচ্ছে, এবং ক্লাব তাদের উৎসাহ ও সমর্থন জানায়।
“দীপক জ্যোতি” সম্মানে ভূষিত হন বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। প্রখ্যাত ফুটবল প্রশিক্ষক রঘু নন্দীকে সম্মানিত করেন প্রাক্তন খেলোয়াড় রঞ্জিত মুখার্জি ও অলোক মুখার্জি। ক্রিকেট প্রশিক্ষক প্রণব কুমার নন্দীকে সম্মান জানান প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক সম্বরণ ব্যানার্জি ও রণদেব বসু। বরিষ্ঠ আইনজীবী অনিন্দ্য মিত্রকে সম্মানিত করেন সভাপতি মুরারি লাল লোহিয়া, সহ-সভাপতি এডভোকেট অজয় কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় ও এডভোকেট বিকাশ দত্ত।
বিশিষ্ট সমাজসেবী কমল কুমার দুগ্গারকে সম্মান জানান ফুটবল সচিব সৈকত গঙ্গোপাধ্যায় ও কর্মসমিতির সদস্য সুমন দাসগুপ্ত। মাননীয়া স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে সম্মানিত করেন সাধারণ সম্পাদক রূপক সাহা। শিল্পপতি ময়ঙ্ক জালান, যিনি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন, তাঁকে “দীপক জ্যোতি” সম্মানে ভূষিত করেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও দেবব্রত সরকার।
প্রাক্তন খেলোয়াড় বাইচুং ভুটিয়াকে সংবর্ধিত করা হয় এবং তিনি স্বনামধন্য চিকিৎসক ড. শিবাজি বসুকে সম্মান জানান সহ-সচিব ডা. শান্তিরঞ্জন দাসগুপ্তের সঙ্গে। পদ্মশ্রী সম্মানিত নৃত্যশিল্পী ও অভিনেত্রী মমতা শঙ্করকে সম্মানিত করেন সভাপতি মুরারি লাল লোহিয়া, বাইচুং ভুটিয়া ও টেনিস সচিব ইন্দ্রনীল ঘোষ। অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তীকে সম্মান জানান মুরারি লাল লোহিয়া, সহ-সভাপতি কল্যাণ মজুমদার ও বাইচুং ভুটিয়া।
ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন খেলোয়াড় ও ভারতীয় ফুটবল দলের প্রাক্তন অধিনায়ক পদ্মশ্রী আই.এম. বিজয়নকে “দীপক জ্যোতি” সম্মানে ভূষিত করেন বাইচুং ভুটিয়া। এই সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ক্লাবের প্রাক্তন খেলোয়াড়রা। বাইচুং ভুটিয়া ও আই.এম. বিজয়নকে নিয়ে একটি টক শো-এর আয়োজন করা হয়, যার সঞ্চালনা করেন ক্রীড়া সম্পাদক গৌতম ভট্টাচার্য। এই আলোচনায় ক্লাবের গৌরবময় ইতিহাস ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত সকল গুণীজনদের উপর নির্মিত ভিডিও প্রদর্শিত হয়। এছাড়া, সেরাম গ্রুপের প্রযোজনায় গৌতম ঘোষ পরিচালিত ‘শতবর্ষের ইস্টবেঙ্গল’ ডকুমেন্টারির ট্রেলার মঞ্চে দেখানো হয়। এই ছবিটি আগামী ২৫শে এপ্রিল নন্দন-১ প্রেক্ষাগৃহে সন্ধ্যা ৬টায় মুক্তি পাবে।
গত কয়েক মাসে ক্লাবের সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত চারজন প্রিয় ব্যক্তি—চন্দন সেনগুপ্ত, অলোক সাহা, অরূপ পাল ও গৌতম মিশ্র—প্রয়াত হয়েছেন। তাঁদের পরিবারের উপস্থিতিতে এক মিনিট নীরবতা পালন করে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
ক্লাবের ক্রিকেট সচিব সঞ্জীব আচার্যর বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। এই দিনটি ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সমর্থকদের জন্য শুধু স্মৃতিচারণই নয়, বরং ক্লাবের ঐতিহ্য ও দায়বদ্ধতার একটি উজ্জ্বল প্রতিফলন হয়ে থাকবে।