পটনা, ১৯ মার্চ ২০২৫: রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (RJD) সভাপতি লালু প্রসাদ যাদব (Lalu Prasad Yadav) বুধবার এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) সামনে হাজির হয়েছেন। জমির বিনিময়ে চাকরি (Bihar corruption case) দেওয়ার অভিযোগে চলমান তদন্তের জন্য কেন্দ্রীয় এই সংস্থা তাঁকে সমন জারি করেছিল। পটনার ব্যাঙ্ক রোডে ইডির আঞ্চলিক কার্যালয়ের দিকে যাওয়া রাস্তায় আরজেডির বিপুল সংখ্যক কর্মী জড়ো হয়েছিলেন। এই অসুস্থ সত্তরোর্ধ্ব নেতার প্রশংসায় স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছিল চারপাশ।
মঙ্গলবার, লালু প্রসাদের স্ত্রী রাবড়ি দেবী এবং তাঁদের বড় ছেলে তেজ প্রতাপ যাদব, যাঁরা এই মামলায় সহ-অভিযুক্ত হিসেবে নাম রয়েছে, ইডির কার্যালয়ে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। আজ, ১৯ মার্চ, লালু প্রসাদ নিজে ইডির সামনে উপস্থিত হয়ে তদন্তে সহযোগিতা করছেন। এই ঘটনা বিহারের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
জমি-চাকরি কেলেঙ্কারি: কী অভিযোগ?
জমি-চাকরি কেলেঙ্কারি মামলাটি লালু প্রসাদের ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত রেলমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ের। অভিযোগ, এই সময়ে ভারতীয় রেলে গ্রুপ-ডি পদে নিয়োগের জন্য কোনও বিজ্ঞপ্তি বা প্রকাশ্য ঘোষণা ছাড়াই বেশ কিছু ব্যক্তিকে চাকরি দেওয়া হয়েছিল। এই নিয়োগের বিনিময়ে লালু প্রসাদের পরিবারের সদস্যদের নামে জমি হস্তান্তর করা হয়েছিল বলে দাবি করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই এবং ইডি এই মামলায় সমান্তরালভাবে তদন্ত চালাচ্ছে। সিবিআই-এর অভিযোগ, পটনার বাসিন্দাদের মুম্বই, জব্বলপুর, কলকাতা, জয়পুর এবং হাজিপুরের মতো রেলের বিভিন্ন জোনে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, এবং তার বিনিময়ে তাঁদের জমি লালু পরিবারের কাছে স্বল্প মূল্যে বিক্রি বা উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছিল।
ইডি এই মামলায় মানি লন্ডারিং-এর দিকটি খতিয়ে দেখছে। তাদের দাবি, এই জমি হস্তান্তরের মাধ্যমে অর্জিত সম্পত্তি অপরাধের আয় হিসেবে বিবেচিত হবে। এর আগে, ২০২৪ সালে ইডি লালু প্রসাদ, রাবড়ি দেবী, তাঁদের মেয়ে মিসা ভারতী এবং হেমা যাদবের বিরুদ্ধে একটি চার্জশিট দাখিল করেছিল। এছাড়াও, তেজস্বী যাদবের দিল্লির নিউ ফ্রেন্ডস কলোনির একটি সম্পত্তির সঙ্গে এই মামলার যোগসূত্র রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
Also Read | কলকাতায় পেট্রোলের দাম গত তিনমাসে কতটা বাড়ল? জানুন বিস্তারিত
ইডির তদন্তের মুখে লালু পরিবারের সদস্যদের বারবার সমন জারি করা হয়েছে। আরজেডি এই পদক্ষেপকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে দেখছে। দলের মুখপাত্ররা দাবি করেছেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার বিরোধী দলগুলোকে দুর্বল করতে সিবিআই এবং ইডির মতো সংস্থাগুলোকে অপব্যবহার করছে। লালুর দ্বিতীয় কন্যা রোহিণী আচার্য, যিনি সিঙ্গাপুরে থাকেন এবং সম্প্রতি তাঁর বাবার জন্য কিডনি দান করেছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “যদি আমার বাবার কিছু হয়, তবে এর জন্য ইডি এবং সিবিআই দায়ী থাকবে। আমরা এই অবিচার ভুলব না।”
মঙ্গলবার রাবড়ি দেবী এবং তেজ প্রতাপের জিজ্ঞাসাবাদের সময়ও আরজেডি কর্মীরা ইডি অফিসের বাইরে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। আজ লালু প্রসাদের উপস্থিতির সময়ও একই দৃশ্য দেখা গেছে। দলের সমর্থকরা তাঁদের নেতার প্রতি অটুট সমর্থন প্রকাশ করেছেন।
ইডি এবং সিবিআই এই মামলায় একাধিক অভিযান চালিয়েছে। ২০২৩ সালে লালু পরিবারের সঙ্গে যুক্ত একাধিক জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে পটনা, দিল্লি, রাঁচি এবং মুম্বই। গত বছর ইডি প্রায় ৬ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছিল। এছাড়াও, লালু পরিবারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী অমিত কাটিয়ালকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তদন্তকারীরা দাবি করেছেন, এই কেলেঙ্কারিতে শেল কোম্পানির মাধ্যমে অর্থ পাচার করা হয়েছে।
বিহারে এই মামলা রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার মহাগঠবন্ধন ছেড়ে বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধেছেন। এর পরেই লালু পরিবারের বিরুদ্ধে তদন্ত ত্বরান্বিত হয়েছে, যা আরজেডির অভিযোগকে আরও জোরালো করেছে। লালু প্রসাদ, যিনি ফডার কেলেঙ্কারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে বর্তমানে জামিনে রয়েছেন, তাঁর দলের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
লালু প্রসাদের ইডির সামনে হাজির হওয়া এই মামলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। তদন্ত কীভাবে এগোয় এবং এর রাজনৈতিক ফলাফল কী হয়, তা ভবিষ্যতে বিহারের রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। এখনও পর্যন্ত লালু পরিবার তদন্তে সহযোগিতা করছে বলে জানা গেছে, তবে এই কেলেঙ্কারি নিয়ে বিতর্ক থামার কোনও লক্ষণ নেই।