নাগপুর পুলিশ বুধবার স্থানীয় মাইনরিটিজ ডেমোক্রেটিক পার্টির (এমডিপি) নেতা ফাহিম শামিম খানকে গ্রেফতার করেছে। তাকে গত ১৭ মার্চ নাগপুরে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হিংসার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই হিংসায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। খানের গ্রেফতারির কয়েক ঘণ্টা আগে গণেশপেঠ থানায় দায়ের করা একটি এফআইআরে তার নাম আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এদিন সকালে পুলিশ তার ছবি প্রকাশ করে এবং একটি ভিডিও সামনে আসে, যেখানে দেখা যায় হিংসা শুরুর ঠিক আগে খান উস্কানিমূলক বক্তৃতা দিচ্ছেন। ৩৮ বছর বয়সী এই নেতা, যিনি এমডিপির শহর সভাপতি এবং যশোধরা নগরের সঞ্জয় বাগ কলোনির বাসিন্দা, তাকে ২১ মার্চ পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতে, প্রাথমিক তদন্ত এবং ভিডিও প্রমাণ থেকে জানা গেছে, খানের উস্কানিমূলক বক্তৃতা এলাকায় উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলতে সরাসরি ভূমিকা রেখেছে, যা সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটায়। ফাহিম শামিম খান ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে নাগপুর কেন্দ্র থেকে মাইনরিটিজ ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, তিনি বিজেপির শীর্ষ নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গড়করির বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, কিন্তু ৬.৫ লাখেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। নাগপুরের চিতনিস পার্ক এলাকায় গত সোমবার হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। একটি ডানপন্থী সংগঠনের প্রতিবাদের সময় একটি সম্প্রদায়ের পবিত্র গ্রন্থ অপবিত্র করার গুজব ছড়িয়ে পড়লে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রতিবাদকারীরা ছত্রপতি সম্ভাজিনগরে মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের সমাধি অপসারণের দাবি জানাচ্ছিল। পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, ভিড় পুলিশের উপর পাথর ছুঁড়তে শুরু করে। এই হিংসায় ৩৪ জন পুলিশ কর্মী আহত হন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হিংসার শুরুতে ফাহিম খানের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তিনি একটি মসজিদের কাছে ভিড় জড়ো করেন এবং সামাজিক মাধ্যমে উস্কানিমূলক পোস্টের মাধ্যমে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করেন।
পুলিশের এফআইআরে বলা হয়েছে, খান প্রায় ৫০০ লোকের একটি ভিড়কে উত্তেজিত করেন, যারা পাথর, লাঠি, কুড়ুল এবং পেট্রোল বোমা দিয়ে হামলা চালায়। এই হিংসায় গাড়ি পোড়ানো, দোকান ভাঙচুর এবং জনসম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি হয়। পুলিশ বারবার ভিড়কে ছত্রভঙ্গ করার নির্দেশ দিলেও তারা তা মানেনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কারফিউ জারি করা হয় এবং ১০টি থানা এলাকায় কঠোর নজরদারি চলছে। খানের গ্রেফতারির পর পুলিশ আরও অভিযুক্তদের শনাক্ত করতে তদন্ত জোরদার করেছে। এই ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবিস এই হিংসাকে “পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র” বলে অভিহিত করেছেন এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, “পুলিশের উপর হামলা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।” অন্যদিকে, বিরোধী দলগুলো সরকারের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনার সমালোচনা করেছে। শিবসেনা (ইউবিটি) নেতা উদ্ধব ঠাকরে বলেন, “এটি মুখ্যমন্ত্রীর নিজের শহরে ঘটেছে। দ্বৈত ইঞ্জিন সরকার যদি ব্যর্থ হয়, তবে তাদের পদত্যাগ করা উচিত।”
ফাহিম খানের রাজনৈতিক পটভূমি নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। তিনি ২০২৪ সালের নির্বাচনে নিতিন গড়করির বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মাত্র ১,০৭৩ ভোট পেয়েছিলেন। তার নির্বাচনী হলফনামায় বলা হয়েছে, তিনি দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন এবং ব্যবসায়ী হিসেবে কাজ করেন। তার বিরুদ্ধে তিনটি ফৌজদারি মামলা রয়েছে বলেও জানা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা এই হিংসায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একজন বাসিন্দা বলেন, “নাগপুরে এমন ঘটনা আগে কখনও দেখিনি। আমরা শান্তি ফিরিয়ে আনতে চাই।” পুলিশ জানিয়েছে, তারা সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানের ভিত্তিতে তদন্ত চালাচ্ছে। খানের গ্রেফতারি এই মামলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলেও, পুরো ঘটনার পেছনের কারণ এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। আগামী দিনে তদন্তের অগ্রগতি এই হিংসার পেছনের পূর্ণ চিত্র উন্মোচন করতে পারে।