দিল্লি হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি এবং কেন্দ্রের আইন কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান জেপি শাহ সোমবার ‘এক দেশ এক ভোট’ (One nation One election) বিষয়ক বিতর্কিত বিলের প্রেক্ষিতে সংসদীয় কমিটির কাছে একটি ১২ পাতার নোট জমা দিয়েছেন। এই নোটে তিনি প্রস্তাবিত ‘এক দেশ, এক ভোট’ (One nation One election) আইনকে অসাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক নীতি এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিরুদ্ধে উল্লেখ করেছেন।
প্রসঙ্গত, বিরোধী পক্ষের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও মোদি সরকার সম্প্রতি সংসদে ‘এক দেশ এক ভোট’ বিল পেশ করেছে। তবে এই বিলকে এখনই পাশ করার পথে না হেঁটে তা পাঠানো হয়েছে সংসদের যৌথ কমিটিতে (Joint Parliamentary Committee বা JPC)। ইতিমধ্যে এই কমিটির বৈঠকে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, ডিএমকে সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলি ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি প্রণয়নের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংসদের যৌথ কমিটির বৈঠকে বিরোধী সাংসদরা কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রকের কাছে একাধিক প্রশ্ন তুলেছিলেন, যার মধ্যে কিছু প্রশ্নের উত্তর আইন মন্ত্রক দিয়েছে এবং বাকি প্রশ্নগুলি নির্বাচন কমিশনের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীমণ্ডল ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতির পক্ষে তাঁদের যুক্তি তুলে ধরেছেন। তারা বলছেন, এই নীতি গণতন্ত্রের কাঠামোকে শক্তিশালী করবে এবং দেশজুড়ে একক নির্বাচনের মাধ্যমে সময় এবং অর্থের সাশ্রয় হবে। তবে বিরোধীরা দাবি করেছেন, এই নীতি গণতন্ত্রের মূল কাঠামোকে হুমকির মুখে ফেলবে এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে ভারসাম্য বিঘ্নিত করবে।
জেপি শাহ তাঁর নোটে স্পষ্ট বলেছেন যে, ‘এক দেশ এক ভোট’ আইন অসাংবিধানিক কারণ এটি ভারতের নির্বাচন ব্যবস্থাকে এককেন্দ্রিক এবং একদলীয় হতে বাধ্য করবে। তাঁর মতে, এটি ভারতের বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পক্ষে বিপজ্জনক হবে, কারণ রাজ্যগুলির নিজস্ব ক্ষমতা এবং নির্বাচন ব্যবস্থার উপর এর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
বিরোধীরা আরো দাবি করেছেন, এই নীতি ভারতের সাংবিধানিক কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, কারণ ভারতের সংবিধান বিভিন্ন স্তরে নির্বাচনের প্রক্রিয়া এবং রাজ্যগুলির স্বাধীনতা সুরক্ষিত করে রেখেছে। এছাড়া, ন্যায্য নির্বাচনের অধিকার এবং ভোটাধিকারেও এই নীতি হস্তক্ষেপ করবে বলে মনে করেন তারা।
তবে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর এবং প্রভাবশালী করবে, এবং এটি দীর্ঘমেয়াদী নির্বাচনী স্থিরতা আনবে। এই নীতির মাধ্যমে রাজ্য, কেন্দ্র, এবং পঞ্চায়েত স্তরের নির্বাচন একসাথে করা যেতে পারে, ফলে অর্থনৈতিক ব্যয় কমবে এবং প্রশাসনিক দিক থেকেও কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাবে।
এই বিষয়টি এখন সংসদীয় কমিটির হাতে রয়েছে, এবং সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হবে। এর পরে, যদি প্রয়োজন হয়, বিলটি সংসদে পুনরায় আলোচনা এবং পাশ হতে পারে। তবে বিরোধী দলগুলি আগেভাগেই জানিয়েছেন, তারা এই বিলের বিরোধিতা করবেন এবং আইনি এবং সাংবিধানিক প্রেক্ষাপটে এটি পুনর্বিবেচনার দাবি তুলবেন।
এখনকার পরিস্থিতিতে, ‘এক দেশ এক ভোট’ বিষয়টি দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে গভীর আলোচনা ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে এবং তা আগামী দিনগুলিতে আরও তীব্র হতে পারে।