পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবারও আন্তর্জাতিক মঞ্চে সম্মানের আসনে। এবার ব্রিটেনের দুটি ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এর আগে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বক্তব্য রাখার আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন, যা ইতিমধ্যেই ব্যাপক চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছিল। এখন আরও দুটি প্রখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাঁর নেতৃত্ব ও দূরদর্শিতার প্রতি সম্মান জানিয়ে তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা ও পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী, দীর্ঘদিন ধরে তাঁর সাহসী নেতৃত্ব ও জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য পরিচিত। তাঁর রাজনৈতিক জীবন ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব এবং রাজ্যের শাসন পরিচালনা পর্যন্ত বিস্তৃত। এবার ব্রিটেনের শিক্ষা জগতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তাঁর এই অবদানকে স্বীকৃতি দিয়েছে। জানা গেছে, এই আমন্ত্রণগুলোর মাধ্যমে তিনি শিক্ষার্থী ও শিক্ষাবিদদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখবেন এবং ভারতের উন্নয়ন, সামাজিক ন্যায়বিচার ও রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে আলোচনা করবেন। সূত্রের খবর, এই দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি হল লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স এবং কুইন মেরি বিশ্ব বিদ্যালয় , যা বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ও সম্মানিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই আমন্ত্রণগুলো মুখ্যমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক খ্যাতি ও তাঁর নেতৃত্বের প্রতি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতির প্রতিফলন বলে মনে করা হচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্ররা এই ঘটনাকে “দিদির জয়” হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, “এটি শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নয়, সমগ্র বাংলার গর্বের মুহূর্ত।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক যাত্রা সবসময়ই আলোচনার কেন্দ্রে থেকেছে। তিনি গত ১৪ বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং এই সময়ে রাজ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ও অবকাঠামোর ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছেন। তাঁর জনপ্রিয় প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, ও স্বাস্থ্যসাথী, যা লাখ লাখ মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এই কাজগুলোই তাঁকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে একজন দূরদর্শী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্রিটেনের এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আমন্ত্রণ পাওয়া শুধু একটি সম্মান নয়, বরং ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে শিক্ষা ও সংস্কৃতির সেতুবন্ধনের একটি সুযোগ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সুযোগে বাংলার উন্নয়ন মডেল ও ভারতের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পারেন। তাঁর বক্তৃতায় তিনি সম্ভবত জনকল্যাণ, নারী ক্ষমতায়ন, এবং পরিবেশ রক্ষার মতো বিষয়গুলোর উপর জোর দেবেন, যেগুলো তাঁর শাসনের মূল ভিত্তি।
এই আমন্ত্রণের খবরে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে লিখেছেন, “দিদি শুধু বাংলার নয়, বিশ্বের নেত্রী।” তবে বিরোধীরা এই ঘটনাকে রাজনৈতিক প্রচার হিসেবে দেখছেন। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী এর আগে মমতার অক্সফোর্ড সফর নিয়ে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, “এটা শুধুমাত্র ভোটের জন্য নাটক।” তবে তৃণমূলের পক্ষ থেকে এই সমালোচনাকে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই সফরের তারিখ এখনও চূড়ান্ত হয়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এটি সম্পন্ন হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বাংলার জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।