Legendary sports comebacks: ক্রীড়া জগৎ এক কঠিন ও নির্মম ক্ষেত্র। এখানে সাফল্য অর্জনের জন্য প্রয়োজন অসীম শৃঙ্খলা, অধ্যবসায় এবং শারীরিক ও মানসিক শক্তি। ক্রীড়াবিদদের শরীরের উপর চাপ দিন দিন বাড়তে থাকে, এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই চাপ অসহনীয় হয়ে ওঠে। তবুও, কিছু ব্যক্তি তাদের ক্ষেত্রে শীর্ষে পৌঁছে, অবসর নেন, এবং তারপর আবার ফিরে এসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পারফর্ম করেন। এমন কিছু ক্রীড়াবিদ আছেন, যাঁরা অবসরের ঘোষণা দিয়েও পুনরায় ফিরে এসে তাদের সমর্থকদের মুগ্ধ করেছেন। সম্প্রতি, ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তি সুনীল ছেত্রী আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন, কিন্তু ২০২৫ সালের মার্চে তিনি জাতীয় দলে ফিরে এসেছেন। তাঁর এই অসাধারণ প্রত্যাবর্তন ক্রীড়া জগতকে মনে করিয়ে দিয়েছে সেইসব ক্রীড়াবিদদের, যাঁরা অবসর থেকে ফিরে এসে ইতিহাস গড়েছেন। আসুন, দেখে নিই এমন
শীর্ষ ১০ ক্রীড়াবিদের কথা:
১. মার্টিনা হিঙ্গিস (টেনিস)
মার্টিনা হিঙ্গিস নারী টেনিসের এক কিংবদন্তি নাম। প্রাক্তন বিশ্ব নাম্বার ওয়ান এই তারকা ২৫টি মেজর খেতাব জিতেছেন। ২০০৩ সালে তিনি প্রথমবার অবসর নেন। কিন্তু ২০০৫ সালে ফিরে আসেন এবং আবার ২০০৭ সালে অবসর নেন। এরপর ২০১২ সালে তিনি দ্বিতীয়বার প্রত্যাবর্তন করেন এবং অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখান। অবশেষে ২০১৭ সালে তিনি চূড়ান্তভাবে টেনিসকে বিদায় জানান। হিঙ্গিসের এই প্রত্যাবর্তন নারী ক্রীড়াবিদদের জন্য এক বড় প্রেরণা।
২. সুনীল ছেত্রী (ফুটবল)
ভারতীয় ফুটবলের গর্ব সুনীল ছেত্রী আন্তর্জাতিক ফুটবলে চতুর্থ সর্বোচ্চ গোলদাতা। ৯৪টি গোল নিয়ে তিনি এশিয়ার অন্যতম সেরা ফুটবলার। ২০২৪ সালের জুন মাসে ৪০ বছর বয়সে তিনি আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। কিন্তু ২০২৫ সালের মার্চে ভারতীয় জাতীয় দলের হয়ে তিনি ফিরে আসেন, যা দেশবাসীকে অবাক করে দিয়েছে। ব্লু টাইগার্সের এই প্রত্যাবর্তন আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের সম্ভাবনাকে আরও উজ্জ্বল করেছে।
৩. পল স্কোলস (ফুটবল)
ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার পল স্কোলস ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে একাধিক ট্রফি জিতেছেন। ২০১১ সালের মে মাসে তিনি অবসর নেন, কিন্তু পরের বছরই ফিরে আসেন। তাঁর প্রত্যাবর্তনে ম্যান ইউনাইটেড প্রিমিয়ার লিগ জয় করে। ২০১৩ সালে তিনি চূড়ান্ত অবসর নেন। স্কোলসের এই ফিরে আসা ফুটবলপ্রেমীদের জন্য এক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত।
৪. ইমরান খান (ক্রিকেট)
পাকিস্তানের কিংবদন্তি ক্রিকেটার ইমরান খান ১৯৮৭ সালে অবসর ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু ১৯৮৮ সালে তিনি ফিরে আসেন এবং ১৯৯২ সালে পাকিস্তানকে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ জিতিয়ে অবসর নেন। রাজনীতিতে প্রবেশের আগে তিনি ক্রিকেটে অসাধারণ অবদান রাখেন, যা পাকিস্তানের ক্রীড়া ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে।
৫. মাইকেল শুমাখার (ফর্মুলা ১)
ফর্মুলা ১-এর সর্বকালের সেরা চালক মাইকেল শুমাখার সাতবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন। ২০০৬ সালে তিনি অবসর নেন, কিন্তু ২০১০ সালে মার্সিডিজের হয়ে ফিরে আসেন। ২০১২ সালে তিনি দ্বিতীয়বার অবসর নেন। জার্মান এই কিংবদন্তির প্রত্যাবর্তন মোটরস্পোর্টের জগতে এক মাইলফলক।
৬. টম ব্র্যাডি (আমেরিকান ফুটবল)
আমেরিকান ফুটবলের আইকন টম ব্র্যাডি সাতটি সুপার বোল জিতেছেন। ২০২২ সালে তিনি অবসর ঘোষণা করেন, কিন্তু মাত্র ৪০ দিন পর ফিরে আসেন। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি চূড়ান্তভাবে অবসর নেন। ব্র্যাডির এই প্রত্যাবর্তন আমেরিকান ক্রীড়া জগতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
৭. লিওনেল মেসি (ফুটবল)
আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি ফুটবলার লিওনেল মেসি ২০১৫ সালের কোপা আমেরিকায় হারের পর আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পর তিনি ফিরে আসেন এবং ২০২২ সালে আর্জেন্টিনাকে ফিফা বিশ্বকাপ জিতিয়ে স্বপ্ন পূরণ করেন। মেসির প্রত্যাবর্তন ফুটবল ইতিহাসের এক স্মরণীয় অধ্যায়।
৮. মাইকেল ফেলপস (সাঁতার)
পুরুষ সাঁতারে সর্বশ্রেষ্ঠ নাম মাইকেল ফেলপস। ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকের পর তিনি অবসর নেন। কিন্তু ২০১৪ সালে ফিরে আসেন এবং ২০১৬ রিও অলিম্পিকে পাঁচটি স্বর্ণ ও একটি রুপো জিতে আরও কিংবদন্তি হয়ে ওঠেন। ফেলপসের এই প্রত্যাবর্তন অলিম্পিক ইতিহাসে অনন্য।
৯. মুহাম্মদ আলি (বক্সিং)
সর্বকালের সেরা বক্সারদের একজন মুহাম্মদ আলি তিনবার বিশ্ব হেভিওয়েট খেতাব জিতে ১৯৭৮ সালে অবসর নেন। কিন্তু দুই বছর পর ১৯৮০ সালে তিনি রিংয়ে ফিরে আসেন। ১৯৮১ সালে তিনি চূড়ান্ত অবসর নেন। আলির প্রত্যাবর্তন বক্সিং জগতে এক অমর গল্প।
১০. মাইকেল জর্ডান (বাস্কেটবল)
বাস্কেটবলের কিংবদন্তি মাইকেল জর্ডান ১৯৯৩ সালে অবসর নিয়ে বিশ্বকে হতবাক করেন। কিন্তু ১৯৯৫ সালে তিনি ফিরে আসেন এবং ছয়টি এনবিএ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে ২০০৩ সালে চূড়ান্ত অবসর নেন। জর্ডানের প্রত্যাবর্তন ক্রীড়া জগতে এক অসাধারণ নজির।
অবসর থেকে ফিরে আসা এই ক্রীড়াবিদরা শুধু তাদের দক্ষতাই প্রমাণ করেননি, বরং তাদের সমর্থকদের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। সুনীল ছেত্রীর সাম্প্রতিক প্রত্যাবর্তন আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, সত্যিকারের ক্রীড়াবিদদের জন্য বয়স বা অবসর কোনও বাধা নয়। এই কিংবদন্তিরা তাদের অসাধারণ প্রতিভা ও ইচ্ছাশক্তি দিয়ে ক্রীড়া জগৎকে সমৃদ্ধ করেছেন।