আগামী ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে ভোটার কার্ড (Voter Card) সংক্রান্ত একটি বড় আপডেট আসছে। নির্বাচন কমিশন এবং কেন্দ্রের মধ্যে মঙ্গলবার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যেখানে ভোটার তালিকা সংশোধন এবং আধার-ভোটার (Voter Card) সংযুক্তিকরণের বিষয়ে আলোচনা হবে।
বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন নির্বাচন কমিশনের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব, আধার কমিশনের সিইও, সংসদ বিষয়ক মন্ত্রকের সচিব এবং কেন্দ্রীয় আইন সচিব। নির্বাচন কমিশন তাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশব্যাপী রাজনৈতিক দলগুলির কাছ থেকে মতামত ও পরামর্শ চেয়েছে।
এদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসসহ বিরোধী দলের লাগাতার চাপের মুখে নির্বাচন কমিশন আগেই একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। কমিশন জানিয়েছে, তারা আগামী তিন মাসের মধ্যে ভোটার তালিকা সংশোধন করবে এবং প্রত্যেক ভোটারের জন্য একটি ইউনিক এপিক (EPIC) নম্বর ইস্যু করা হবে। এটি বর্তমান ভোটার কার্ডের জন্য একটি নতুন বৈশিষ্ট্য, যা ভোটারদের আরও সহজে শনাক্ত করতে সাহায্য করবে। কমিশনের এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হল ভোটার তালিকায় কোনো ধরনের বিভ্রান্তি বা অসঙ্গতি রোধ করা।
তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হল, কমিশন আধার-ভোটার সংযুক্তিকরণের পথে হাঁটতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তারা এ বিষয়ে বেশ গুরুত্ব সহকারে চিন্তা করছে এবং এই প্রক্রিয়া শীঘ্রই বাস্তবায়িত হতে পারে। তৃণমূল কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলো গত কয়েক মাসে অভিযোগ জানিয়েছিল যে, ভোটার কার্ডের (Voter Card) সঙ্গে আধার সংযুক্তির মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রে ভোটারদের তথ্যভাণ্ডার অযথা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে, বিশেষত যদি কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ভোটার কার্ডের ক্লোন তৈরি করে।
তৃণমূল কংগ্রেস তাদের মেমোরেন্ডামে এমনও দাবি করেছে যে, আধার কার্ড ক্লোন করে “ডুপ্লিকেট” ভোটার কার্ড তৈরি করা হচ্ছে। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই নির্বাচন কমিশন এবারের বৈঠকে আধার-ভোটার সংযুক্তিকরণ নিয়ে আলোচনা করবে। কমিশন জানিয়েছে, যদি ভোটার কার্ড (Voter Card) আধারের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়, তবে এই ধরনের “ডুপ্লিকেট” কার্ড (Voter Card) তৈরির বিষয়টি সহজেই ঠেকানো যাবে।
তৃণমূল কংগ্রেস এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলি এই প্রক্রিয়া নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, এবং তারা নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্রের কাছে কয়েকটি দাবি তুলেছে। তাদের মতে, আধার সংযুক্তির মাধ্যমে ভোটারদের তথ্য আরও নিরাপদ রাখতে হবে এবং এটি যেন কোনও ধরনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বা জনমত প্রভাবিত করার কাজে ব্যবহার না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, আধার-ভোটার সংযুক্তি করা হলে, দেশের ভোটারদের তথ্য সুরক্ষিত থাকবে কিনা, তা নিয়ে আরও সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা প্রয়োজন।
মঙ্গলবারের বৈঠকটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। এর ফলে, আগামী দিনের জন্য ভোটার তালিকা সংশোধন ও আধার-ভোটার সংযুক্তিকরণ প্রক্রিয়া পরিষ্কার হয়ে যাবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন এই প্রক্রিয়ায় আধার সংযুক্তি করলে, তার প্রভাব ভোটারদের উপর কীভাবে পড়বে এবং এর মাধ্যমে কি সত্যিই “ডুপ্লিকেট” ভোটার কার্ড তৈরির সমস্যা সমাধান হবে?
এছাড়া, বিরোধী দলের পক্ষ থেকে তোলা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, তাও সময়ের সাথে পরিষ্কার হয়ে যাবে। যতই সময় এগোবে, ততই এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগ ঘোষণা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ভবিষ্যতে ভোটার কার্ড এবং আধার সংযুক্তিকরণের বিষয়ে যে নতুন নিয়ম আসছে, তা দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে আরও উন্নত এবং স্বচ্ছ করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। তবে, এই প্রক্রিয়ার ফলে যে সমস্যা বা বিতর্ক তৈরি হতে পারে, তার জন্য কমিশনকে আরও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। বিরোধী দলের অভিযোগ এবং কমিশনের উদ্যোগের মধ্যে কী সমাধান বের হয়, তা আগামী কিছু দিনের বৈঠক এবং আলোচনায় নির্ধারিত হবে।